|
|
|
|
গ্রাহকের আধারের ছবি গ্যাসের দোকানেই
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কলকাতায় রান্নার গ্যাসের গ্রাহকদের আধার নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে ডামাডোল অবশেষে কিছুটা কমতে চলেছে। আধার নম্বরের জন্য যে সব গ্রাহকের ছবি তোলা বা বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়নি, আগামী ২১ নভেম্বর থেকে গ্যাসের ডিলারের দোকানেই সেই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের আধার নম্বর না থাকা সত্ত্বেও তার ভিত্তিতে গ্যাসে ভর্তুকির প্রক্রিয়া চালু করায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে তাঁর দলের তরফে ইন্ডিয়ান অয়েলের দফতর ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
গত ১ নভেম্বর থেকে কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে আধার নম্বরের ভিত্তিতে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি গ্যাসে ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গ্রাহকদের আধার নম্বর গ্যাসের ডিলার ও ব্যাঙ্কে জানাতে হবে। দুই জায়গায় সেই তথ্য নথিভুক্ত হলে সিলিন্ডার কেনার পরে ভর্তুকির টাকা সেই অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।
জাতীয় জনগণনা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় মোট ৪০ লক্ষ ৪৭ হাজার মানুষের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ২৮ লক্ষ (৭০%) মানুষের আধারের ওই তথ্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় আইওসি, এইচপি এবং বিপি-র গ্যাসের মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১২.৫০ লক্ষ। অভিযোগ, তাঁদের অধিকাংশেরই এখনও আধার নম্বর তৈরি হয়নি। অনেকের ছবি তোলা হলেও আধার নম্বর পাননি। আবার কারও ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্যই এখনও নেওয়া হয়নি। ফলে তিন মাস পরে সেই সব গ্রাহকেরা কী ভাবে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি পাবেন, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পরে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের যুগ্মসচিব, জাতীয় জনগণনা দফতর, তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ও ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। এই ব্যবস্থা চালুর সময়সীমা পিছিয়ে দিতে রাজ্যের আর্জি সেখানে গ্রাহ্য না হলেও দ্রুততার সঙ্গে শিবির চালু করে গ্রাহকদের ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের উপরে জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। গ্যাসের দোকানেই সেই শিবির খোলার বিষয়েও কথা হয়।
সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার জাতীয় জনগণনা দফতর, আধার কর্তৃপক্ষ, তেল সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ ও পদস্থ কর্তারা। পুরসভা সূত্রের খবর, ২১ নভেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাসের দোকানেই ওই শিবির খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই শিবির শুধুমাত্র রান্নার গ্যাসের গ্রাহকদের জন্যই চালু হবে। তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা সেখানে গিয়ে ছবি তোলার সুযোগ পাবেন না। কলকাতা বলতে এ ক্ষেত্রে অবশ্য কলকাতা পুলিশ এলাকা বোঝানো হচ্ছে। সেই এলাকার মধ্যে তিনটি তেল সংস্থার মোট ৮১ জন ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছেন।
এ দিন গ্রাহকদের নাম, ঠিকানা-সহ যাবতীয় তথ্য পুরসভা ও জনগণনা দফতরকে দেয় তারা। এই শিবিরের জন্য গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরেরা দোকানে জায়গা দেবেন। জনগণনা দফতরের প্রতিনিধিরা সেখানে গ্রাহকদের ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করবেন। তার পরে তাঁদের আধার নম্বর তৈরির জন্য তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে আধার কর্তৃপক্ষের (ইউআইডিএআই) কাছে। গ্যাসের দোকানে শিবির চালুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ, শুক্রবার ও কাল, শনিবার দোকানগুলি পরিদর্শন করবে পুরসভা ও জনগণনা দফতর। ‘অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্তা বিজন বিশ্বাস শিবির করার ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কোথাও জায়গার অভাব হলে সংলগ্ন এলাকায় অন্যত্র ওই শিবির চালু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে পুরসভা ও জনগণনা দফতর।
পরিবার পিছু একটি অর্থবর্ষে ন’টি ভর্তুকির সিলিন্ডার পাওয়ার কথা। সরাসরি ভর্তুকি প্রক্রিয়া গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছনোর প্রক্রিয়া গত ১ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালু হয়েছে। সে জন্য গ্রাহককে তাঁর আধার ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ডিস্ট্রিবিউটর ও ব্যাঙ্কে জানাতে হবে। সেই তথ্য তেল সংস্থা ও ব্যাঙ্কের কাছে নথিভুক্ত হওয়ার পরেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে একটি গড় ভতুর্কির টাকা (প্রায় ৪৩৫ টাকা) আসবে। এর পরে যখন তিনি ভর্তুকির গ্যাস কিনবেন, তখন গোড়ায় তাঁকে বাজারদরেই (এখন কলকাতায় যার দাম ৯৮৪ টাকা) কিনতে হবে। তার পরে পুরো ভর্তুকির টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসবে। ন’টির কোটা ফুরিয়ে গেলে (দশ নম্বর সিলিন্ডার থেকে) ভর্তুকি মিলবে না।
|
আধার নিয়ে আঁধার কাটাতে |
• কবে শুরু হবে গ্যাস ডিলারদের কাছে ছবি তোলা?
আগামী ২১ নভেম্বর। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
• গ্রাহককে কী করতে হবে?
পুরসভার কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে একটি স্লিপ দেবেন। স্লিপে লেখা তারিখে নথিপত্র-সহ যেতে হবে গ্রাহককে।
• যাঁরা ছবি তুলেছেন কিন্তু কার্ড পাননি, তাঁদেরও কি যেতে হবে?
না। আধার নম্বর পাওয়ার জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে।
• যাঁরা বরো অফিসে আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও ছবি তোলা হয়নি, তাঁরা কী করবেন?
তাঁরা গ্যাসের দোকানে গিয়ে ছবি তুলতে পারেন। যাঁর নামে গ্যাসের সংযোগ, কেবল তাঁর কার্ডই করা হবে গ্যাসের দোকানে। পরিবারের অন্যদের যেতে হবে বরো অফিসেই।
• বাড়ি কলকাতা পুর এলাকার বাইরে, কিন্তু গ্যাসের ডিলার পুর এলাকার। সে ক্ষেত্রে কী করবেন গ্রাহক?
তাঁকে গ্যাস ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্ড করে নিতে হবে। |
পুরনো খবর: গ্যাস গ্রাহকদের আধার-শিবির ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে |
|
|
|
|
|