গ্রামে ইন্টারনেট দিতে ওয়াই-ফাই আশ্বাস
লোধাশুলির চন্দ্রকান্ত মাহাতোকে এখন আর নাতি-বউয়ের ছবি দেখার জন্য ট্রেকারে চেপে ঝাড়গ্রামে যেতে হয় না। তাঁর ছেলে বেঙ্গালুরুতে চাকরি করে। ই-মেল করে বাবাকে বউ-ছেলের ছবি পাঠায়। এত দিন সেই ই-মেল দেখতেই চন্দ্রকান্তকে ঝাড়গ্রামে ছুটতে হত। কিন্তু এখন তিনি গ্রামে বসেই মোবাইলে ইন্টারনেট খুলে ছবি দেখে নিতে পারেন।
চন্দ্রকান্ত মাহাতোর এই গল্প এখনও কল্পনা হলেও, ভবিষ্যতে তা বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষের মন জিততে মনমোহন-সরকারের পরিকল্পনা, দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হবে। যার ফলে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ থেকেই গ্রামের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। আগামী দশ বছরে তার জন্য খরচ হবে অতিরিক্ত ২৫ হাজার কোটি টাকা।
এমনিতে মোবাইল থেকেই ইন্টারনেট খোলা যায়। তার জন্য আলাদা মাসুল গুনতে হয়। ইন্টারনেটে কোনও কাজ করতেও অনেক সময় লাগে। কিন্তু ওয়াই-ফাই ব্যবস্থায় ‘হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক’-এ ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া হয়। তাই খুব সহজে ও দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ইতিমধ্যেই দেশের আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তার মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে ‘ওয়াই-ফাই হটস্পট’ বসানো হবে। এই হটস্পট থেকেই ইন্টারনেটের সুবিধা পাওয়া যাবে গ্রামে। এক সঙ্গে দশ জন নিজেদের মোবাইল বা অন্য কোনও যন্ত্র থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও কোনও অসুবিধা হবে না। তার জন্য কত মাসুল লাগবে, তা পরে ঠিক হবে।
কিন্তু কবে থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম প্রশ্ন, অর্থ আসবে কোথা থেকে? কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুরুতে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। দেশের সবাইকে মোবাইল পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে একটি তহবিল চালু করেছে কেন্দ্র। মোবাইল সংস্থাগুলির থেকে আদায় করা সেস সেই তহবিলে জমা হয়। ওই তহবিল থেকেই প্রাথমিক খরচ হবে। তার পরে প্রতি বছর ২,০৬০ কোটি টাকা লাগবে। তা জোগাবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক।
কিন্তু গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, বাজেটে এমন কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। চলতি মাসের শেষে মন্ত্রিসভার কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে। গ্রামে-গ্রামে মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে কেন্দ্রীয় সরকার যে অপটিক্যাল ফাইবারের জাল বিছনোর কাজ শুরু করেছিল, সেখানেও সমস্যা রয়েছে। ২০১১ সালে এই কাজ শুরু হয়েছিল। খরচ ধরা হয়েছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৩ সালে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, তা হচ্ছে না। তা শেষ হতে হতে ২০১৫ এসে যাবে। কাজেই সব গ্রামে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার কাজও তার আগে করা যাবে না।
মনমোহন সিংহ-রাহুল গাঁধী অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের আমজনতার হাতে আরও বেশি সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলছেন। আধার-সংখ্যার মাধ্যমে নগদ ভর্তুকি হস্তান্তর, ছাত্রছাত্রীদের জন্য কম দামে ‘আকাশ’ ট্যাবলেট কম্পিউটার দিয়ে সেই চেষ্টাই চলছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই অর্থের জোগানের সমস্যা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ লোকসভা নির্বাচনের আগে আমজনতার মন জিততে কংগ্রেস নেতৃত্ব আরও বেশি জনমুখী প্রকল্প নিতে চাইলেও, রাজকোষে ঘাটতির কথা ভেবে খরচে শক্ত হাতে রাশ টেনে ধরছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভারত অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। ৯০ শতাংশ গ্রামেই কোনও ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। ইন্টারনেট পরিকাঠামোর হিসেবে ৫৭টি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ৪৯ নম্বরে। এক হাজার জনের মধ্যে মাত্র ৪৭ জন নিজস্ব কম্পিউটার ব্যবহার করেন। এই ছবিটা খুব দ্রুত বদলে যাবে, তা-ও নয়। সরকারি-বেসরকারি অনুমান অনুযায়ী, ২০১৫ সালেও গোটা দেশের মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন। গ্রামের ক্ষেত্রে এই হার হবে মাত্র ৯ শতাংশ। সেই কারণেই ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অন্য রকম চিন্তাভাবনার প্রয়োজন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.