একশো দিনের লক্ষ্যপূরণে রোজ কাজ ১৫ লক্ষকে
র্থিক বছরের সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ১০০ দিনের কাজে এ রাজ্যের অবস্থা মোটেই সুবিধের নয় বলে বারেবারে অভিযোগ উঠছে। এ জন্য জেলা সফরে গিয়ে প্রতিটি পর্যালোচনা বৈঠকেই নিয়ম করে পঞ্চায়েত কর্তাদের ধমকও দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে আগামী চার মাস ধরে প্রতিদিন ১৫ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিল পঞ্চায়েত দফতর। মঙ্গলবার রাজ্যের ১৯টি জেলার জেলাশাসককে এক বৈঠকে ডেকে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তিন কর্তাও।
বৈঠকে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “নানা কারণে এত দিন প্রকল্পটি গতি পায়নি। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রথম তিন-চার মাস কোনও কাজ হয়নি। তার পরই বর্ষা নেমেছে। কিন্তু সামনের চার মাস কাজের সময়। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এই ক’মাস ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে হবে।” জেলাশাসকদের তাঁর বার্তা, “সামনের ১২০ দিন অন্য সব কিছু ভুলে ১০০ দিনের কাজে জোর দিন। তা হলে এ বার আমরা ৫০০০ কোটি টাকা খরচ করতে পারব।”
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে গত বছর ২১ কোটি ৬০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি করা হয়েছিল। খরচ হয়েছিল ৪১০০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতি পরিবার ৩৩ দিন কাজ পেয়েছিল। এ বার ২২ কোটি ৬১ লক্ষ কর্মদিবস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে ৫৮০০ কোটি টাকা পাওয়া যেত। গত বছরের সাফল্য দেখে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এই দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু আর্থিক বছরের প্রথম সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও যেতে পারেনি পঞ্চায়েত দফতর।
১০০ দিনের কাজের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকারের কথায়, “এখনও পর্যন্ত ৪ কোটি ৪২ লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি করা গিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জেলাগুলিতে সেই মতো কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ১৫ লক্ষ মানুষকে কাজ দেওয়ার জন্য বেশ কিছু জেলাকে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষকে কাজ দিতে হবে।” তিনি জানান, আগামী চার মাস এই গতিতে কাজ করতে না পারলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সেই কারণেই জেলাশাসকদের এই প্রকল্পে বাড়তি নজরদারির জন্য উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। কমিশনার বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিকে প্রতিদিন এক লক্ষের বেশি মানুষকে কাজ দিতেই হবে।”
কেন এই প্রকল্পটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সরকার এত উৎসাহী?
দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজে প্রথম সাত মাসে ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য খরচ করেছে ১৮৫৫ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি পরিবার মাত্র ১৬ দিন করে কাজ পেয়েছে। গত বছর যা ছিল ৩৩ দিন। এখনও পর্যন্ত ৮১৫৭টি পরিবার ১০০ দিন করে কাজ পেয়েছে। আর্থিক বছরের বাকি পাঁচ মাসে ৫৮০০ কোটি টাকা খরচ করা কী ভাবে সম্ভব হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না দফতরের কর্তারাই। অবশ্য পরিবারপিছু কত দিন কাজ দেওয়া গেল, তা নিয়ে নয়। দফতরের মূল চিন্তা মোট কত কর্মদিবস সৃষ্টি হল, তা নিয়েই।
জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব এস এম বিজয়ানন্দ, ১০০ দিনের কাজের দায়িত্বে থাকা যুগ্মসচিব এস সুব্রহ্মণ্যম এবং আর এক যুগ্মসচিব টি বিজয়কুমার। তাঁরা রাজ্যের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যে কোনও ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেচখাল, নয়ানজুলি, জলাশয় সংস্কারের কাজ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী মাটির রাস্তা নির্মাণেও ১০০ দিনের কাজ থেকে মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্তারা। পাশাপাশি গ্রামে পাকা শৌচালয় নির্মাণের জন্য শ্রমিকের মজুরিও এখন ১০০ দিনের কাজ থেকে দেওয়া যাবে। ফলে টাকা খরচের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হল বলে ধারণা পঞ্চায়েত কর্তাদের।
পাশাপাশি এখন প্রতিদিন ৬৯ কিউবিক ফুট মাটি কাটলে তবেই পুরো মজুরি পাওয়া যায়। রাজ্যের দাবি ছিল, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একই মাপ রাখা ঠিক না। কারণ, এক জন পুরুষ শ্রমিক সারা দিনে যতটা মাটি কাটবেন, এক জন মহিলা শ্রমিকের পক্ষে তা কঠিন। সেই কারণে মেয়েরা কম মাটি কাটলেও তাঁদের পুরো মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে দাবি জানিয়েছিল রাজ্য। কেন্দ্র সেই দাবিও মেনে নিয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.