|
|
|
|
অরক্ষিত এটিএমের উপরে নজরদারি বাড়াবে পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বেঙ্গালুরুতে এটিএম কাউন্টারের ভিতরে এক মহিলার উপরে সশস্ত্র হামলা কপালে ভাঁজ ফেলেছে লালবাজারের কর্তাদের। পুলিশকর্তারা উদ্বিগ্ন বিপিন পাল রোডে বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধের খুনের ঘটনাতেও। কী করে এই ধরনের অপরাধ ভবিষ্যতে এড়ানো যায়, তার পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনারদের।
কর্নাটক সরকার ইতিমধ্যেই রক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টার অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কলকাতা বা রাজ্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, প্রশাসন তা নিশ্চিত জানাতে পারেনি। তবে, লালবাজারের কর্তারা জানান, পুলিশ এটিএম কাউন্টারগুলিতে নজরদারি বাড়াতে পারে। কিন্তু রক্ষী নিয়োগের দায়িত্ব ব্যাঙ্কেরই। নিরাপত্তার বাড়ানোর জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে অনুরোধ করা হবে বলে লালবাজারের এক কর্তা বলেন।
কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, শহরের অনেক এটিএম কাউন্টারে সিসিটিভি লাগানো নেই। অনেক কাউন্টারে নিরাপত্তা রক্ষী নেই। কলকাতা শহরের কোন কোন এলাকায় রক্ষী ও সিসিটিভি-বিহীন এটিএম কাউন্টার রয়েছে, প্রথমে তার একটি তালিকা তৈরি করা হবে। পরের ধাপে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করতে এবং সিসিটিভি লাগাতে।
লালবাজারের পুলিশ কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এটিএম যন্ত্র এবং টাকার নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত। গ্রাহকের সুরক্ষা নিয়ে তাঁদের ভাবনা অনেকটাই কম। তাই এটিএম নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার সময় এটিএম মেশিনের ভল্টে রাখা টাকার বিমা করানো রয়েছে বলে ব্যাঙ্ক-কর্তারা দাবি করেন। পুলিশ কর্তাদের আরও অভিযোগ, এটিএম কাউন্টার থেকে জালিয়াতি, চুরি, কেপমারি কিংবা ডাকাতি হলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কার্যত তার দায় নিতে চান না।
ঘটনাচক্রে, এটিএম কাউন্টারের উপরে পুলিশি নজরদারি এই প্রথম নয়। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরেই শহরের এটিএমগুলির উপরে নজরদারি চালানো হয়। কিন্তু বুধবার বেঙ্গালুরুর ওই ঘটনার পর সেই নজরদারি বাড়াতে বলেছেন লালবাজারের শীর্ষ-কর্তারা। এক পুলিশকর্তা বলছেন, “এটিএম কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী না থাকলে কী হতে পারে, বেঙ্গালুরুর ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কলকাতাতেও এমনটা হওয়া অসম্ভব নয়। সেই কারণেই এটিএম-গুলির উপরে নজরদারি বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।”
কী ভাবে নজরদারি বাড়ানো হবে? লালবাজার সূত্রের খবর, এখন বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নিয়মিত টহলদারি হয়। সেই ধরনের টহলদারি এটিএম কাউন্টারগুলিতেও করা যায় কি না থানাগুলিকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, দিনে-রাতে থানা এলাকায় মোটরসাইকেল চেপে টহলদার পুলিশকর্মীদেরও এটিএমগুলির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
এটিএম কাউন্টারের দরজা কিংবা শাটার ঠিক রয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, কলকাতায় দিনে-দুপুরে হয়তো এমন ঘটনা ঘটবে না। রাতে কিংবা ভোরের দিকেই এই ধরনের অপরাধীরা সক্রিয় থাকে। বস্তুত, বেঙ্গালুরুতেও মহিলার উপরে আক্রমণ হয়েছিল সাত-সকালে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ সব দিক ভেবে দেখে রাতে থানার টহলদার গাড়ি এবং ওয়্যারলেস ভানগুলিকে এটিএম কাউন্টারে নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেঙ্গালুরুর ঘটনা যেমন পুলিশকর্তাদের ‘সক্রিয়’ করে তুলেছে, তেমনই বুধবার ভরদুপুরে টালিগঞ্জ থানা এলাকার দেশপ্রিয় পার্কে বাড়িতে ঢুকে এক বৃদ্ধকে খুনের ঘটনাও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন লালবাজারের কর্তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি থানা এলাকায় বয়স্ক নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত, বয়স্ক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে বছর কয়েক আগেই ‘প্রণাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছিল কলকাতা পুলিশ। প্রতি থানা এলাকায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত পুলিশ। সেই প্রকল্প এখনও চলছে। তবে এ বারে কী ভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে?
লালবাজার সূত্রের খবর, প্রতিটি থানায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বয়স্ক নাগরিকদের যে থানাওয়াড়ি তালিকা রয়েছে, তা পুনরায় মিলিয়ে দেখতে। প্রয়োজনে সেই তালিকায় নতুন নাম সংযোজন করতে হবে। দরকার পড়লে, দুপুর বা রাতে তাঁদের বাড়ির সামনে টহলদারি পুলিশ পাঠানোর কথাও ভেবেছেন লালবাজারের কর্তারা। এমনকী, বয়স্কদের দেখভাল করার জন্য কেউ নিযুক্ত থাকলে তাঁর উপরেও নজরদারি করা যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে।
|
পুরনো খবর: রক্ষিহীন এটিএম অবিলম্বে বন্ধে সরকারি নির্দেশ |
এই সংক্রান্ত অন্য খবর
• এটিএম হামলায় আটক ১, পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের
|
|
|
|
|
|