|
|
|
|
মমতার টানে শহরে ক্যামেরন
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বিশেষ বিমান নামল দমদম বিমানবন্দরে। টারম্যাকে পা-রেখেই স্বাগত জানাতে আসা পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ক্যামেরনের প্রশ্ন, “হাউ ইজ ইয়োর চিফ মিনিস্টার?”
সুব্রতবাবুর চটজলদি জবাব: “শি ইজ ফাইন, স্যার। শি উইল মিট ইউ ইন দ্য ইভনিং।”
“ইয়েস ইয়েস। আই অ্যাম ইগার টু মিট হার।” বললেন ক্যামেরন।
কলকাতায় আসার কথাই ছিল না। গোড়ায় ঠিক ছিল, দিল্লি থেকে চেন্নাই ছুঁয়ে শ্রীলঙ্কায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে চলে যাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হঠাৎ কেন মতবদল, তা নিয়ে এ দিন সকাল পর্যন্ত জল্পনা চলেছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। দুপুরে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্যামেরন বুঝিয়ে দিলেন, কোন টানে তাঁর এই আচমকা কলকাতা সফর। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, “আমার তো মনে হল, মমতার প্রতি অপার আগ্রহ থেকেই এসেছেন ক্যামেরন সাহেব। সে কারণেই তিনি নিজে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।”
ক্যামেরনের আগ্রহে কূটনীতির নিগড় এড়িয়ে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক গড়াল নির্ধারিত সীমার বাইরে। ঠিক ছিল বৈঠক হবে ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট। হল আরও ছ’মিনিট বেশি। ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনে আয়োজিত সেই বৈঠকে ক্যামেরনকে নিজের আঁকা ছবি উপহার দেন মমতা। কৌতূহলী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, মমতা কারও কাছে আঁকা শিখেছেন কি না? ছবি আঁকার মাধ্যম কী? বিষয়ই বা কী? মমতা তাঁকে জানান, তিনি পেশাদার শিল্পী নন। কারও কাছে আঁকা শেখেনওনি। মন যা চায় তা-ই আঁকেন। কোনও ব্যাকরণ না-মানাটাই তাঁর শৈলী। |
|
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে সাক্ষাৎ,
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনে। ছবি: দেবাশিস রায়। |
মমতার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি যে মুগ্ধ, তা ক্যামেরন গোপন করেননি বলেই রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ব্রিটেনে আমন্ত্রণ জানান। সূত্রের খবর, ক্যামেরন মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, “লন্ডনে আপনি অনেক বাঙালি বন্ধু পাবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, “লন্ডনে আমার অনেক ব্রিটিশ ভাইবোনও রয়েছেন। আমি তাঁদের নিয়েও আগ্রহী।” তবে নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, ক্যামেরনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও বিলেতে যাওয়ার দিন ক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। রাতে ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে মমতা লিখেছেন, “উনি (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) আমাকে তাঁর দেশে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি খুশি।”
এ দিন কলকাতায় নেমে সরাসরি হাওড়া ব্রিজ দেখতে চলে গিয়েছিলেন ক্যামেরন। দেখেছেন হাওড়া স্টেশন, গঙ্গাও। সন্ধ্যার বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ পাড়েন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, গঙ্গার শোভা তাঁর ভাল লেগেছে। শহর কলকাতা যে ব্রিটিশদের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে, সে কথা ক্যামেরনকে মনে করিয়ে দিয়ে মমতা তাঁকে বলেন, সেই সব ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনেক চিহ্নই এখন রয়েছে। তাঁর সরকার সেগুলি সংস্কারের কাজে হাতও দিয়েছে। যেমন সারিয়ে তোলা হচ্ছে একদা ব্রিটিশ করনিকদের বাসস্থান রাইটার্স বিল্ডিং।
এই সমস্ত ঐতিহ্যবাহী বাড়ি এবং গঙ্গার দু’পাড়ের সৌন্দর্যায়নের কাজে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা চেয়েছেন মমতা। নবান্ন থেকে নিজের তোলা গঙ্গা-পাড়ের ছবিও আই-প্যাডেক্যামেরনকে দেখিয়েছেন মমতা। পরে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, পেশাদারি দক্ষতাবৃদ্ধি, নির্মাণ শিল্প, নদী তীরের সৌন্দর্যায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার অবকাশ রয়েছে।” বৈঠকে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে আরও কিছু পদক্ষেপ করার জন্য ক্যামেরনকে অনুরোধ করেছেন মমতা। রাজ্যে একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ারও কথাও বলেন।
এই ধরনের গাঁটছড়া বাঁধতে তিনিও যে আগ্রহী, সেটা মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগেই আইআইএম জোকার অনুষ্ঠানে বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্যামেরন। সেখানে পারস্পরিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে পরিকাঠামো, শিক্ষা এবং বিমাশিল্পকে চিহ্নিত করেছেন তিনি। সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, “এই শহর বাড়ছে। তার জন্য প্রয়োজন পরিকাঠামো উন্নয়ন। জলপথ সংস্কার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নে আমাদের দক্ষতা রয়েছে।”
এ দিন ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। মুখ্যমন্ত্রী আসার মিনিট দশেক আগেই আইআইএম থেকে দূতাবাসে চলে আসেন ক্যামেরন। মমতা আসেন ৬টা বেজে ৫৫ মিনিটে। লনে তাঁকে স্বাগত জানান ক্যামেরন। তার পর শুরু হয় বৈঠক। সূত্রের খবর, গোড়ায় একান্তে কথা বলেন মমতা-ক্যামেরন। তার পর অর্থমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবকে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, “খুব ইতিবাচক বৈঠক। আমি আশা করি ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এটা কার্যকর হবে।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রাণচঞ্চলতায় যে তিনি খুশি, পরে ফেসবুকে সে কথা লিখেছেন মমতা। ক্যামেরনও শহর ছাড়ার আগে বুঝিয়ে গিয়েছেন, তিনি আপ্লুত। বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, “নাইস পিপ্ল হিয়ার। ইওর সিএম টু।”
|
পুরনো খবর: পরশু কলকাতায় ক্যামেরন, কথা চান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে |
|
|
|
|
|