|
|
|
|
রক্ষিহীন এটিএম অবিলম্বে বন্ধে সরকারি নির্দেশ
সংবাদ সংস্থা • বেঙ্গালুরু |
মাথার খুলি ভেঙে গিয়েছে। হাড়ের ছোট একটা টুকরো ঢুকে গিয়েছে মাথার ভিতরে। পঙ্গু হয়ে গিয়েছে ডান দিক। তবে আশার কথা এটাই যে, গত কাল সকালে বেঙ্গালুরুর রক্ষীবিহীন এটিএমে দুষ্কৃতী হামলায় আহত মহিলার প্রাণের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নৃশংস এই ঘটনার সিসিটিভির স্পষ্ট ফুটেজ রয়েছে। তবু ঘটনার দু’দিন পার হতে চললেও ওই দুষ্কৃতীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনা নিয়ে বিতর্কের জেরে কর্নাটক সরকার অবিলম্বে সব রক্ষীহীন এটিএম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে।
জ্যোতি উদয় নামে ৩৮ বছর বয়সী মহিলা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এখন আইসিইউয়ে শুয়ে লড়াই করছেন। বেঙ্গালুরুর বিজিএস গ্লোবাল হাসপাতালের চিকিৎসক এন কে ভেঙ্কটরত্ন জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় অস্ত্রোপচারের পরে জ্যোতির মাথা থেকে ওই হাড়ের টুকরো বার করা হয়েছে। তিনি এখন কথা বলতে পারছেন। তবে এখনও তাঁকে নজরে রাখা হচ্ছে। জ্যোতির স্বামী উদয় কুমার জানিয়েছেন, স্ত্রী তাঁকে চিনতে পেরেছেন। তবে ডাক্তারের নির্দেশ, আপাতত কম কথা বলুন। কিন্তু দিনের আলোয় বেঙ্গালুরুর কর্মব্যস্ত রাস্তায় এত মারাত্মক ঘটনা কী করে ঘটল, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। |
|
এটিএমে সেই হামলার ছবি। |
প্রশ্নটা উঠেছে সব স্তরেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে কর্নাটক সরকার। আজ সব ব্যাঙ্ককে সরকারি নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, যারা এটিএম-এ রক্ষী দিতে পারবে না, তাদের কিয়স্ক অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে হবে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে জে জর্জ এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেন। তাঁর কাছ থেকেই জানা যায়, বেঙ্গালুরু শহরে ২৫৮০টি এটিএম-এর মধ্যে ৬০০টিরও বেশি এটিএম-এ কোনও রক্ষী মোতায়েন করা নেই। জর্জ বলেন, “আমরা বলেছি অবিলম্বে নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা না করলে এটিএম বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যাঙ্কের গ্রাহকের নিরাপত্তা রক্ষা করা ব্যাঙ্কেরই দায়িত্ব। পুলিশের নয়। পৃথিবীর কোথাও পুলিশ এটিএম পাহারা দেয় না।” জর্জ জানান, এটিএমে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশিকা তৈরির জন্য অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের আইন দফতর আলোচনায় বসবে। যদিও ইন্ডিয়া ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো
|
জ্যোতি উদয় |
হয়েছে, তাদের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে এটিএমে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন রাখতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ যে কার্যক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না, এ ঘটনাই তার প্রমাণ।
পুলিশ কমিশনার রাঘবেন্দ্র আউরদকর জ্যোতির সঙ্গে কথা বলেছেন। কমিশনার পরে জানিয়েছেন, ওই হামলাকারীকে খুঁজতে জেলায় জেলায় পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। কথা হচ্ছে প্রতিবেশী অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গেও। সিপি-র মতে, এটিএম-এর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই দুষ্কৃতীর কাজ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে প্রথম বার কাজে নেমেছে এমন নয়।
গত কাল সকাল সাতটা নাগাদ বেঙ্গালুরুর আলসুর গেট থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে একটি এটিএম-এ ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হন জ্যোতি। সেখানে কোনও নিরাপত্তা রক্ষী ছিল না। যে ব্যাঙ্কের এটিএম, জ্যোতি নিজেই সেখানে কর্মরত। ওই এটিএম-এর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে, জ্যোতি এটিএম-এ ঢুকে মেশিনের কাছে গিয়ে ব্যাগে হাত দিতেই পিছন থেকে দরজা ঠেলে ঢুকছে ওই দুষ্কৃতী।
পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতী জ্যোতিকে আগে থেকেই অনুসরণ করছিল। এটিএম-এ ঢুকেই শাটার নামিয়ে দেয় দুষ্কৃতী। তার পরে জ্যোতিকে টাকা দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে শুরু করে। জ্যোতি আপত্তি করায় প্রথমে রিভলভার বার করে ভয় দেখায়। এটিএম-এর অ্যালার্ম বাজাতে নিষেধ করে। তার পরেই নিজের ব্যাগ থেকে বড় ছুরি বার করে চড়াও হয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের উপরে। বারবার ওই ছুরি বসিয়ে রীতিমতো কুপিয়ে মারার চেষ্টা করে জ্যোতিকে। রক্তে লুটিয়ে পড়েন জ্যোতি। এর পরে জ্যোতিকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে তাঁর মোবাইলটা নিয়ে আবার শাটার টেনে তুলে এটিএম থেকে বেরিয়ে শাটার নামিয়ে দেয় সে। ঘটনার তিন ঘণ্টা পরে ওই কিয়স্কের বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময়ে সেখানে রক্তের দাগ দেখতে পায় দুই স্কুলপড়ুরা। পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। এর পরে জ্যোতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |
|
|
|
|
|