টেবিলে খৈনির দাগ রেখে ধরা পড়ে গেল সাফাইকর্মী
কটি খুন। দু’টি সূত্র। কিনারা হল তার জেরেই। টেবিলের কোনায় খৈনি ও চুনের মিশ্রণ দেখে প্রথমেই পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল বাড়ির সাফাইকর্মী সোনা দাসের উপরে। কারণ, যে পরিবেশে ঘটনাটি ঘটে, সেখানে খৈনি খাওয়ার মতো একমাত্র লোক সোনাই ছিল বলে দাবি পুলিশের। আর এই সূত্র ধরেই ধরা পড়ে বিপিন পাল রোডের বাসিন্দা, বৃদ্ধ রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের খুনে মূল অভিযুক্ত। পুলিশের দাবি, জেরায় ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সোনা প্রথমে খৈনি খাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে নেয়। খুনের ঘটনায় সোনার সঙ্গী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাবাইকে (৩২) বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় টালিগঞ্জ থেকে।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা বৃহস্পতিবার জানান, পুলিশি জেরায় অপরাধ কবুল করলেও সোনা দাবি করেছে, মেজ মেয়ের চিকিৎসার দেনা মেটাতে তার তিরিশ হাজার টাকা দরকার ছিল। রঞ্জিতবাবু কিছু দিন আগে বাড়ির কেয়ারটেকার ভোলা দেবনাথকে দেড় লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন। তাতেই সোনা ভেবে নেয়, বৃদ্ধের ঘরে অনেক টাকা মিলবে। সেই লোভে সোনা ও অভিজিৎ মিলে এই পরিকল্পনা করে। যদিও বৃদ্ধের ঘর থেকে কোনও টাকাই খোয়া যায়নি। বুধবার সকালে বহুজাতিক সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রঞ্জিতবাবুকে (৮২) তাঁর বাড়িতেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ক্যানসার-আক্রান্ত ওই বৃদ্ধকে খুনের অভিযোগে ওই রাতেই সোনাকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা।
পুলিশকে প্রথমে সোনা জানায়, দুই দুষ্কৃতী তাকে ছুরি দেখিয়ে বাড়িতে ঢোকে। তার পরে হাত বেঁধে রেখে টাকা নিয়ে পালায়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দু’জন নয়, সে দিন বাড়িতে ঢুকেছিল এক দুষ্কৃতী। জেরায় সোনা পুলিশকে বলে, দুই দুষ্কৃতী তার ঘাড় নিচু করে দিয়ে হাত বাঁধে। এক পুলিশকর্তা সোনাকে জিজ্ঞাসা করেন, ঘাড় নিচু করে দেওয়ার সময়ে তার চোখ খোলা ছিল কি না। জবাবে সোনা জানায়, চোখ খোলাই ছিল। মুখ ঘোরানো ছিল দোতলার ঘরে ঢোকার দরজার দিকে। সেই দরজা কি খোলা ছিল? পুলিশকর্তার এই প্রশ্নের জবাবে সোনা জানায়, দরজা বন্ধ ছিল।
পুলিশের দাবি, এখানেই দ্বিতীয় বার মিথ্যা বলে ওই সাফাইকর্মী। কারণ, তত ক্ষণে বাড়ির পরিচারিকা সোমা ভৌমিক তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়ে দিয়েছেন, স্নান করতে যাওয়ার আগে তিনি দেখেছিলেন, দোতলার দরজা খোলা রয়েছে। সোমা পুলিশকে আগেই জানান, স্নান সেরে বেরিয়ে তিনি দেখেন, রঞ্জিতবাবু চেয়ারে ঘাড় এলিয়ে বসে। তাঁর চেয়ারের পাশে হাতে দড়ি বাঁধা অবস্থায় মাথা নিচু করে বসে সোনা। তা দেখেই তিনি প্রতিবেশীদের ডাকেন। খবর যায় পুলিশের কাছেও।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, সোনা দাসের সাজানো গল্পের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন বাড়ির কেয়ারটেকার ভোলা দেবনাথ। কী ভাবে? পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেরার মুখে সোনা অভিযোগ করছিলেন, রঞ্জিতবাবুর কাছ থেকে ধার নেওয়া দেড় লক্ষ টাকা যাতে শোধ করতে না হয়, তাই ভোলাবাবু দুই যুবককে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে বৃদ্ধকে খুন করিয়েছেন। তদন্তে জানা যায়, ভোলাবাবু সাত দিন আগে ছুটি নিয়ে সুভাষগ্রামে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। বুধবারই তাঁর রঞ্জিতবাবুর বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। সন্ধ্যায় ভোলাবাবু বিপিন পাল রোডের বাড়িতে ফিরতেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টালিগঞ্জ থানায় ডাকা হয়। সোনার অভিযোগের কথা তাঁকে জানাতেই, তিনি সোনার দিকে সরাসরি তাকান। পুলিশের দাবি, নিমেষের মধ্যে সোনা জানায়, ভোলাবাবু নন, এক সঙ্গীকে নিয়ে সেই খুন করেছে রঞ্জিতবাবুকে।
কী ভাবে খুন করা হল ওই বৃদ্ধকে?
পুলিশের দাবি, জেরায় সোনা জানায়, বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ সে রঞ্জিতবাবুর বাড়িতে ঢোকে। তার আগে বিপিন পাল রোড ও শরৎ বসু রোডের মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখে আসে নিজের সঙ্গীকে। তাকে বলে আসে, মিনিট দশেক পরে সে যেন ওই বাড়িতে ঢোকে। দরজা খুলে দেবে সোনাই। সোনা কলিংবেল বাজাতেই পরিচারিকা সোমা দোতলা থেকে তাকে দেখে সদর দরজার চাবি ফেলে দেন। দরজা খুলে আর তালা দেয়নি সোনা।
পুলিশ জানায়, দোতলায় উঠে সোনা পরিচারিকাকে স্নান করতে যেতে বলে এক ফাঁকে উপরে উঠিয়ে নেয় নিজের সঙ্গী অভিজিৎকে। তাদের দু’জনকে ঘরের আসবাবপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখে মৃদু প্রতিবাদ করেন অসুস্থ রঞ্জিতবাবু। তাতেই ঘাবড়ে গিয়ে দু’জনে মিলে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফেলে বৃদ্ধকে। সোমা স্নান সেরে বেরোনোর আগেই পালায় অভিজিৎ। গল্প বানিয়ে সেখানে বসে থাকে সোনা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সোনা দাসকে এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.