মৃত্যুফাঁদ জেনেও লাইন সারাতে
ট্রাম-কর্তাদের ঢিলেমি, আসরে মন্ত্রী
রণের ফাঁদ পাতা ছিল। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন মোটরবাইক চালক গোলাম কাদের খান।
বুধবার সকাল সাড়ে দশটার জমজমাট রাস্তায় আচমকাই ছিটকে পড়েছিলেন। পথচলতি মানুষ ছুটে এসে আঁতকে ওঠেন। কারণ, রাস্তার মাঝে সটান দাঁড়িয়ে থাকা বাইকটির চাকা ফুঁড়ে পিছনের আসনের পাশ দিয়ে তখন বেরিয়ে রয়েছে ট্রামলাইনের পাত। ঘটনাস্থল: রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড। নিউ মার্কেট থানার নীলমণি হালদার লেনের বাসিন্দা কাদেরকে এনআরএসে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ট্রামলাইনের এই অংশটিতে যে এ রকম মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে, তা অবশ্য অজানা নয় সিটিসি-কর্তাদের। তাঁরা নিজেরাই মানছেন, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড-ইলিয়ট রোড, সূর্য সেন স্ট্রিট ও রাজা রামমোহন সরণির একাংশ এ রকম বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এমনকী, খোদ সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলছেন, “কংক্রিটের ট্র্যাক করা হবে বলে অনেক দিন সে ভাবে মেরামতির কোনও কাজও করা হয়নি।”
কী অবস্থায় রয়েছে সেই কাজ? ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কংক্রিটের ট্র্যাক তৈরির কাজটি করার কথা ‘হুগলি রিভারব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি)-এর। যার ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিটিসি আমাদের কাজটার কথা বলেছে। শীঘ্রই পরিবহণ দফতরে টাকা চেয়ে পাঠাব। সেটা মঞ্জুর হলে তার পরে আছে টেন্ডার-প্রক্রিয়া।”
মোটরবাইকের তলা দিয়ে এ ভাবেই তরোয়ালের ফলার
মতো ঢুকে যায় ট্রামলাইনের পাত।—নিজস্ব চিত্র।
অর্থাত্‌, কাজ শুরু হতে এখনও যে বিস্তর দেরি, তার ইঙ্গিত মিলেছে সাধনবাবুর কথাতেই। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ও তার আশপাশে বহু দিন ধরেই এমনই বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে থাকা ট্রামলাইনে পরপর দুর্ঘটনাও ঘটেছে গত কয়েক বছরে। পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে ২০০৩ সালের মে মাসে অ্যালবার্ট রোডে এক বেসরকারি সংস্থার পাতা কেব্‌ল একটি মারুতি ওমনির তলা থেকে ফুঁড়ে উঠেছিল। ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন অমিত ডালমিয়া নামে এক যুবক। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন স্কোয়ারের কাছে ট্রামলাইনের পাত একটি ট্যাক্সির তলা ফুঁড়ে উঠে যায়। কেউ হতাহত হননি। ২০১২-র ডিসেম্বরে পিস হাভ্নের কাছে একটি মোটরবাইকের চাকায় ট্রামলাইনের পাত ঢুকে একটি শিশু আহত হয়। এর পরে ফের এ দিন এই দুর্ঘটনা।
এ সবের পরেও কেন সাময়িক মেরামতির ব্যবস্থা করেনি সিটিসি? শান্তিলালবাবু বলেন, “আমরা এ রকম ট্র্যাকগুলিতে নজর রাখি। কিন্তু ওই জায়গায় যে এ রকম হতে পারে, তা আগে বোঝা যায়নি।”
এ দিনের ঘটনার পরে অবশ্য টনক নড়েছে পরিবহণমন্ত্রীর। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “আজ ভাগ্যক্রমে একটি বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। কালকের মধ্যে সিটিসি-কে রিপোর্ট দিতে বলেছি। এই ঘটনায় যাঁরাই দায়ী হোন না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মন্ত্রী জানিয়েছেন, রাতে ট্রামলাইনের ওই অংশে মেরামতির কাজ করবে ট্রাম কোম্পানি।
কী ঘটেছিল এ দিন?
নিউ মার্কেট থানার সামনে দাঁড়িয়ে কাদের জানান, তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে তালতলার কাছে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তাদের স্কুলের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই মতোই ছেলে-মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিলেন কাদের। পথেই এই ঘটনা। কাদের বলেন, “ট্রামলাইনের পাতটা সামান্য উঠে ছিল। পাশ কাটিয়ে বেরোতে গিয়ে আচমকাই চাকাটা থমকে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরবাইক থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যাই।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাদের পড়ে যেতে তাঁরা ছুটে গিয়েছিলেন। সে সময়ে এক ব্যক্তি কাদেরকে দেখে চিনতে পারেন। খবর দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। বাড়ির লোকজন এসে কাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ জানায়, সকালের এই ঘটনার পরে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, বাকি এলাকায় হলেও রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের ট্রামলাইন সারাইয়ের কাজ হয়নি অনেক দিন। সেই গাফিলতির কারণেই এ দিন সকালে এমন ঘটেছে বলে তাঁদের দাবি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.