|
|
|
|
দিনভর বিমানের চক্কর ছয় শহরে, সোনা তুলল কে
নিজস্ব সংবাদদাতা |
খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো সমস্যার মুখোমুখি শুল্ক দফতরের তদন্তকারীরা।
কে বা কারা কোন শহরে জেট সংস্থার বিমানে উঠে সামনে-পিছনের দু’টি শৌচাগারে সওয়া সাত কোটি টাকার ২৪ কিলোগ্রাম সোনা রেখেছিল, তার বা তাদের নাগাল পেতে গিয়েই আতান্তরে পড়েছে শুল্ক দফতর। বিমানের যাত্রী থেকে পাইলট-কর্মী বা সেবিকা, কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিদেশের তিনটি এবং দেশের তিনটি শহর চষে বেড়িয়েছে বিমানটি। মুম্বই থেকে দুবাই গিয়ে মুম্বইয়ে ফিরে সেটি কুয়েত যায়। সেখান থেকে মুম্বইয়ে ফিরে ব্যাঙ্কক রওনা হয়। ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতা। তার পরে পটনা। সেখান থেকে কলকাতায় ফেরার পরে গভীর রাতে রক্ষণাবেক্ষণের সময়েই পাওয়া যায় প্রতিটি এক কিলোগ্রাম ওজনের ২৪টি সোনার বার।
দিনভর ছ’টি শহরে যাতায়াতের ফলে অনেক যাত্রী যেমন ওই বিমানে উঠেছেন, ভিন্ন ভিন্ন শহরে কর্মীও বদল হয়েছে। জেটের হিসেব, সারা দিনে এক হাজারেরও বেশি যাত্রী উড়েছেন ওই বিমানে। আর বিমানটিতে কাজ করেছেন অন্তত ৫০ জন কর্মী। সন্দেহের আওতায় আছেন সকলেই। কিন্তু এ-পর্যন্ত তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই কোনও রকম তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। অথচ ওই যাত্রী আর কর্মীদের
মধ্যেই কেউ বা কারা বিমানে সোনা রেখেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে বা তাদের চিহ্নিত করতেই তদন্তকারী অফিসারদের মাথার চুল ছেঁড়ার জোগাড়।
তদন্তকারীদের ধারণা, এই সোনা পাচারের সঙ্গে বড় কোনও চক্র জড়িত। বিমানের কোন জায়গায় সোনা লুকিয়ে রাখা হবে, কে বা কারা কোথায় কী ভাবে তা নামাবে সেই ছকও কষা হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। তাঁদের বক্তব্য, বিমান থেকে সোনা নামিয়ে আনার সঙ্গে পটনা-কলকাতা বা কলকাতা-পটনা রুটের এক বা একাধিক যাত্রী ও কর্মীর জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, দেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে বিমান ওঠানামা করলে তল্লাশির কাজে শুল্ক অফিসারেরা সাধারণত থাকেন না। তাই লুকোনো কিছু নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
শুল্ক অফিসারদের সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইয়ে বসে নিজেদের মতো করে তদন্তে নেমেছে জেটের নিরাপত্তা বিভাগও। সোমবার বিকেলের পরে বিমানটি ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় এসে পটনা গিয়েছিল। রাতে পটনা থেকে ফেরার পরেই সোনা মেলে তার দু’টি শৌচাগারে। বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, বুধবার সকালেই ব্যাঙ্কক-কলকাতা, কলকাতা-পটনা, পটনা-কলকাতা ওই তিনটি রুটের যাত্রী-তালিকা হাতে নিয়েছে তাদের মুম্বই অফিস। তিন রুটে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সাফাইয়ের কাজে কোন কোন কর্মী যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সম্পর্কেও সবিস্তার তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। দুবাই-মুম্বই রুটের যাত্রী-তালিকা, কর্মী-তালিকাও যাচাই করা হচ্ছে।
ওই সব তথ্য চেয়েছে শুল্ক দফতরও। প্রাথমিক ভাবে কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখছেন না শুল্ক অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, কোনও বিমানযাত্রী সোনা নিয়ে বিমানে উঠে শৌচাগারে লুকিয়ে রাখতে পারে। আবার সেই কাজ করে থাকতে পারে বিমান সংস্থার এক বা একাধিক কর্মীও। তাই কলকাতা ছাড়াও সে-দিন মুম্বই, দুবাই, কুয়েত, ব্যাঙ্কক, পটনা বিমানবন্দরে যাঁরা ওই বিমানে সাফাই ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করেছিলেন, জেট সংস্থার কাছে তার তালিকাও চেয়ে পাঠিয়েছে শুল্ক দফতর।
তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না ওই বিমানের পাইলট, সেবিকারাও। এক শুল্ক অফিসার বলেন, “আমাদের ধারণা, ওই সোনা দুবাই থেকেই বিমানে তোলা হয়েছে। মুম্বইয়ে নামিয়ে নেওয়ার কথা ছিল।” দুবাই বিমানবন্দরের সিসিটিভি-র ছবিও দেখতে চান তদন্তকারীরা। এক অফিসারের কথা, “যে বা যারা চামড়ার কালো পাউচ-ব্যাগে সোনা লুকিয়ে রেখেছিল, সে বা তারা নিশ্চয়ই সেই ব্যাগ হাতে দোলাতে দোলাতে বিমানে ওঠেনি। বড় কোনও হাতব্যাগে তা ভরে নিয়ে উঠেছিল। তবু সিসিটিভি-র ফুটেজে কিছু মিলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।”
২৪টি সোনার বাট আপাতত শুল্ক দফতরের হেফাজতে রয়েছে। তা রাখা হয়েছে কলকাতায় শুল্ক দফতরের স্ট্রং-রুমে। সেখানে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার পুলিশি পাহারা। এক শুল্ক অফিসার জানান, তিন-চার মাসের মধ্যেই আদালতের নির্দেশ নিয়ে মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ওই সোনা। তা জমা পড়বে সরকারের ঘরে। এটাই নিয়ম। কলকাতায় এর আগে অন্তত দু’বার বিমান থেকে এর চেয়ে বেশি সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এক বার ৩০ কেজি, অন্য বার ৫৬ কেজি। এ বারের মতো নব্বইয়ের দশকে ওই দু’বারই সোনা রাখা হয়েছিল বিমানের শৌচাগারে কোমোডের পিছনে।
|
পুরনো খবর: বিমানের শৌচাগারে ৭ কোটির সোনা |
|
|
|
|
|