|
এ বার ব্রহ্মাস্ত্র
প্রয়োগ করুক আনন্দ দিব্যেন্দু বড়ুয়া |
|
বছর চারেক আগেই দাবায় অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে একটা নিয়ম চালু হয়েছে। ‘জিরো টলারেন্স’। অর্থাৎ আরবিট্রেটর সরকারি ভাবে গেম শুরুর ঘোষণা করার পর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকেই বোর্ডে থাকতে হবে। একজন অনুপস্থিত থাকলে অপর খেলোয়াড়কে ওয়াকওভার দেওয়া হবে। চেন্নাইয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও নিয়মটা রয়েছে। তাও এ দিন দেখলাম গেম শুরু হওয়ার মাত্র তিন মিনিট আগে প্রথমে কার্লসেন পরে আনন্দ বোর্ডে এল। টিভি-তে দেখলাম গেমের পর দু’জনই জানাল ডোপ পরীক্ষার জন্যই পৌঁছতে দেরি হয়েছে।
গ্যারি কাসপারভ দাবায় ডোপিংয়ের ব্যাপারটা বিশ্বাস করেন না। কাসপারভের মতে দাবায় গেম সাধারণত তিন-চার ঘণ্টা চলে বলেই নিষিদ্ধ কোনও ড্রাগ নিলেও লাভ হয় না। নিষিদ্ধ ড্রাগের প্রভাব দীর্ঘ সময় থাকে না। কিংবদন্তি দাবাড়ুর কথায় যুক্তি থাকলেও এই পর্যায়ের টুর্নামেন্টে কড়াকড়িটা স্বাভাবিক। কিন্তু তিন মিনিটের মধ্যেও যদি দু’জন পৌঁছতে না পারত? তা হলে কী হত? নিয়ম অনুযায়ী কেউই পয়েন্ট পেত না। সে রকম অবশ্য কিছুই হয়নি এ দিন। গেমটা হল। কিন্তু মীমাংসা হল না। আগেই বলেছিলাম এই গেমটা ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেটাই হল। |
কার্লসেনের পিছনেই থেকে যাচ্ছেন আনন্দ। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ দাবায় সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: পিটিআই। |
খুব দ্রুত ড্র হয়ে গেল। মাত্র ৩৩ চালে। চলল সাকু্ল্যে ৭৫ মিনিট। টিভি-তে সাংবাদিক বৈঠকে দেখলাম ড্র হওয়ার পরও দু’জনেই খুশি। কার্লসেনের খুশি হওয়ার কারণ আন্দাজ করা শক্ত নয়। ড্র হলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে নরওয়ের চ্যালেঞ্জার। অষ্টম গেমের পর কার্লসেনের পয়েন্ট দাঁড়াল পাঁচ। আনন্দের তিন। আর দেড় পয়েন্ট পেলেই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যাবে ও। ২২ বছরের তরুণই তখন ছিনিয়ে নেবে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। আর বুধবার বিশ্রাম থাকায় আনন্দ চাইছিল দ্রুত ড্র করে নবম রাউন্ডের জন্য যতটা সম্ভব বেশি সময় পেতে। সেটা হওয়াতেই আনন্দও খুশি। অনেকে বলবেন এ ভাবে গেম ড্র হওয়ায় আনন্দের ফিরে আসার সুযোগ আরও কমে যাচ্ছে। আমার মতে মঙ্গলবারের ফল আনন্দের দিক থেকে দেখলে ঠিকই আছে। টুর্নামেন্টে দু’পয়েন্টে পিছিয়ে ও। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নবম গেমে এসপার-ওসপার হতেই হবে। তার জন্য ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে আনন্দকে। যার প্রস্তুতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
টুর্নামেন্ট যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে বৃহস্পতিবার ধুরন্ধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দুরন্ত লড়াই দেখার সম্ভাবনাই বেশি। কার্লসেন এখন আত্মবিশ্বাসে রীতিমতো ফুটছে। এ দিন যেমন সাদা ঘুঁটিতে ওপেনিংয়েই রাজার ঘরের বোড়ের চাল দিয়ে আনন্দের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল ও। সম্মোহন নয়, ভাবটা হল ‘কী কেমন দিলাম চালটা!’ বোঝাই যাচ্ছে ওর আত্মবিশ্বাস এখন কোন পর্যায়ে। তবে আনন্দও কি ছেড়ে কথা বলবে? মনে হয় না। তাই বৃহস্পতিবার রুদ্ধশ্বাস একটা লড়াই দেখার অপেক্ষাই করছি। |
পুরনো খবর: কার্লসেনকে যেন একটু বেশি সমীহ করছে আনন্দ |
|