ইস্টবেঙ্গলের প্রধান অস্ত্র ডার্বির আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে প্রতিদ্বন্দ্বী কোচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! ঐতিহাসিক যৌথ সম্মেলনের দিনই ইস্ট-মোহন যুদ্ধের আরেক অভিনব আবহ!
মোহনবাগান ম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গলের তারকা বিদেশি স্ট্রাইকার জেমস মোগা এ দিন বলে দিলেন, “ওদের করিম খুব ভাল কোচ। জানে কোন ফুটবলারকে কখন, কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়। রবিবারের ম্যাচে বাগান কোচ কিন্তু বড় ফ্যাক্টর হবে।”
দক্ষিণ সুদানের স্ট্রাইকার ভারতে এর আগে স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া, পুণে এফসি-তে সাফল্যের সঙ্গে খেলেছেন। তবু ইস্টবেঙ্গলে আসার পর অন্তত এখনও মোগাকে ঘিরে ময়দানের বাড়তি আবেগ চোখে পড়েনি। তাই বোধহয় নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ হিসাবে বেছে নিয়েছেন এ দেশের সেরা ডার্বিকেই। সে দিন ওডাফা বা চিডি-র বদলে ‘মোগা মোগা’ ধ্বনি শুনতে চান গোটা যুবভারতী জুড়ে এই লাল-হলুদ ফুটবলার। “ডার্বির আবেগ নিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। তবে সবার মুখে যা শুনেছি তাতে বুঝেছি, এই ম্যাচে গোল করতে পারার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। রবিবার সেটাই করতে চাই। ইস্টবেঙ্গলকে জেতাতে চাই।”
মোহনবাগানকে মোগার গোল দেওয়া মানে একই সঙ্গে তিন পাখি মারা।
এক) এ দেশের ফুটবলে মহাতারকা খেতাব।
দুই) চিডি-ওডাফাদের পিছনে ফেলে দেওয়া।
তিন) ফুটবলের মক্কায় নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করা।
আর সেই সাফল্য পেতে তাঁর প্রিয় ফুটবলার দিদিয়ের দ্রোগবার উদাহরণ সামনে রেখে এগোচ্ছেন মোগা। “হৃদয় থেকে খেলেন দ্রোগবা। তাই অত সাফল্য পান। সে জন্যই আমি ওঁর অন্ধ ভক্ত।” নতুন ক্লাব গালাতাসারের লাল-হলুদ জার্সিতে দ্রোগবা যে ভাবে নিজের সাফল্যের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী রেখেছেন, সে ভাবেই ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ জার্সিতে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে চান মোগা। |
আর্মান্দোর ক্লাসে মোগা। শুক্রবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
গত মরসুমে পুণেতে আই লিগে মোহনবাগান-পুণে এফসি ম্যাচে মোগা আর ওডাফা জড়িয়ে পড়েছিলেন হাতাহাতিতে। তার পর থেকে দুই বিদেশি স্ট্রাইকারের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। সেই দূরত্ব ইদানীং আরও বেড়েছে। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত শপিং মল লাগোয়া যে আবাসনে সপরিবার থাকেন ওডাফা, সেখানে থাকতে রাজি হননি মোগা। আবার নতুন মরসুমে মোগাকে যখন মোহনবাগান নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, সে সময় বেঁকে বসেছিলেন ওডাফা। রবিবারের লড়াই তাই শুধুমাত্র ওডাফা বনাম চিডি নয়। অন্তর্লীন চোরাস্রোতের মতোই ওডাফার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল মোগাও।
চূড়ান্ত পেশাদার বলেই হয়তো ব্যক্তিগত অপছন্দ দূরে সরিয়ে ‘ফুটবলার ওডাফা’কে সমীহ করেন মোগা। বললেন, “ওডাফা খুব ভাল ফুটবলার কোনও সন্দেহই নেই। গোলটা খুব ভাল চেনে।” সঙ্গে হাসতে হাসতে যোগ করলেন, “পৃথিবীটা গোল। আর ফুটবলে যে কোনও সময়ে যা খুশি ঘটতে পারে। ভবিষ্যতে আমি আর ওডাফা একই দলে খেললে চমকে যাবেন না যেন!”
মাত্র দু’দিনের অনুশীলনেই নতুন কোচ আর্মান্দোয়ে মুগ্ধ চিডির সঙ্গী ফরোয়ার্ড মোগা। “নতুন কোচ আমাদের চাপমুক্ত করে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, হারা বা জেতার কথা না ভেবে নিজের আনন্দে খেলতে। পয়েন্ট নষ্ট হলে সেই দায় কোচই নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কোচ যদি এ ভাবে ফুটবলারদের পাশে থাকেন, তবে তাঁর জন্য মন থেকে নিজের সেরাটা দেওয়া যায়।” একটু থেমে এর পর যোগ করলেন, “ম্যাচ হারার পর ফুটবলারদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে কিছু কোচ সব দায় থেকে হাত ধুয়ে ফেলেন। এতে কিন্তু ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের একটা দূরত্ব তৈরি হয়।” মোগার কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিতটা ফালোপার দিকেই।
রবিবার মোহনবাগান ম্যাচ খেলেই কেনিয়ায় উড়ে যাচ্ছেন মোগা। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে। ২৮ নভেম্বর ইউনাইটেড স্পোর্টস ম্যাচের আগেই অবশ্য ফিরে আসছেন। তবে দেশের হয়ে খেলার আগে লাল-হলুদে সাফল্য এনে দিতে চান তিনি। চান প্রথম ডার্বি জয়ের স্বাদ পেতে। |