|
|
|
|
ক্রেন এনে বাসের নীচ থেকে উদ্ধার
তিয়াষ মুখোপাধ্যায় |
ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে চারটে। অফিস-ফেরত যাত্রীদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন এলাকায়। হঠাত্ই একটা হই-হই রব উঠল পথচলতি ভিড়টার মধ্যে। সিগন্যাল খোলা পেয়ে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসছে একটা বাস, আর রাস্তা পেরোতে গিয়ে এক মধ্যবয়সী মহিলা ঠিক সেই বাসের মুখোমুখি!
তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে ব্রেক কষল বাস, আর বাসের একেবারে তলায় ওই মহিলা। চার পাশে সবাই ধরেই নিয়েছেন, অঘটনটা বুঝি ঘটেই গিয়েছে। কিন্তু কয়েক মুহূর্তেই বোঝা গেল, বাসের চাকার তলায় নয়, সামনের দু’টো চাকার ঠিক মাঝখানে পড়েছেন মহিলা। কিন্তু কী অবস্থায় রয়েছেন, বোঝা যাচ্ছে না তখনও।
ততক্ষণে এসে পড়েছেন দু’জন ট্রাফিক পুলিশ। ভিড় সরিয়ে শুয়ে পড়ে বাসের তলা থেকে বার করার চেষ্টা করছেন মহিলাকে। কিন্তু দু’টো চাকার মাঝখানে ওইটুকু জায়গায় এমন ভাবে আটকে গিয়েছেন তিনি যে, বার করা সহজ নয় মোটেই। তার উপরে ওই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই জ্ঞান হারিয়েছেন মহিলা। সমস্যা তাতে আরও বেড়েছে।
শেষে পুলিশের তত্পরতায় এসে পৌঁছল ক্রেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাসের সামনের দিকটা ক্রেন দিয়ে উঁচু করে তুলে সাবধানে তলা থেকে বার করে আনা হল অচেতন ওই মহিলাকে। ট্রাফিক পুলিশের সাহায্যে তখন হাত লাগাল উপস্থিত জনতাও। আর এক দল তখন ব্যস্ত বাস-ক্রেন-জনতার ভিড়ের পাশ দিয়ে রাস্তার গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে।
ইতিমধ্যে পৌঁছল অ্যাম্বুল্যান্স। ওই মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হল কাছেই এম আর বাঙুর হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিত্সার পরেই জ্ঞান ফেরে তাঁর। অল্পস্বল্প কাটা-ছেঁড়া ছাড়া তেমন কোনও আঘাত লাগেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পেশায় স্কুল-শিক্ষিকা, ঠাকুরপুকুরের আনন্দনগরের বাসিন্দা বছর সাতান্ন-র মমতা পাল বাঙুর হাসপাতালেই যাচ্ছিলেন বুধবার বিকেলে। তাঁর মেয়ে সেখানে ভর্তি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে শুভদীপও। সিগন্যাল লাল দেখেই রাস্তা পেরোচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু মমতাদেবী যখন ঠিক মাঝপথে, হঠাত্ই সবুজ হয়ে যায় সিগন্যাল। ছুটে আসে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি-বাস। তখনই ৪৭/১ রুটের বাসটির মুখে পড়ে যান তিনি।
শুভদীপবাবু জানিয়েছেন, সেই মুহূর্তে উপস্থিত মানুষ এবং পুলিশের সাহায্যেই তাড়াতাড়ি উদ্ধার করা গিয়েছে মমতাদেবীকে। প্রত্যক্ষদর্শী সুদীপ ঘটক বললেন, “আরও খারাপ কিছু হতে পারত। যে অবস্থায় পড়েছিলেন উনি, তাতে বেঁচে যাওয়াটাই অলৌকিক। ওই সময়ে পুলিশের তত্পরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেন, অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ।” |
|
|
|
|
|