মিনাখাঁর তিনটি গ্রামে মৃত্যুমিছিলের কারণ সিলিকোসিস রোগ, তা মঙ্গলবার কার্যত স্বীকার করে নিল জেলা প্রশাসন। পাথর খাদান-ফেরত একের পর এক গ্রামবাসীর মৃত্যুর খবর সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর, এ দিন মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে এক বিশেষ শিবির করা হয়। গোয়ালদহ, দেবীতলা এবং ধুতুরদহ গ্রাম থেকে পাথর ভাঙার কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া শতাধিক গ্রামবাসীকে পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। চার জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত স্বীকার করেন যে, রোগটি সিলিকোসিস বলেই মনে করছেন ডাক্তাররা। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল দিনভর তিনটি গ্রাম থেকে আসা ১৩৯ জন অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করেন। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পাথর খাদানে কাজে গিয়ে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দশ শতাংশ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।” আব্দুল পাইক, রাজ্জাক মোল্লা, সাহিফুদ্দিন মোল্লা এবং আলেম মোল্লার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এ দিন তাঁদের চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে পাঠানো হয়। অসুস্থ মজুরদের পরিবারগুলির জন্য প্রাথমিক ভাবে ১০ কুইন্ট্যাল চাল বরাদ্দ করা হয়েছে, জানিয়েছেন বিডিও গৌরমোহন হালদার।
পুষ্পেন্দুবাবু জানান, আজ বুধবার থেকে গ্রামে চিকিৎসা শিবিরে সম্পূর্ণ বিনা খরচে রোগীদের রক্ত-সহ অন্যান্য পরীক্ষা করার এবং ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কত জন কী কী রোগে আক্রান্ত সে বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে কলকাতা ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল গ্রামে আসবে, জানান তিনি। বর্ধমানের পাথর ভাঙার কারখানায় কাজ করলে মজুরি দিনে তিনশো টাকা। তারই আকর্ষণে মিনাখাঁর তিনটি গ্রামের শতাধিক যুবক সেখানে কাজ করতে যায়। কিন্তু কয়েক মাস কাজ করার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হতে তারা ফিরতে শুরু করে গ্রামে। এর পরই শুরু হয় মৃত্যু মিছিল। কাশি, বুকের যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্টে ভুগে গত এক সপ্তাহে সাত জন মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
সোমবার সকালে গোয়ালদহ গ্রামের দুই যুবক, আজগার মোল্লা এবং আলামিন মোল্লার মৃত্যুর খবরে টনক নড়ে প্রশাসনের। মঙ্গলবার বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্তের নেতৃত্বে একটি দল সারা দিন রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের চিকিৎসা করেন। চিকিৎসক দলে মাইক্রোবায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, চেস্ট মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও ছিলেন মহকুমা স্বাস্থা আধিকারিক অসিত কুমার পাণ্ডে, ব্লক মেডিক্যাল অফিসার রাজু মণ্ডল-সহ একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। গোয়ালদহ গ্রাম থেকে ১২৫ জন, এবং ধুতুরদহ ও দেবীতলা গ্রাম থেকে ১২ জন অসুস্থ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। দেওয়া হয় ওষুধ। চিকিৎসকরা জানান, অসুস্থদের অধিকাংশই বর্ধমানে জামুড়িয়া, ধসলমোড়, আসানসোলের নিমতলায় পাথর ভাঙার কাজে গিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
|