সরকারি হাসপাতালে ‘নিম্নমানের’ ওষুধ সরবরাহ কেলেঙ্কারিতে ত্রিপুরার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নামে অভিযোগ দায়ের করল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। আগরতলা পশ্চিম থানায় অভিযোগটি দায়ের করেছেন রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক সিনহা। অভিযোগে তপনবাবু ছাড়াও স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের অধিকর্তা সত্যরঞ্জন দেববর্মা-সহ কয়েকজন কর্তার নাম রয়েছে।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘হিমাচল প্রদেশের ওই ওষুধ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আশা করি পুলিশ এ বার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে।” সরকারি বিধি অনুযায়ী রাজ্যের মেডিক্যাল স্টোরে ওষুধ সরবরাহের তিন দিনের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করার কথা। অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘সেই কাজটি স্বাস্থ্য দফতর করেনি। উল্টে, জাল নথিপত্রের ভিত্তিতে ভেজাল ওষুধগুলি সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়।’’ তা ছাড়া, গুয়াহাটির আঞ্চলিক ড্রাগ ল্যাবরেটরি থেকে রিপোর্ট আসার কয়েক মাস পরে সরকারি হাসপাতালগুলিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ‘ভেজাল’ ওষুধ বন্ধের নির্দেশ দেয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এটা কী ভাবে সম্ভব?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ঘটনা জানাজানির পরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বর্ধমান ফার্মা নামক ওই সংস্থার সঙ্গে লেনদেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’’
এ দিকে, পশ্চিম থানার ওসি বীরেন দত্ত জানান, ‘‘বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি মামলা রাজ্য সরকার করেছে। অশোকবাবুর অভিযোগও এই সংক্রান্ত। সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে ৪৬৮, ৪৭৫, ৪২০ ইত্যাদি ধারায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। হিমাচল প্রদেশে গিয়েও রাজ্য পুলিশ তদন্ত করবে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের দায়ের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই।’’ ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগের কর্তা সত্যরঞ্জন দেববর্মার বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগ সম্পর্কে এখনও আমাকে জানানো হয়নি।’’
গুয়াহাটি থেকে বর্ধমান ফার্মার ওষুধের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরেই হিমাচল প্রদেশের ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দফতর যোগাযোগ করে। হিমাচল সরকারের তরফে জানানো হয়, কোম্পানিটির বৈধ লাইসেন্স ২০০৯ সালেই শেষ হয়ে গিয়েছে। হিমাচল প্রদেশের ওই কোম্পানির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর, ‘‘ওই কোম্পানির ওষুধ নিম্নমানের, নথিপত্র জাল ইত্যাদি প্রমাণিত হওয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও সরকারের তরফে দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’’ তপনবাবুর অভিযোগ, বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার পরেই কংগ্রেস মাঠে নেমে বিষয়টি নিয়ে ‘রাজনীতি’ করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতি বছরই এ রকম নিম্নমানের ওষুধ, পরিমাণে কম ওষুধ, ইত্যাদি কারণে কয়েকটি ওষুধ সরবরাহকারীকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বাতিল করে। তাদের পাওনাগণ্ডা আটকে দেয়। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।” সত্যরঞ্জনবাবু জানান, ‘‘সংস্থাটির ৯০ লক্ষ টাকার বিল সরকার আটকে দিয়েছে।” |