|
|
|
|
শিল্পপতিকে প্রশ্ন, আঙুল পরাগের দিকেই
নিজস্ব সংবাদদাতা |
জমি-বাড়ির দুই কারবারিই ধরা পড়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে কে ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে হামলার মূল চক্রী, তা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ হঠাৎ বদলে গিয়েছে। সন্দেহের দোলাচলে হিমশিম খাচ্ছে লালবাজার।
তদন্তকারীরা এত দিন বলছিলেন, সম্পত্তির কারবারি পিনাকেশ দত্তই ওই হামলার মূল চক্রী। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে শিল্পপতি সঞ্জয় সুরেখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, এই ঘটনায় ধৃত আর এক সম্পত্তির কারবারি পরাগ মজমুদারই পুরো ঘটনার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
১১ নভেম্বর ভোরে বন্দুক নিয়ে ওই হামলার পর থেকেই পরাগকে সন্দেহ করে আসছিল লালবাজারের একাংশ। পিনাকেশ পুলিশের জেরার মুখে পরাগের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তবে পরাগ তা স্বীকার করেননি। কিন্তু সঞ্জয়বাবুর কথা বলে এবং তাঁর দেওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পরাগের বিরুদ্ধেই সন্দেহ গাঢ় হয়েছে তদন্তকারীদের।
কী সেই তথ্য?
পুলিশ জানায়, ২০১০ সালে শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি কেনার সময় থেকেই পরাগের সঙ্গে তাঁর পরিচয় বলে সঞ্জয়বাবু দাবি করেছেন। ওই শিল্পপতি পুলিশকে বলেছেন, মুম্বইয়ের ‘হার্টলাইন’ নামে সংস্থাটিকে তিনি চিনতেন না। পরাগের মাধ্যমেই ওই সংস্থার কাছ থেকে জমিটি কেনা হয়েছিল। দাম ঠিক হয়েছিল ২১ কোটি টাকা। জমি কেনার অগ্রিম বাবদ পরাগ তাঁর কাছ থেকে আট কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলেও তদন্তকারী অফিসারদের জানান সঞ্জয়বাবু।
তদন্তকারীরা জানান, ২০১০-এ অগ্রিম টাকা দিয়ে দু’বছর পরেও জমি হাতে পাননি সঞ্জয়বাবু। তার পরেই তিনি টাকা ফেরত চান পরাগের কাছে। ২০১২ সালের শেষের দিকে পরাগ তাঁকে দু’কোটি টাকা ফেরতও দেন। কিন্তু বাকি ছ’কোটি টাকা তিনি আর ফেরত পাননি বলেই পুলিশকে জানান সঞ্জয়বাবু। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সঞ্জয়বাবুর দাবি, তিনি সম্প্রতি ওই জমি কিনবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। বুধবার যোগাযোগ করা হলে সঞ্জয়বাবু বলেন, “ওই জমি পরাগের মাধ্যমে কিনেছিলাম। পরাগ জমি হস্তান্তর করতে না-পারায় আমি তাঁকে অগ্রিম টাকা ফেরত দিতে বলি। টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্র গোয়েন্দাদের দিয়েছি।” ওই শিল্পপতির দাবি, গত কয়েক মাসে পরাগের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।
সঞ্জয়বাবুর এই দাবি থেকেই ষড়যন্ত্রের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কী ভাবে?
তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে বিবাদ মেটাতে এবং জমিটি দ্রুত তাঁর হাতে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন পরাগ। সেই কাজেই জড়িয়ে নিয়েছিলেন পিনাকেশ-সহ আরও দুই সম্পত্তির কারবারিকে। লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, ওই জমি দখল করতে পারলে তা সঞ্জয়বাবুকে হস্তান্তর করতেন পরাগ। সঞ্জয়বাবু নিতে না-চাইলে তা অন্য কারও কাছে বিক্রি করেও ওই শিল্পপতির বকেয়া ছ’কোটি টাকা মিটিয়ে দিতে পারতেন তিনি।
পুলিশের দাবি, জমিটি দ্রুত কব্জা করার জন্য তিনি যোগাযোগ করেন পিনাকেশের সঙ্গে।
পিনাকেশকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, শর্ট স্ট্রিটের জমি দখলের জন্য তাঁকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়েছিলেন পরাগ। বাঘা যতীনের একটি ব্যাঙ্কে পিনাকেশের লকারে ৮২ লক্ষ টাকা পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই টাকা পরাগেরই দেওয়া বলে পিনাকেশ জেরায় স্বীকার করেছেন। তা হলে কি পরাগই ঘটনার মূল চক্রী?
প্রাথমিক ইঙ্গিত তেমনটাই। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও কয়েক জন সম্পত্তির কারবারি, নিরাপত্তারক্ষী সংস্থার মালিক অরূপ দেবনাথ এবং দুই আইনজীবীকে জেরা করা দরকার বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তাঁরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সঞ্জয় সুরেখার বক্তব্য ও নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফেরার ব্যক্তিদের ধরা গেলেই এই সব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
|
পুরনো খবর: শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে এ বার দায়িত্ব ছাঁটাই এসি-র |
|
|
|
|
|