‘সময় দিন, ম্যাজিক দেখাব’
ইস্টবেঙ্গলের রোগ ধরেছেন, দাবি আর্মান্দোর

ইস্টবেঙ্গল: ৪ (লোবো, চিডি-হ্যাটট্রিক)
জর্জ টেলিগ্রাফ: ১ (বিবেকানন্দ)
ঙ্গলবারই পূর্ণ হল তাঁর হাজার গোলের চুয়াল্লিশ বছর। সেই এডসন অ্যারান্তেস ডু নাসিমেন্তো (ফুটবল দুনিয়ার পেলে) তাঁর অন্যতম প্রিয় কোচ ভিসেন্তে ফিওলা সম্পর্কে বলতেন, “যে কোনও দলের খেলা পাঁচ মিনিট দেখেই তাদের রোগ ধরতে ফিওলার জুড়ি নেই।”
ডার্বি ম্যাচের পাঁচ দিন আগে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে প্রথম দিন বসেই লাল-হলুদের নতুন কোচ আর্মান্দো কোলাসোও ‘রোগ’ ধরে ফেললেন ফালোপা জমানার। তবে ফিওলার মতো পাঁচ মিনিটে নয়। ঘরোয়া লিগে জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচ নব্বই মিনিট দেখার পর।
সেই ‘রোগ’-এর ধরন কী রকম? ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচ আর্মান্দোর ব্যাখ্যায় তা চার রকমের।
, নির্দিষ্ট ছন্দে খেলতে খেলতে হঠাৎই আক্রমণ এবং রক্ষণের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাওয়া। যিনি এই সেতুবন্ধন করবেন সেই কেভিন লোবো আক্রমণে যতটা ভাল, নীচে নেমে রক্ষণ সামলাতে ততটা দক্ষ নয়।
, ফরোয়ার্ডদের লক্ষ করে (এখানে মোগা, চিডি) যে বল বক্সে বাড়ানো হয়, বিপক্ষ ডিফেন্ডারের ওয়াল-এ লেগে ফিরলে (যাকে বলে ‘সেকেন্ড বল’) তা কাজে লাগাতে গড়িমসি লাল-হলুদ ব্রিগেডের।
, পেন্ডুলামের মতো ওভারল্যাপ এবং ডিফেন্স করতে গিয়ে প্রায়শই খেই হারাচ্ছে দুই সাইড ব্যাক। বেশি করে নওবা।

চেনা আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রথম দিন লাল-হলুদ তাঁবুতে কোলাসো।
, প্রচুর মিস পাস। যা ধরে এ দিন শেষবেলায় দূরপাল্লার শটে দর্শনীয় গোল করে গেলেন জর্জের বিবেকানন্দ।
দরজায় কড়া নাড়ছে ডার্বি। তিন মরসুম ট্রফি না পাওয়া (ফাইনাল না খেলে এক ম্যাচের এয়ারলাইন্স ট্রফিকে এখানে ধরা হচ্ছে না) করিমের মোহনবাগান উপোসী বাঘের মতোই যে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। রবিবারের সেই বড় ম্যাচের আগে লাল-হলুদের এই চার রোগের দাওয়াই কী?
জর্জ টেলিগ্রাফকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বসে আর্মান্দোর পাল্টা প্রশ্ন, “ডার্বির আগে তা হলে কি স্ট্র্যাটেজি-ট্যাকটিক্সের সব তাস আপনাদের দেখিয়ে দেব?” এ বার উড়ে এল প্রশ্নবাণের ‘সেকেন্ড বল’। ম্যাচটা যে ডার্বি! না কেঁপে আর্মান্দো বললেন, “ওটাই কি একমাত্র ম্যাচ? ডার্বি জিতলাম। তার পর একের পর এক হারতে শুরু করলাম। আই লিগ আসবে?”
বুধবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বিদায় সংবর্ধনা নিতে যাবেন সদ্য বিদায়ী কোচ মার্কোস ফালোপা। যিনি ক্লাব ছাড়ার দিনেই মারাত্মক অভিযোগ করে গিয়েছিলেন দলে বাইশ জনের মধ্যে পনেরো জনই বেয়াড়া। প্রশ্নটা ঠিক এখানেই। সেই ‘বেয়াড়া ব্রিগেড’ নিয়ে পরপর দু’ম্যাচে সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী কী ভাবে জয় এনে দিলেন? যখন প্রথম দলের চার জন ফুটবলার জাতীয় দলে। আরও চার জন চোট পেয়ে বাইরে। তার পরেও জর্জ টেলিগ্রাফকে ৪-১-এর স্টিমরোলারে পিষে ফেলা! যে চিডি গোল-খরায় ভুগছিলেন, তাঁর পায়ে হঠাৎ গোলের বন্যা! চনমনে সুয়োকাও।
আর্মান্দো বলছেন, “চিডি ঠিক সময় জ্বলে উঠছে। ওর সাইকোলজি জানা আছে। আর রঞ্জনও দলটার রশি ধরে রেখেছে ঠিকঠাক।” তার পরেই বলছেন, “আমার কাজ কনফিডেন্স, মোটিভেশন ধরে রাখা। সঙ্গে ঝালিয়ে নিতে হবে ম্যান ম্যানেজমেন্টটাও। তা হলে এই ইস্টবেঙ্গলকেই অন্য রকম লাগবে।”
আর্মান্দোর মতো রঞ্জন পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ না হলেও বড় দলে খেলেছেন। ডার্বি ম্যাচে গোলও রয়েছে। তিন বছর মর্গ্যানের সংসারে থেকে তাঁর কোচিংও এখন পরিণত, আস্থাশীল। বিদেশিহীন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য-র জর্জ যে শুরু থেকেই ৩-৫-২ ছকে নেমে মাঝমাঠ ব্লক করার রাস্তায় হাঁটবে, সে আভাস তাঁর কাছে ছিল। তাই ৪-৪-১-১ ছকে রঞ্জন চিডির পিছন থেকে অপারেট করাচ্ছিলেন সুয়োকাকে। আর গোলের দরজা খুলতে ডাউন দ্য মিডল-এর বদলে ধরলেন উইংয়ের রাস্তা। তারই ফসল লোবোর গোল।

প্রথম গোলের দিকে এগোচ্ছেন চিডি।
তবে রবার্টের ফ্রিকিক থেকে হেডে তিনি যখন ফ্লিক করছেন, তখন অনভিজ্ঞতার কারণেই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন জর্জের কৌস্তভ, ইন্দ্রজিতরা। আর তার পরেই চিডির হ্যাটট্রিক। প্রথম গোল আগুয়ান গোলকিপার এবং ডিফেন্সকে কাটিয়ে। দ্বিতীয় গোল নওবার ক্রস ধরে বাঁ পায়ের আলতো শটে। আর তৃতীয় গোলের পিছনে নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ডের জোরালো পাঞ্চ।
তিন দশক আগে প্রথম বাঙালি কোচ হিসেবে গোয়া গিয়েছিলেন অমল দত্ত। সেই ‘ডায়মন্ড কোচ’ এ দিন আর্মান্দোর আগমনে বলছেন, “ফুটবলের কেন্দ্র তো এখন গোয়াই। তাই সেখান থেকেই কোচ আসবে। আমি অবাক নই। তবে ওকে সুযোগ দিতে হবে।”
লক্ষ্মীবারে ডার্বির ঠিক তিন দিন আগে প্রথম বার ইস্টবেঙ্গল কোচের জার্সি গায়ে লাল-হলুদ অনুশীলনে নামার আগে আর্মান্দোর গলাতেও সেই সুর। বলছেন, “মর্গ্যানই তো বলতেন, আর্মান্দো ডেম্পোয় যেটা করে, সেটাই আমি ইস্টবেঙ্গলে করছি। সময় দিন। ম্যাজিক দেখাব।”
লাল-হলুদ জনতা অবশ্য রবিবার সন্ধের যুবভারতী থেকেই আর্মান্দো ম্যাজিকের ‘ফার্স্ট-শো’ দেখতে চাইছে।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, সৌমিক, খাবরা, রবার্ট, সুবোধ, তুলুঙ্গা, লোবো (দীপঙ্কর), জোয়াকিম (অ্যালভিটো), সুয়োকা (মোগা), চিডি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.