ক্যামেরনের রসিকতায় মজল আইআইএম
ডান পাশে ২৩টি চেয়ার। বাঁ পাশে আরও ২৩টি। পড়ুয়া-শিক্ষক মিলিয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কলকাতার অডিটোরিয়ামের মঞ্চে মোট ৪৬ জন। মাঝে ছোট একটা টেবিল। তার উপর জলের গ্লাস। বিকেল পাঁচটা কুড়িতে সাদামাটা এই মঞ্চেই উঠে এলেন ব্রিটেনের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
পরের ৪৫ মিনিটে আলোচনার জল গড়াল এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে। পুরো সময়টাই ঠায় দাঁড়িয়ে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন তিনি। কখনও সিরিয়া-সমস্যা, তো কখনও রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদ। কখনও ভারত সম্পর্কে ধারণা, তো কখনও সচিনের অবসর। সঙ্গে অবশ্যই কলকাতা। সমস্ত কিছু নিয়েই প্রশ্নের উত্তর দিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী।
এর আগে এই শহরে শেষ কোনও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পা পড়েছিল ১৯৯৭ সালে। সে বার জন মেজর সৌরভ গঙ্গোপ্যাধ্যায়ের কথা বলেছিলেন। এ দিন কলকাতার মন বুঝে ক্যামেরন বললেন সচিন তেন্ডুলকরের কথা। তাঁর কথায়, “আমি ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ঠিক লোকেদের মাঝেই এসেছি।”
এমনটা বলার কারণও ব্যাখ্যা করে দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ঠিক সময় সচিনের শেষ ম্যাচ। ঠিক জায়গা এই দিনেই নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর বৃহস্পতিবার তিনি সেই কবির ঘরের মাটিতে। আর ঠিক লোক অবশ্যই সামনের দর্শকেরা।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান ইতিমধ্যেই সচিনের ঝুলিতে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কলকাতার
পড়ুয়াদের সঙ্গে ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
তাদের অ্যাসেজ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, তেন্ডুলকরকে নাইটহুড দেওয়া হবে কি না। রসিকতার সুরেই ক্যামেরন জবাব দিলেন, সচিনের শাশুড়ি ব্রিটিশ নাগরিক। সেই সুবাদে সচিনের ছেলে ব্রিটেনের হয়ে ক্রিকেট খেলতে পারবে। কিন্তু নাইটহুড দেওয়ায় তাঁর কোনও ভূমিকা নেই।
হাল্কা মেজাজের এই অনুষ্ঠানেও ভারত তথা কলকাতার জন্য বার্তা দিয়ে গেলেন ক্যামেরন। পারস্পরিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করলেন তিনটি ক্ষেত্রকে। সওয়াল করলেন পরিকাঠামো, শিক্ষা ও বিমা শিল্পে গাঁটছড়া বাঁধার। কলকাতাকে ব্রিটিশ ব্যবসার মানচিত্রে যোগ করা নিয়ে বললেন, “এই শহর বাড়ছে। তার জন্য প্রয়োজন পরিকাঠামোর উন্নয়ন। জলপথ সংস্কার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নে আমাদের দক্ষতা রয়েছে।” ইঙ্গিত স্পষ্ট, এ ক্ষেত্রে তাঁরা শহরের হাত ধরতে তৈরি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে বিপুল ব্যবসায়িক সুযোগ রয়েছে। দরকার শুধু তা চিনে নেওয়ার ক্ষমতা। ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভারতীয় পড়ুয়াদের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এ সবের পাশাপাশি ছুঁয়ে গিয়েছেন হাজারো আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রশ্ন। সিরিয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, “যে কোনও দেশ আরও বেশি স্বাধীনতা পাওয়ার পথে এগোতেই পারে। কিন্তু তা বলে রাসায়নিক হানা নিন্দাজনক।” এ বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকা নিয়ে। যার উত্তরে তিনিও স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের পুনর্গঠন প্রয়োজন। সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ পাওয়া উচিত ভারতের। তার জন্য জরুরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। মহা বিতর্কিত প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচর এডওয়ার্ড স্নোডেন সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ, গোয়েন্দা সংস্থা মানেই তা খারাপ নয়।
আর দেশের যে কোনও গোপন খবর ফাঁসই বিপজ্জনক।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ছিল আইআইএম চত্ত্বর। ছেয়ে ছিল পুলিশ আর সাদা পোশাকের গোয়েন্দা। পড়ুয়া, শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছিল দফায় দফায়। কিন্তু যাঁর জন্য এই আয়োজন, শেষ পর্যন্ত তাঁর ছোট কনভয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ল বেশ সাদামাটা ভাবেই। অনুষ্ঠানেও আগাগোড়া তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দ, সাবলীল আর স্বতঃস্ফূর্ত। আড্ডা দিলেন এমন ভাবে যেন পাশের বাড়ির লোক।
কানায় কানায় ভরা অডিটোরিয়ামে প্রশংসা কুড়িয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই সাধারণ মানুষের মতো আচরণ। চোখ টেনেছে তাঁর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। নজর কেড়েছে প্রশ্নোত্তরের অনুষ্ঠান পরিচালনার ভার নিজের হাতে তুলে নেওয়াও। দর্শকাসনের কোন সারি থেকে প্রশ্ন আসছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখে তা ঠিক করে দিচ্ছেন, এমনটা তো সচরাচর ঘটে না!
প্রশ্নোত্তরে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে আইআইএম ক্যাম্পাসেই কলকাতার কয়েক জন শিল্পপতির সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় বসেছিলেন ক্যামেরন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া ও বিক্রম দাশগুপ্ত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.