|
|
|
|
দিনেদুপুরে বাড়িতে খুন বৃদ্ধ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
চেয়ারে বসে রয়েছেন গৃহকর্তা। কোনও সাড়া শব্দ নেই। এক দিকে তাঁর ঘাড় এলানো। চেয়ারের পাশে হাত বাঁধা অবস্থায় বসে রয়েছেন বাড়ির সাফাইকর্মী। শৌচাগার থেকে বেরিয়ে এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির পরিচারিকা। তাঁর ডাকেই পাশের বাড়ির লোকেরা এসে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে জানাল, ৮২ বছরের ওই বৃদ্ধ রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়কে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। গ্রেফতার বাড়ির সাফাইকর্মী। খোঁজ চলছে তার এক সঙ্গীরও।
বুধবার সকালে এই ঘটনা দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক এলাকার। জড়িত সন্দেহে বাড়ির পরিচারিকা, সাফাইকর্মী ও এক পুরনো গাড়িচালক তিন জনকে সকালেই আটক করেছিল পুলিশ। রাতে সাফাইকর্মীকে জেরা করে ঘটনার কিনারা হয়।
পুলিশের দাবি, ওই সাফাইকর্মী স্বীকার করেছে বাড়িতে অনেক টাকা আছে ভেবেই সে এই কাজ করেছে। সঙ্গে ছিল তার পরিচিত আরও এক ব্যক্তি। যাকে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। তবে পুলিশ নিশ্চিত সে ধরা পড়বেই।
কী ভাবে ঘটল এই ঘটনা? জেরায় পুলিশ জেনেছে, সাফাইকর্মী সোনা দাস পাম্প মিস্ত্রি সাজিয়ে আরেক জনকেও বাড়িতে ঢোকায়। পরিচারিকা সোমা ভৌমিক সেই সময়ে স্নান করতে গিয়েছিলেন। সোনাদের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত কাজ হাসিল করে পালানো। কিন্তু পরিচারিকা বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ছেন দেখে সোনার সঙ্গী পালায়, আর সোনা কোনও রকমে হাত বাঁধা অবস্থায় বসে পড়ে। তবে পরিচারিকা এবং পুরনো গাড়িচালককে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত গৃহকর্তা একটি বহুজাতিক বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি গলার ক্যানসারে ভুগছিলেন। ১৭ নম্বর বিপিন পাল রোডের দোতলা বাড়িতে স্ত্রী প্রতিমাদেবীকে (৮০) নিয়ে থাকতেন ওই বৃদ্ধ। প্রতিমাদেবীও দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী। তাঁদের একমাত্র মেয়ে বিদেশে থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, রঞ্জিতবাবু ও প্রতিমাদেবী ছাড়াও ওই বাড়িতে সব সময় কাজের জন্য সোমা নামে ওই পরিচারিকা থাকতেন। এছাড়া, সোনা নামে ওই সাফাইকর্মী রোজ বেলা ১১টা নাগাদ কাজ করতে আসত। কাজ সেরে চলে যেত।
পুলিশ জানায়, উচ্চবিত্ত রঞ্জিতবাবু ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বিপিন পাল রোডে বসবাস করতেন। আত্মীয় ও কাজের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, রঞ্জিতবাবুর বাড়িতে কেউ এলে দোতলা থেকে তাঁকে দেখে ও পরিচয় জেনে তবেই সদর দরজা খোলা হত। প্রতিদিন বেলা ১০টা নাগাদ বাড়ির সবাই ঘুম থেকে উঠতেন। তার পরেই সাফাইকর্মী আসত। তাঁকে দরজা খুলে দিতেন পরিচারিকা।
এ দিনও পরিচারিকাই সাফাইকর্মীকে সদর দরজা খুলে দিয়েছিলেন কি না, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পাম্প সারানোর নাম করে দুই যুবক ঢুকেছিল নাকি এক জন, তাদের দরজাই বা খুলে দিল কে? সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরিচারিকা পুলিশকে জানান, ওই দুই যুবককে তিনি দেখেননি। রাতে পুলিশ জানায়, সোনাকে জেরা করে মনে হচ্ছে সে এক জনকেই বাড়িতে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, সম্ভবত নিজেই দরজাও খুলে দিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, সোমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এ দিন তিনি শৌচাগার থেকে বেরিয়ে দেখেন, বসার ঘরের চেয়ারে রাতের পোশাক পরে ঘাড় এলিয়ে বসে রয়েছেন রঞ্জিতবাবু। রঞ্জিতবাবুর চেয়ারের পাশেই হাত বাঁধা অবস্থায় মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন সাফাইকর্মী সোনা। সোমা ওই সাফাইকর্মীর বাঁধন না খুলেই রঞ্জিতবাবুর পাশের বাড়ির লোকজনদের ডেকে নিয়ে আসেন। তাঁরা এসে টালিগঞ্জ থানায় খবর দেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় প্রতিমাদেবী পাশের ঘরে শুয়েছিলেন। অসুস্থ ওই মহিলা কিছুই টের পাননি বলে তদন্তকারীরা জানান।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, আট দিন আগে রঞ্জিতবাবুর গাড়ির বর্তমান চালক ছুটি নিয়ে গিরিডিতে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তিনি বদলির ডিউটি করছিলেন। তাঁরও খোঁজ চলছে।
এ দিকে পাম্প সারানোর অছিলায় আসা দুই যুবকের কথা বলে তাদের চেহারার বর্ণনা দিয়েছিল সোনা। সেই অনুযায়ী পুলিশ তাদের ছবিও আঁকানোর ব্যবস্থা করে। যদিও রাতে সোনার স্বীকারোক্তির পরে ঘটনা অন্য মোড় নেয়। রঞ্জিতবাবু যে চেয়ারে বসেছিলেন, তার পাশ থেকে ছোট একটি ছুরি ও একটি দড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রঞ্জিতবাবুর দুটি মোবাইল ছাড়া আর অন্য কিছু খোওয়া যায়নি। এমনকী আলমারিও লণ্ডভণ্ড করা ছিল না। সে ক্ষেত্রে সোনা টাকার জন্য খুনের কথা বললেও অন্য কোনও কারণে ওই বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও পুলিশকে ভাবাচ্ছে।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, কিছু দিন ধরেই ওই এলাকায় প্রোমোটার চক্র সক্রিয়। বহিরাগতরা মাঝে মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাতেই অনেকের ধারনা প্রায় ৫ কাঠা জমির উপর রঞ্জিতবাবুর দোতলা বাড়িটি সহজে হস্তগত করতে কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে। |
|
|
|
|
|