ফোয়ারা, রঙিন টালিতে বাঁধানো বাগান, আধুনিক ধাঁচের চওড়া প্রবেশপথসব মিলিয়ে সংস্কারের পর সাবেক মহাকরণের চেহারায় আসবে এই সব বদল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন পেয়েছে মহাকরণ সংস্কারের নকশা। কী ভাবে কাজ শুরু হবে, তা ঠিক করতে শীঘ্রই বৈঠকে ডাকা হবে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে।
আগের মতোই মুখ্যমন্ত্রী বসবেন দোতলায়। পূর্ত দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এখন আলো-হাওয়া ঢোকে না। সংস্কারের পর মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে বড় মাপের বেশ ক’টি জানলা দিয়ে ঢুকবে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস। পাশেই থাকবে তাঁর সচিবালয় এবং অতিথিদের বসার বড়সড় ঘর।” নকশায় স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের দুটি ছবি রাখার কথাও রয়েছে। তাঁর ঘরে যাওয়ার জন্য যে ভিআইপি করিডর, সেটিকে বাতানুকূল করার কথা রয়েছে নয়া নকশায়।
ভেঙে ফেলা হবে মহাকরণের চারটি পুরনো ভবন। পাঁচটি হেরিটেজ ব্লক অক্ষুণ্ণ রেখে ঢেলে সাজা হবে চারটি ব্লক। কী ভাবে মহাকরণের সংস্কার হবে, তার রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসু-র স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের প্রধান মধুমিতা রায় এবং অরূপ সরকার। বুধবার তাঁরা জানান, গত ১০ তারিখের বৈঠকে নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে। ২৩৬ বছরের পুরনো মহাকরণে ঐতিহ্যের সঙ্গে আনা হবে আধুনিকতার মিশেল। |
কী ভাবে হবে এই সংস্কার?
এখন মহাকরণে বেশ ক’টি ভবন মিলিয়ে মোট ব্লক ১৩টি। মোট আয়তন (ফ্লোর এরিয়া) ৫ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গফুট। এর মধ্যে দেড় লক্ষ বর্গফুট মূল ভবন। মহাকরণের সামনের অংশ, রোটান্ডা এবং পিছনের ১ থেকে ৫ নম্বর ব্লকে ভাঙাভাঙি হবে না। কিন্তু ‘বি’ ব্লকের মধ্যে দিয়ে তৈরি হবে সামনের মূল প্রবেশপথের সঙ্গে যোগাযোগকারী পিছনের ফটক। লায়ন্স রেঞ্জে অর্থাৎ শেয়ার বাজারের দিকে নয়া ফটকটি হবে একেবারে পাঁচতারা হোটেলের প্রবেশপথের মতো।
ভেঙে ফেলা হবে ভিতরে সিজিএ (চিফ গভর্নমেন্ট আর্কিটেক্ট) এবং ই এফ জি ব্লক। প্রথমটি দ্বিতল। বাকিগুলোর একটি পাঁচ তলা, অপর দু’টি ছ’তলা। এই অংশে একতলার উচ্চতায় ঢালাই হবে। তার উপর হবে ফোয়ারা, রঙিন টালিতে বাঁধানো বাগান এবং দৃষ্টিনন্দন নানা কাজ। সব মিলিয়ে দূর হবে ভিতরের ঘিঞ্জি ভাব।
১৭৭৭ সালে স্থপতি টমাস লিওঁ মহাকরণের নকশা করেন। ১৮২৭-এ তৈরি হয় ১২৮ ফুট দীর্ঘ ও ৩৫ ফুট উঁচু বারান্দা। ১৮৮৯ থেকে ১৯০৬-এর মধ্যে যুক্ত হয় বেশ ক’টি নতুন ব্লক। অরূপবাবু বলেন, “ব্লকগুলোর বিভিন্ন অংশে যাতায়াতে অলিগলি পেরোতে হয়। সমস্যাটা অতিক্রম করতে প্রতি তলায় তৈরি হবে উত্তর-দক্ষিণ করিডর। আনুমানিক চার মিটার চওড়া।”
প্রয়োজনের নিরিখে গত দু’শো বছরে মহাকরণে বাড়তি কাজের জায়গা তৈরি করতে হয়েছে। এর জন্য বিভিন্ন তলায় চওড়া বারান্দা ঢেকে তৈরি হয়েছে ঘর। এই সব পার্টিশন ভেঙে ফেলা হবে।
১৮৮৩ সালে উইলিয়াম ফ্রেডরিক ইডিঙ্গটনের তৈরি ‘মিনার্ভা’ বসানো হয় মহাকরণের উপরে। গ্রেকো-রোমান শিল্পরীতির আরও বেশ ক’টি মূর্তিও বসে সেখানে। এগুলোরও সংস্কার হবে। মান্ধাতার আমলের বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে নানা সময়ে অস্থায়ী ভাবে যুক্ত হয়েছে হরেক সংযোগ। এগুলোর ব্যাপক সংস্কার হবে। সেই সঙ্গে ব্যাবহার হবে সৌর-বিদ্যুতের। এর জন্য নির্দিষ্ট নানা জায়গায় বসানো হবে সৌর-প্যানেল।
কত খরচ হতে পারে মহাকরণ সংস্কারে? বা কতটা সময় লাগবে? মধুমিতা রায় বলেন, “এগুলো চূড়ান্ত করতে প্রশাসনের অফিসারদের সঙ্গে আমাদের ফের বৈঠক হবে। আমাদের ভাবনা রূপায়ণে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে কি না, থাকলে কী, ক’টি পর্যায়ে সংস্কার হবে— এ সবের জন্য বৈঠক ডাকার কথা।” |