|
|
|
|
রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে গরহাজির মুখ্যমন্ত্রী
অনমিত্র সেনগুপ্ত |
দু’জনের থাকার কথা ছিল একই মঞ্চে। সেই মতো প্রোটোকল অনুযায়ী সমস্ত বন্দোবস্ত সেরে ফেলেছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার কলকাতার সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত রইলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেননি। আজ, শুক্রবারও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর কোনও কর্মসূচি নেই। শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতির যাওয়ার কথা দুর্গাপুর ও বর্ধমানে। কোথাওই মুখ্যমন্ত্রীর থাকার কথা নেই। বর্ধমানে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ওই দু’টি অনুষ্ঠান সেরে পানাগড় এয়ারবেস থেকে রাষ্ট্রপতির সরাসরি দিল্লি ফেরত যাওয়ার কথা। অতএব শুক্রবার সকালের মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না হলে চলতি সফরে আর তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। সে ক্ষেত্রে এই ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
অতীতে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে মমতার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন প্রণববাবু। দু’জনের সুসম্পর্কের নানা নজিরও দেখা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কলকাতায় রাষ্ট্রপতির এ বারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী গরহাজির থাকায় স্বভাবতই জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছে। কারও কারও মতে, সম্প্রতি দার্জিলিং সফরে গিয়ে বিমল গুরুঙ্গদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বৈঠক করায় মমতা অসন্তুষ্ট। সেটাই তাঁর অনুপস্থিতির কারণ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানাতে শীর্ষ স্তরের কোনও মন্ত্রীকে পাঠাননি মমতা। গিয়েছিলেন রচপাল সিংহ। যদিও এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার যে কোনও সদস্যই রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকতে পারেন। |
|
সায়েন্স সিটির মঞ্চে নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাশে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র। |
গত ১০ নভেম্বর দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন প্রণববাবু। রাজ্য সরকারের সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর তরফে রাষ্ট্রপতি ভবনকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছিল, যাতে প্রণববাবু মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক না করেন। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে দিল্লিতে রোশন গিরিদের সঙ্গে দেখা করায় অসন্তোষ জানান মমতা। এখন তিনি যথেষ্টই চাপে রেখেছেন মোর্চাকে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ পেলে গুরুঙ্গরা বাড়তি মনোবল পাবেন বলে মনে করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়েছে। মমতার ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, এতেই বেজায় চটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
যদিও এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন-সূত্র বলছে, গুরুঙ্গ নিয়ে মমতার আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাজই তো সকলের সঙ্গে দেখা করা, স্মারকলিপি গ্রহণ করা। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকার সকলেরই রয়েছে। তা ছাড়া, কয়েক মাস আগে রাষ্ট্রপতির সিকিম সফরের সময়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন গুরুঙ্গরা। সেই সময়ে পাহাড় নিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন তাঁরা। এ বারেও তা-ই করেছেন। কোনও রাজনৈতিক বিষয় আলোচনায় ওঠেনি।
রাষ্ট্রপতি ভবন এই যুক্তি দিলেও মমতা তা মানতে নারাজ। বস্তুত, মোর্চা প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র জমিও ছাড়তে চায় না রাজ্য। বৃহস্পতিবারই কলকাতায় পাহাড় নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ছিল। রাজ্য প্রশাসনের মতে, চাপের মুখে মোর্চা যখন বৈঠকে বসতে বাধ্য হচ্ছে, তখন রাষ্ট্রপতি তাদের সঙ্গে দেখা না করলেই পারতেন। একান্তই যদি দেখা করতে হত, তা হলে প্রয়োজনে সেই বৈঠকে রাজ্য সরকারও নিজের প্রতিনিধি পাঠাতে পারত। সে ক্ষেত্রে মোর্চা অন্তত একতরফা ভাবে নিজেদের যুক্তি পেশ করতে পারত না। মোর্চার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক হলে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও জটিল হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে রাজ্য প্রশাসন।
এর পাশাপাশি, মোর্চা নেতাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের অন্য একটি তাৎপর্যও খুঁজছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের ধারণা, আসন্ন লোকসভা ভোটে মোর্চার সমর্থন নিয়ে দার্জিলিং থেকে প্রার্থী হতে পারেন রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। সেই কারণেই দার্জিলিং সফরে তিনি প্রণববাবুর সঙ্গে গিয়েছিলেন। এমনকী সিকিম সফরেও সঙ্গে গিয়েছিলেন। ওই তৃণমূল নেতাদের দাবি, প্রণব-পুত্র গুরুঙ্গের সমর্থন নিয়ে পাহাড়ে প্রার্থী হলে মমতাও হয়তো তাঁর প্রার্থী দেবেন। এবং সে ক্ষেত্রে পাহাড়ে ‘বহিরাগত’ অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করতে পারেন। পাহাড়বাসীর একটা অংশ তৃণমূল প্রার্থীকেই সমর্থন করবে বলে মনে করছে দল।
রাষ্ট্রপতি ভবন-সূত্রে বলা হয়েছে, অভিজিৎবাবু ওই সময়ে দার্জিলিঙের রাজভবনে উপস্থিত ছিলেন বটে, কিন্তু বৈঠকটি হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও বিমল গুরঙ্গের মধ্যে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রধান। সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন না। তা সত্ত্বেও মোর্চা নেতারা বারংবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে রাজ্য প্রশাসনকে অস্বস্তিতে রাখতে চাইছে।” |
|
|
|
|
|