ম্যাগনাস কার্লসেনের অস্ত্রাগারে কি নতুন কোনও তূণ আছে? যার সঙ্গে দাবার সরাসরি কোনও সম্পর্ক না থাকলেও তার ধাক্কায় বোর্ডের উল্টো দিকে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়াতে পারছে না, এমনকী পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দও না!
দাবা বিশ্বে জোর গুজব, কার্লসেনের এই নতুন অস্ত্র আর কিছু না, হিপনোটিজম বা সম্মোহনী শক্তি। যার প্রয়োগে বিপক্ষকে ইচ্ছেমতো চাল দিতে বাধ্য করে গেম মুঠোয় আনা যায়। যা থেকে বাঁচার নাকি একমাত্র উপায় দাবাড়ুর দৃষ্টি যে ভাবেই হোক এড়িয়ে যাওয়া।
কার্লসেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল বছর দুয়েক আগে। যখন অন্যতম কিংবদন্তি রুশ দাবাড়ু ভিক্টর করশনয় অভিযোগ করেছিলেন, কার্লসেনের সাফল্যের পিছনে রয়েছে তাঁর সম্মোহনী শক্তি।
রাশিয়ার সুজদালে ২০১১ ভেটারেন্স দাবায় এক ওয়েবসাইটকে করশনয় বলেন, “কার্লসেন এত কেন সফল আমার মাথায় ঢুকছে না। ওর তো দাবার বিদ্যে তেমন নেই। একটা কারণ অবশ্য আমি আন্দাজ করতে পারি। এর সঙ্গে দাবার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। দাবা বিশ্বে খুব কম প্লেয়ারই আছে যাদের অসাধারণ সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। আমার মতে এই তালিকায় তিন জন হল মিখাইল তাল (সোভিয়েত-লাটভিয়ান প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন), হেনরিক মেকিং (ব্রাজিলীয় গ্র্যান্ডমাস্টার) আর ম্যাগনাস কার্লসেন।” |
মাস দু’য়েক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিঙ্কফিল্ড চেস কাপে কালো সানগ্লাসে চোখ ঢেকে টুর্নামেন্টে নামেন সে দেশেরই দাবাড়ু হিকারু নাকামুরা। সেই ম্যাচটিতে নাকামুরার বিপক্ষ প্লেয়ারের নামও ছিল ম্যাগনাস কার্লসেন।
দাবার দুনিয়ায় হিপনোটিজমের অভিযোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। ১৯৫৯ ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে কিংবদন্তি মিখাইল তালের ‘সম্মোহনী দৃষ্টি’ থেকে বাঁচতে প্রথম রিফ্লেক্টিভ সানগ্লাস ব্যবহার করেছিলেন হাঙ্গারির পল বেঙ্কো। ১৯৭৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও আনাতলি করপভের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে করশনয় গেম চলাকালীন কালো চশমায় চোখ ঢেকে রেখেছিলেন। করশনয় শিবিরের অভিযোগ ছিল, করপভের টিমের অন্যতম সদস্য ড. জুখের আসলে একজন নামকরা সম্মোহনবিদ।
সত্যিই কি সম্মোহন শক্তি প্রয়োগ করে আনন্দের মতো প্রতিপক্ষকে ঘোল খাইয়ে দেওয়া যায়? গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া বলছেন, “সম্মোহন করা যায় কি না জানি না। আমার সে রকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে দাবা জেন্টলম্যানস গেম হলেও অনেকে বিপক্ষের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেন। সেটা বিপক্ষের দিকে কটমট করে বা আগুনে দৃষ্টি দিয়েও হতে পারে বা টেবলের তলায় পা দিয়ে বার বার আঘাত করেও। গ্যারি কাসপারভ যেমন গেম চলার সময় গটগট করে হাঁটতেন। নিজে কতটা আত্মবিশ্বাসী সেটা বুঝিয়ে বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করতেন। অনেকে তাই মনঃসংযোগে এ সব আঘাত আটকাতে কালো চশমা বা টুপি পরে থাকে।”
চেন্নাইয়েও কি এ রকম কিছু ঘটেছে? ২-৪ পয়েন্টে পিছিয়ে যাওয়া আনন্দ শিবিরের তরফে সরকারি ভাবে কোনও কিছুই বলা হয়নি। আর আনন্দকে যিনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, সেই দিব্যেন্দু বলছিলেন, “সে রকম পরিস্থিতি হলে আনন্দ খুব ভাল করে জানে কী করতে হবে।”
কার্লসেনের সত্যিই সম্মোহনী শক্তি আছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। তবে একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। নরওয়ের চ্যালেঞ্জার গত কয়েক বছরেই জনপ্রিয়তার শিখরে উঠে এসেছেন। আর দাবার তরুণ প্রজন্ম তাঁকে যে ভাবে অন্ধের মতো অনুসরণ করে তার পিছনে কার্লসেনের স্টাইল ও ক্যারিশমার ‘সম্মোহন’ কিছু কম নয়।
|