মহাকরণ সংস্কারে কি এ বার ইয়াঙ্গন মডেল
যেন প্রায় অযাচিত ভাবে হাতে চাঁদ পাওয়া।
মহাকরণের সংস্কারের ভার নিয়ে মেঝের টালি খুঁজতে ঘুম ছুটে গিয়েছিল পূর্ত দফতরের কর্তাদের। হঠাৎই বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসা এক দল ব্রিটিশ স্থপতি ক্ষীণ আশার আলো দেখিয়ে গেলেন তাঁদের। সেই সঙ্গেই দিয়ে গেলেন এ কাজে যে কোনও রকম সাহায্যের আশ্বাস।
রাইটার্স বিল্ডিংস-এর মেন ব্লকের মেঝে তৈরি হয়েছিল বিশেষ ধরনের পোড়ামাটির টালি দিয়ে। ব্রিটেনের ট্রেন্টব্রিজে সেই টালি তৈরি হত। মহাকরণ তৈরির সময়ে সেখান থেকেই নিয়ে আসা হয়েছিল ওই বিশেষ ধরনের টালি।
সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পরে রাজ্যের পূর্ত দফতরের কর্তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তন্ন তন্ন করে ওই ধরনের টালির খোঁজ করেছেন। বিদেশেও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও পোড়ামাটির তৈরি ওই টালির খোঁজ মেলেনি। স্বভাবতই ওই টালি পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। তারই হদিস দিতে সাহায্য করবেন বলে এ দিন আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে কলকাতায় আসা প্রাচীন ভবন সংস্কারের কাজে বিশেষজ্ঞ স্থপতিদের ওই বেসরকারি প্রতিনিধিদল।
মহাকরণ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে রাইটার্স বিল্ডিংস-এ আসে ব্রিটিশ স্থপতিদের ওই প্রতিনিধি দলটি। সেই দলে ছিলেন ব্রিটিশ প্রাচীন ভবন সংস্কার বিষয়ক স্থপতি ফিলিপ ডেভিস। ইংরেজের শাসনকালে তৈরি কলকাতার বিভিন্ন ভবন সম্পর্কে তিনি যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। রাইটার্স বিল্ডিংস-এর সংস্কারের খবর শুনে তিনি নিজেই তা ঘুরে দেখার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন। চার জনের ওই প্রতিনিধিদলটি মহাকরণে এলে ফিলিপের কাছেই টালির কথা পাড়েন পূর্ত দফতরের এক কর্তা। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ত-কর্তাদের ওই টালির নমুনা পাঠাতে বলেছেন ফিলিপ। আশ্বাস দিয়েছেন, ব্রিটেনে ফিরে গিয়ে তিনি ওই ধরনের টালির খোঁজ করবেন। এ ছাড়াও, মহাকরণ সংস্কারে যে কোনও রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়ে গিয়েছে ওই ব্রিটিশ স্থপতিদল।
হঠাৎ দেখলে যমজ বলে মনে হয়। (বাঁ দিকে) ইয়াঙ্গনের সচিবালয়। (ডান দিকে) মহাকরণ।
এ দিন মহাকরণে ঘুরতে ঘুরতেই ফিলিপ বলে ওঠেন ইয়াঙ্গনের সচিবালয়ও রাইটার্স বিল্ডিংস-এর ধাঁচেই তৈরি। পূর্ত-কর্তাদের তিনি ইয়াঙ্গনের সচিবালয়ের স্থাপত্য খুঁটিয়ে দেখারও পরামর্শ দেন। ফিলিপ নিজে সম্প্রতি ওই সচিবালয়ের সংস্কারের কাজে যুক্ত ছিলেন।
ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা চলে যাওয়ার পরে মহাকরণের এক কর্তা বলেন, “পরে ইন্টারনেটে আমরা ইয়াঙ্গনের সচিবালয়ের ছবি দেখেছি। মনে হচ্ছে, অবিকল কলকাতার মহাকরণ।”
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, এ দিন সকাল দশটায় ওই ব্রিটিশ স্থপতিরা মহাকরণে আসেন। প্রথমে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের মেন ব্লক ঘুরে দেখেন তাঁরা। এর পরে একে একে খুঁটিয়ে দেখেন মহাকরণের ছাদ, পিছনের কয়েকটি ব্লক, বিভিন্ন মূর্তি এবং দেওয়ালে বিভিন্ন স্থপতির কাজ। ঘুরে দেখেন ক্যাবিনেট রুম, রোটান্ডা, ছাদের বিভিন্ন মূর্তিও। ঘণ্টাখানেক ধরে মহাকরণ ঘুরে দেখার ফাঁকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছবিও তুলে রাখেন তাঁরা। বিভিন্ন সময়ে এখানে কী কী সংস্কারের কাজ হয়েছে, নতুন করে কী কী ভবন তৈরি হয়েছে, মহাকরণের মূল কাঠামোই বা কী ছিল তা-ও পূর্ত-কর্তাদের কাছে জানতে চান ব্রিটিশ প্রাচীন ভবন সংস্কারের বিশেষজ্ঞেরা।
পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওই প্রতিনিধিদল খুঁটিয়ে মহাকরণের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেছেন। আমরা ওঁদের কাছে রাইটার্স বিল্ডিংস-এর পুরনো কোনও তথ্য পেলে তা দেওয়ার অনুরোধ করেছি। ওঁরাও যথাসম্ভব সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।” ওই কর্তার দাবি, “ব্রিটিশ প্রতিনিধিদল আসায় আমরা খুবই উপকৃত হব। ওঁরা সবাই সারা বিশ্বে বিভিন্ন প্রাচীন ভবন সংস্কারের কাজে যুক্ত। ওঁদের পরামর্শ আমাদের নিঃসন্দেহে সাহায্য করবে।”
রাইটার্স বিল্ডিংস সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সরকারের কাছে বিভিন্ন ওয়াকিবহাল মহলের পরামর্শ ছিল, এ ধরনের প্রাচীন ভবন সংস্কারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত দক্ষতা আছে, এমন কোনও সংস্থাকে এই কাজের রূপরেখা তৈরির ভার দেওয়া হোক। কিন্তু রাজ্য সরকার সে পথে হাঁটেনি। সংস্কারের ভার দেওয়া হয় পূর্ত দফতরকেই। এবং সেই কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন দফতরের কর্তারা। এই অবস্থায় ব্রিটিশ স্থপতি দলটির মহাকরণ ঘুরে যাওয়া অন্তত কিছুটা হলেও আশার আলো ফিরিয়ে দিয়ে গেল তাঁদের।

পুরনো খবর

 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.