|
|
|
|
দিনভর ব্যস্ততার পরে ঝাল-ঝাল ডালবড়া দারুণ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
তিনি এলেন। দেখলেন। এবং জিতে গেল কলকাতা।
বরদান মার্কেটের সামনে ফুটপাথের দোকানে মুগডালের বড়া চেখে দেখা থেকে এ শহরে ব্রিটিশ ইতিহাস-ঐতিহ্যের দুই মাইল ফলক হাওড়া সেতু ও স্টেশন ঘুরে দেখা— বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার কলকাতা সফরে সবটাই উপভোগ করে গেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
আর সফর শেষে ট্যুইটারে নিজেই লিখলেন, “লাভড দ্য হট, স্পাইসি লেন্টিল কেক্স ইন আ ক্যালকাটা মার্কেট আফটার আ বিজি ডে অব মিটিংস।” সঙ্গে সেই মুহূর্তটার ছবি।
বরদান মার্কেটের সামনে মুগডালের বড়ার ছোট্ট দোকানটায় হিন্দিতে লেখা ‘চহ্বাণ ভিক্টোরিয়া বড়া’। সফর শেষে বিমানবন্দরে ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পরে এখানেই নেমেছেন শহরের ‘ভিভিআইপি’ অতিথি। খেয়ে গিয়েছেন পাঁচ-পাঁচটি বড়া। শুধু তা-ই নয়, অনুবাদকের সাহায্য নিয়ে বিক্রেতার কাছে খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছেন, কী ভাবে তা তৈরি হয়, কী ভাবে চলে ব্যবসা। করজোড়ে নমস্কার করেছেন দোকানি ও আশপাশের সবাইকে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বড়া খাইয়ে মিলেছে তিরিশ টাকা। |
চোখে এবং চেখে... |
|
|
|
ব্রিজ থেকে বড়া— ঝটিকা সফরে এসে এমনই নানা ভাবে কলকাতার আস্বাদ নিলেন ব্রিটেনের
প্রধানমন্ত্রী
ডেভিড ক্যামেরন। (বাঁ দিকে) দিনের বেলা ঘুরে দেখলেন হাওড়া স্টেশন ও সেতু।
(ডান দিকে) সন্ধ্যায়
বিমানবন্দর যাওয়ার পথে নেমে পড়লেন বরদান মার্কেটের সামনে।
চেখে দেখলেন মুগডালের
গরমাগরম খান পাঁচেক বড়া। ছবি: সুদীপ আচার্য ও সুমন বল্লভ। |
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, স্বয়ং ক্যামেরন আসবেন বলে বড়ার দোকানি অনুরাগ চহ্বাণকে বলা হয়েছিল ভাল জিনিস দিয়ে বৃহস্পতিবারের খাবারদাবার বানাতে। অনুরাগ অবশ্য এমন কিছু মানতে চাননি। বলেছেন, তাঁদের শুধু থাকতে বলা হয়েছিল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ পুলিশ এসে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করে দিয়ে যায় শুধু। আশপাশের এত দোকান থাকতে তাঁর দোকানই কেন? একগাল হেসে অনুরাগ বলেন, “দোকানের নামে ভিক্টোরিয়া আছে বলেই হয়তো!”
শহরে আসবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। স্বভাবতই টানটান নিরাপত্তার চেনা ছবিটা ছিল বিমানবন্দর থেকেই। পুলিশি কড়াকড়িতে সুনসান পথ, দু’ধারে ব্যারিকেডের ওপারে উৎসুক জনতা। ফাঁকা হাওড়া সেতু, গেট-বন্ধ স্টেশন এবং পুলিশ পাহারা। সব মিলিয়ে দুপুর থেকেই প্রস্তুত ছিল কলকাতা। এ দিন তিনি কলকাতায় নামার তিন মিনিট আগে থেকে আকাশপথেও ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু ওই সময়ে কলকাতায় নেমে আসার জন্য বা শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য কোনও বিমান ছিল না, তাই বিমানবন্দরের অফিসারদের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। বিমানটিকে ভিআইপি গেটের সামনে ৪২ নম্বর বে-তে এনে দাঁড় করানো হয়। সন্ধ্যায় সেখান থেকেই কলম্বো উড়ে যান তিনি।
দিল্লি থেকে টাইটান এয়ারওয়েজের বোয়িং ৭৫৭ বিমানে ক্যামেরন কলকাতায় নামেন দুপুর ২টো ২০ মিনিটে। বিমানবন্দরে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বাগত জানানোর পরে ক্যামেরনের কনভয় সটান গিয়ে ওঠে হাওড়া সেতুতে। তাঁর নিরাপত্তার কারণে ফাঁকা করে দেওয়া সেতু পেরিয়ে গিয়ে পৌঁছলেন হাওড়া স্টেশনের সামনে। বন্ধ গেটের সামনে তখন ক্যামেরনকে এক ঝলক দেখতে চাওয়া ট্রেনযাত্রীরা। দু’পাশে চালকহীন ট্যাক্সির সারি। পিছনে ধাওয়া করা ব্রিটিশ ও কলকাতার সংবাদমাধ্যম। সে সবের মাঝখান দিয়েই কয়েক পা হেঁটে গেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
মেরেকেটে চার মিনিট। তার মধ্যেই স্টেশনের সামনে পরপর তিনটি লেনের দ্বিতীয়টি দিয়ে প্রায় পনেরো পা হেঁটে ঐতিহাসিক হাওড়া সেতুর দিকে এগিয়ে গেলেন ক্যামেরন। ফিরলেনও একই পথে। তার মাঝেই অবশ্য তাঁর চোখ টেনেছে ব্রিটিশ আমলের হাওড়া স্টেশনের সুবিশাল উপস্থিতি।
হাওড়া থেকে কনভয় এর পরে কলকাতামুখী। ফের সুনসান পথ পেরিয়ে সোজা আকাশবাণী ভবন। কনফারেন্স রুম এবং এক নম্বর স্টুডিও-র ভিতরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সটান উঠে গেলেন ছাদে। সেখানেই আধ ঘণ্টার ইন্টারভিউ চলাকালীন উল্টো দিকের ফুটপাথ থেকে দিব্যি দেখল আমজনতা।
সেখান থেকে জোকা। এবং দিনের শেষ কর্মসূচি ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ। তার পরে বিমানবন্দরে ফেরার পথেই বরদান মার্কেটে এই ‘বড়া-অভিযান’। রাত সাড়ে ন’টার সময়েও যার ঘোর কাটেনি দোকানি, বছর তিরিশের অনুরাগ বা তাঁর ভাই অর্জুনের। বললেন, “দিন তিনেক আগে কয়েক জন সাহেব এসে আমাদের খাবার খেয়ে গেলেন, ছবি তুললেন, বলে গেলেন বৃহস্পতিবার যেন থাকি। তখনই বুঝি হোমরা-চোমরা কেউ আসবেন। তা বলে খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী? কল্পনাতেও ছিল না!” |
|
|
|
|
|