|
|
|
|
ক্যামেরন ঘুরে যেতেই হাওড়া স্টেশন চত্বর ফের নরক
শান্তনু ঘোষ ও সুপ্রিয় তরফদার |
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এসেছিলেন বলে কয়েক ঘণ্টার জন্য বদলে গিয়েছিল চেহারাটা। তিনি চলে যেতেই হাওড়া স্টেশন চত্বরও ফিরল নিজের পরিচিত ছন্দে। যত্রতত্র আবর্জনা, উন্মুক্ত প্রস্রাবাগার থেকে শুরু করে হকারদের দখল করা বাস-ছাউনি, ফুটপাথ সব অব্যবস্থাই ফিরে গেল আগের অবস্থায়।
নিত্যযাত্রী ও স্থানীয়দের কথায়, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন বলে ১৪ নভেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য হাওড়া স্টেশন চত্বরে কোনও রাস্তা, বাস-ছাউনি কিংবা ফুটপাথে হকার বসতে দেওয়া হয়নি। রাস্তার আবর্জনা সাফ করে ছড়ানো হয়েছিল ব্লিচিং পাউডার। ট্রেনের যাত্রীদেরও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করতে বাধ্য করেছিল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু দুপুর তিনটের পরেই পুরনো ছন্দে ফিরে গিয়েছিল কুলিটাউন হাওড়ার প্রাচীন রেল স্টেশন চত্বর।
এখানেও সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হকার। স্টেশনে ঢোকার রাস্তা থেকে শুরু করে সাবওয়ে, ফুটপাথ, বাস-বে সবই এখন চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। স্টেশনের পাশেই রয়েছে জেলা, কলকাতা ও মিনিবাস স্ট্যান্ড। প্রতি দিন গড়ে কয়েক হাজার মানুষ ওই স্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। অভিযোগ, যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গায় ও ফুটপাথের উপরেই গড়ে উঠেছে চা-খাবারের দোকান, ভাতের হোটেল। তাঁদের ব্যবহার করা নোংরা জল ফুটপাথ থেকে গড়াচ্ছে রাস্তায়। আবর্জনা উপচে পড়ে কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়া নিকাশির নোংরা জলের উপর দিয়েই চলাফেরা করতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। অধিকাংশ যাত্রী শেডই ভাঙাচোরা। আবার যেগুলি ভাল রয়েছে, সেখানে সপরিবার আস্তানা গেড়েছেন অনেক কাগজকুড়ুনি ও ভবঘুরে। |
|
হাওড়া স্টেশন চত্বর। এটাই নিত্যদিনের ছবি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
সাবওয়ের অধিকাংশ গেট ও সিঁড়িতেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে হরেক মালপত্রের বিকিকিনি। রাত ৮টা থেকে গোটা সাবওয়েই কার্যত সব্জির বাজারে পরিণত হয়। অভিযোগ, ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ঠেলে ট্রেন ধরতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাদ নেই স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা এবং গঙ্গার ধারও। কোথাও রাস্তার উপরেই বসেছে ফল, চা, ব্যাগের দোকান। কোথাও আবার রাস্তার উপরেই ভারী মালপত্র নামিয়ে সেগুলি ঠেলায় তোলা হয়। ফেরিঘাটগুলির সামনেই দিব্যি চলছে হোটেল-সহ অন্যান্য অস্থায়ী দোকান।
এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “আমরা হকার তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের মদতেই ওরা ফের বসছে।” স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের মদতে দৈনিক ১০০-৪০০ টাকার বিনিময়ে হকারেরা বসছেন স্টেশন চত্বরে। তবে স্টেশনের সাবওয়ের ১০ নম্বর গেটের ফুটপাথটি থেকে কয়েক দিন আগে হকার সরিয়ে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। কিন্তু গোলাবাড়ি থানার পুলিশ সহায়তা বুথ সংলগ্ন সেই ফুটপাথই এখন উন্মুক্ত প্রস্রাবাগারে পরিণত হয়েছে। উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ বলেন, “মানুষের সমস্যা করে কোনও হকার বসাকে সমর্থন করি না। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সহযোগিতা করব। আমাদের দলের কেউ এই বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “হাওড়া স্টেশন চত্বরের হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তবে কেন্দ্রীয় সরকার হকার সম্পর্কে যে নীতি গড়েছে, তা এই রাজ্যে এখনও চালু হয়নি। হলে সমস্যা অনেক কমত। সাবওয়েটিতেও হাওয়া খেলে না। এই অব্যবস্থার জন্য প্রশাসনই দায়ী।” ১০ নম্বর গেটের ফুটপাথে যে হকারেরা বসতেন, তাঁরা সুভাষবাবুর সংগঠনের সদস্য ছিলেন। এ কথা স্বীকার করে তিনি বলছেন, “যেখানে রাস্তা সরু, সেখানে এখনও হকার বসছে। অথচ, যেখানে হকারদের সুষ্ঠু ভাবে বসানো যেতে পারে, সেখান থেকেই তাঁদের তুলে দেওয়া হচ্ছে। ১০ নম্বর গেটের ফুটপাথের বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।”
হকারের পাশাপাশি সমস্যা রয়েছে সাবওয়ের নিরাপত্তা নিয়েও। হাওড়া স্টেশনের ওল্ড কমপ্লেক্সের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার ওই সাবওয়েতে গেটের সংখ্যা ১৮টি। আবার ওল্ড কমপ্লেক্সের ৮ ও ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ফেরি ঘাট পর্যন্ত আছে আর একটি সাবওয়ে। সেখানে পর্যাপ্ত আলোও নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় যখন রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয় কেবল তখনই হাওড়া সাবওয়েতে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা চোখে পড়ে। না হলে মাঝেমধ্যে কেএমডিএ-র কয়েক জন লাঠিধারী নিরাপত্তারক্ষীকে দেখা যায় সাবওয়ে পাহারা দিতে।
হাওড়া স্টেশন চত্বরেই রয়েছে কয়েকটি উদ্যান। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলির অবস্থাও বেহাল। পাশাপাশি গোটা স্টেশন চত্বরের সর্বত্রই উন্মুক্ত প্রস্রাবাগার তৈরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত তার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয় পথচারীদের।
হাওড়া স্টেশনের এই অবস্থার জন্য রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য দায়ী করছেন হাওড়া পুরসভাকে। তিনি বলেন, “হাওড়া স্টেশনের হকার সরিয়ে শ্রীবৃদ্ধি করতে গেলে প্রথমেই পুরসভাকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু হাওড়া পুরসভা এত দিন কোনও কাজই করেনি। হাওড়ার পুর-ভোটের পরে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব।” হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জায়সবাল এর জবাবে বলেন, “স্টেশন চত্ত্বরের পুরোটাই রাজ্য সরকারের অধীনে। পুরসভা এখানে কী করবে?”
|
পুরনো খবর: দিনভর ব্যস্ততার পরে ঝাল-ঝাল ডালবড়া দারুণ |
|
|
|
|
|