শর্ট স্ট্রিট তদন্তের সেই অধরা যোগসূত্র এ বার পুলিশের জালে
কটা জায়গায় এসে তদন্তের সুতোটা বারবার ছিঁড়ে যাচ্ছিল। যে ব্যক্তি সেটিকে জুড়তে পারেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা, তাঁর হদিস মিলছিল না। শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডে বৃহস্পতিবার রাজেশ রাজেশ দামানি নামে সেই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। গোয়েন্দাদের দাবি, হাওড়ার বাসিন্দা রাজেশই ছিলেন জমি-কারবারি পরাগ মজমুদার ও পিনাকেশ দত্তের মধ্যে যোগসূত্র।
তদন্তকারীরা জানান, ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমিটি গায়ের জোরে দখলের ব্যাপারে পরাগের হয়ে পিনাকেশের সঙ্গে পরামর্শ করতেন রাজেশ। ১১ নভেম্বর ও তার আগে ওই জমিতে বহিরাগতদের দিয়ে হামলার ছক রাজেশের উপস্থিতিতেই কষা হয়েছিল বলে পুলিশের অভিযোগ। ১১ নভেম্বর ভোরে শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার ওই ১৭ কাঠা জমি-সহ বাড়ির দখল নিতে হামলা হয়। বাড়ির ভিতর থেকে গুলি চলে। প্রাণ যায় দুই বহিরাগতের। আহত একাধিক। গ্রেফতার ১৬ জন। ধৃতদের মধ্যে একাধিক পুরুষ-মহিলা বাউন্সার, আইনজীবী বা পরাগ-পিনাকেশের মতো জমি-কারবারি-সহ ‘দখলদার’ পক্ষের লোকজন যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন ঘটনার সময় ওই বাড়িতে থাকা এক মহিলাও। সেই মমতা অগ্রবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সঙ্গীদের নিয়েই তিনিই গুলি চালান।
এবং ধৃতের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এই রাজেশ দামানি। ঘটনার পরে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন। এ দিন দুপুরে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে এক শপিং মলের সামনে পুলিশ তাঁকে ধরে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, রাজেশ কাগজে-কলমে হার্টলাইন নামে মুম্বইয়ের এক সংস্থার অধিকর্তা, বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই। আদতে তিনি পরাগের অধীনেই চাকরি করতেন। এ দিন আদালতে পরাগকেই গোটা ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। কী রকম?
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পুলিশের তরফে বলা হয়, পরাগ মজমুদারই ২০১০-এ হার্টলাইন নামে ভুয়ো সংস্থাটি তৈরি করেছিলেন। সরকারি কৌঁসুলি কৃষ্ণচন্দ্র দাসের অভিযোগ: শর্ট স্ট্রিটের জমিটি ২০১০-এ শিল্পপতি সঞ্জয় সুরেখাকে বিক্রি করেছিল হার্টলাইন, যে বাবদ পরাগ অগ্রিম আট কোটি টাকা নেন। কথা ছিল, ছ’মাসের মধ্যে জমিটি তিনি সুরেখার হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু তা করা যায়নি। পরাগও টাকা ফেরাতে না-পেরে জমি ফের বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন। সরকারি কৌঁসুলির দাবি, আট কোটি টাকা হার্টলাইন ছাড়াও দু’টি সংস্থাকে ভাগ করে দিয়েছিলেন পরাগ হার্টলাইনকে চার কোটি, অন্য দু’টিকে দু’কোটি করে। আসলে পুরো টাকাটাই পরাগের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন। “কারণ তিটেরই মালিক পরাগ মজমুদার।” বলেন তিনি।
লালবাজারের খবর, পরাগের অন্য দু’টো কোম্পানিও ভুয়ো। রাজেশের সঙ্গে দিলীপ দাস নামে এক ব্যক্তি ছিলেন তার ডিরেক্টর। দিলীপকে ইতিমধ্যে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
অন্য দিকে পরাগের কৌঁসুলি সুদীপ্ত মিত্র এ দিন সওয়ালে অভিযোগ করেন, এফআইআরে নাম না-থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁর মক্কেলকে গ্রেফতার করেছে। এমনকী, ঘটনার সময়ে তিনি ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। কৌঁসুলিরা বলেন, স্থপতি হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে পরাগকে সম্মানিত করা হয়েছে, তিনি তিনশো কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। এ সব বিচার করেই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। ব্যাঙ্কশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন বিচারক বিশ্বরুপ শেঠ অবশ্য আর্জি নাকচ করে পরাগকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন।
এ দিকে পুলিশ-সূত্রের দাবি, এ পর্যন্ত পরাগের গোটা দশেক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে। তার পাঁচটি মিলিয়ে মোট জমার পরিমাণ সওয়া এক কোটি টাকা। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই সব অ্যাকাউন্ট মারফতই জমি বিক্রির টাকা লেনদেন হয়েছিল। অ্যাকাউন্টগুলো সিল করেছে লালবাজার। গত দশ বছরে সেগুলোর যাবতীয় লেনদেন যাচাই করতে বলা হয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখাকে।
পাশাপাশি সঞ্জয় সুরেখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু তথ্য মিলেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁর সঙ্গে পরাগের টাকা লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাঙ্ক-নথিও এখন পুলিশের হাতে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.