সকাল থেকে অনেকেই আমায় প্রশ্ন করছিলেন, সাত নম্বর গেমে কী হতে পারে? পরপর দু’গেমে হারের ধাক্কা সামলে আর কি পাল্টা আঘাত হানতে পারবে আনন্দ? উত্তরে সবাইকে বলেছিলাম, মনে তো হচ্ছে, এই গেমটা ড্র হবে। আনন্দ অন্তত দু’টো হারের পরের গেমটাতেই ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
ঠিক সেটাই হল। সাদামাঠা ড্র।
অনেকে বলবেন সাদা ঘুঁটি নিয়ে আবার ড্র করায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আনন্দের লড়াইয়ে ফিরে আসার সুযোগ আরও নষ্ট হল। কিন্তু আমার মতে আনন্দের দিক থেকে এই স্ট্র্যাটেজিই স্বাভাবিক। কার্লসেনের ধারাবাহিকতা নষ্ট করা, টানা তিন ম্যাচ জেতা থেকে ওকে আটকাতে আনন্দের পক্ষে এ দিন ড্র খেলাটাই নিরাপদ ছিল। সপ্তম গেম অমীমাংসিত থাকায় কার্লসেন সেই দু’পয়েন্টেই (৪.৫-২.৫) এগিয়ে থাকল। এখন যা দাঁড়াল, বাকি পাঁচ গেমে আনন্দকে দু’বার হারাতেই হবে কার্লসেনকে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের, সেটা ঠিকই। তবু আমার ধারণা মঙ্গলবার আট নম্বর গেমটাও ড্র হতে পারে। আনন্দকে খুব সম্ভবত জেতার জন্য মরিয়া দেখা যাবে তার পরের দুটো গেমে। নয় আর দশ নম্বরে গেমে। |
ফের ড্রয়ের পথে এগোচ্ছেন আনন্দ এবং কার্লসেন। সোমবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই। |
শুধু স্ট্র্যাটেজির দিক থেকেই নয় আনন্দকে দেখে মনে হচ্ছে ও দারুণ চাপে রয়েছে। কার্লসেনকে একটু বেশিই সমীহ করতে শুরু করেছে। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এ দিন গেম শুরু হওয়ার আগে টিভি-তে দেখছিলাম প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ক্র্যামনিক একটা দারুণ কথা বলেছেন আনন্দ সমীহ করুক কার্লসেনকে কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।
আমি ক্র্যামনিকের সঙ্গে একমত। এখনও অবধি যে ভাবে আনন্দ-কার্লসেনের বিশ্বযুদ্ধ গড়িয়েছে তাতে কিন্তু আনন্দের চাপে থাকার ব্যাপারটা স্পষ্ট। শুধু বোর্ডেই নয়, বোর্ডের বাইরে ওর হাবভাবে, সাংবাদিক বৈঠকে সেটা ফুটে উঠেছে। বছর তিনেক আগে কার্লসেনের সঙ্গে একটা ম্যাচের পর আনন্দ ওর খুব প্রশংসা করেছিল। বলেছিল কার্লসেনের ‘স্টাইল অব প্লে’ দেখে ও মুগ্ধ। সেই প্রতিদ্বন্দ্বীকেই চ্যালেঞ্জার হিসেবে সামনে পেয়ে বোধহয় একটু অতিরিক্ত সমীহ করছে আনন্দ। যেটা ওকে বাড়তি চাপে ফেলে দিচ্ছে। বাকি পাঁচ গেমে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই বাড়তি সমীহের ব্যাপারটা আনন্দকে ওর মনের থেকে তাড়াতেই হবে।
ইন্টারনেটে দেখলাম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগেই বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ‘কার্লসেন স্রেফ উড়িয়ে দেবে আনন্দকে’ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। অনেকে হয়তো বলবেন, এখন কার্লসেন এগিয়ে থাকায় যতটা আত্মবিশ্বাসী তাতে ১২ গেমের আগেই ৬.৫ পয়েন্টের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে অনবদ্য রেকর্ডের চেষ্টা করতেই পারে। আমার সেটা মনে হয় না। কার্লসেন তাড়াহুড়ো করবে না। এ দিনও ওকে খুব স্বচ্ছন্দ মনে হল। তা ছাড়া তাড়াহুড়ো করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। এই ফর্মটা ধরে রেখে ১০ গেমের জায়গায় ১২ গেমেও যদি ও জিততে পারে তাতেই বা ক্ষতি কোথায়!
তবে কার্লসেনকে সেই সুযোগটা আনন্দ দেয়, নাকি টুর্নামেন্টে পরের রাউন্ডগুলোতে নাটকীয় কোনও মোড় অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার। |