|
|
|
|
ভাজ্জি বলল, তুসসি মত যাও পাজি সচিন-ঘনিষ্ঠ হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন মুম্বইয়ের মেগা পার্টিতে। সোমবার রাতের
সেই অভিজ্ঞতা আনন্দবাজারে তুলে ধরলেন সিএবি-র প্রাক্তন যুগ্মসচিব সমর পাল। |
...আশা ভোঁসলে চান না, সচিন তেন্ডুলকর ক্রিকেটটা একেবারে ছেড়ে দিক।
আমির খান প্রশ্ন করছেন, কেন ক্রিকেটটা এখনই ছেড়ে দিলে?
ক্রিকেট কিংবদন্তিদের কথা তো আমরা এই ক’দিনে প্রচুর শুনেছি। অন্য জগতের মানুষদের মনেও যে এত সচিন-বিরহ, কে জানত? সোমবার রাতে সচিনের দেওয়া ঝাঁ-চকচকে বিদায়ী পার্টিতে আশাজি বললেন, “সচিন ক্রিকেটে থাকবে না, ভাবতেই পারছি না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না থাকুক, চ্যারিটি-ক্রিকেটে খেলুক না। তাতে সমাজেরও ভাল হবে, আমরাও ওর খেলা দেখতে পাব।” আশাজির প্রস্তাবটা যে সবার বেশ পছন্দ, তা হাততালির বহর দেখেই বোঝা গেল। মুম্বইয়ের অদূরে আন্ধেরি ইস্টে ওয়াটারস্টোন ক্লাবে সচিন তেন্ডুলকরের ব্যক্তিগত বিদায়ী পার্টিতে তখন তারকাদের ঔজ্জ্বল্যের ছটায় চোখ ধাঁধানোর উপক্রম।
অমিতাভ বচ্চনের মুখে সচিনের জন্য সারা দুনিয়ায় গর্বিত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। বলছিলেন, “বিদেশে গিয়ে যখন বলি, আমরা সচিন তেন্ডুলকরের দেশের লোক, তখন আর কারও বুঝতে অসুবিধা হয় না।” আমির খানের বক্তব্য, “শেষ ম্যাচেই তো প্রমাণ করে দিলে, এখনও খেলে যেতে পারতে। খেললে না কেন, সচিন?” |
পার্টিতে বলিউড তারারা |
|
|
অমিতাভ বচ্চন ও সস্ত্রীক আমির খান। |
|
আইপিএলে তাঁর দলের সম্পদ সম্পর্কে মুকেশ অম্বানীর মন্তব্য, “আমি সৌভাগ্যবান যে, আমার টিমে সচিন আছে। আইপিএল খেলবে না তো কী হয়েছে, ওকে আমার দলের মেন্টর করে রেখে দেব। সচিনকে সহজে ছাড়ছি না।” দাদা অজিত ও সৌরভও কিছু বলুক, এমন দাবিও উঠেছিল। সময়াভাবে নাকি তার ব্যবস্থা করা যায়নি।
মুম্বইয়ের হু’জ হু থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিরা চারপাশে থিকথিক করছেন। এক দিকে অমিতাভ বচ্চন তো অন্য দিকে সুনীল গাওস্কর। এক দিকে আমির খান তো উল্টো দিকে কর্ণ জোহর। রাজ ঠাকরে ডান দিকে তো শরদ পওয়ার, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণরা বাঁ দিকে। সচিনের দুনিয়া যে কত বড়, এই পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়ে আরও একবার বুঝতে পারলাম।
শুধু ক্রিকেটের বিদায়বেলায় ধন্যবাদ জানানো উদ্দেশ্য নয়, ভারতরত্ন হওয়ার আনন্দও পার্টিতে মিলেমিশে একাকার। প্রত্যেক আমন্ত্রিতকে জড়িয়ে ধরে অভ্যর্থনা জানানো থেকে শুরু করে মাঝরাতে মুম্বইয়ের তামাম ক্রিকেট সতীর্থকে পাশে ডেকে কেক কাটা ও শ্যাম্পেনের ফোয়ারা ছোটানোর মধ্যে সচিনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অসাধারণ দক্ষতার পরিচয়ও পাওয়া গেল। ওর এই গুণটার কথা সত্যিই এত দিন জানা ছিল না। আমাদের ইস্টবেঙ্গল মাঠের চেয়েও বড়, বিলাসবহুল ক্লাবচত্বরে দু’টি ব্যাঙ্কোয়েট হলে সচিনের আয়োজন। এক দিকে আনন্দ, হই-হুল্লোড়, নাচ-গান, অন্য দিকে খানা-পিনা। ভোর চারটে পর্যন্ত চলল তুমুল হইচই। |
পার্টিতে টিম ইন্ডিয়ার সতীর্থরা |
|
|
|
ধোনি-যুবরাজ-রোহিত-সহবাগ। |
|
ক্রিকেট দুনিয়ার মানুষেরা তো সচিনের বিদায়ে শোকার্ত। হরভজন যেমন নিজ ভাষায় বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলল, “তুসসি মত যাও পাজি”। যুবরাজ নিজের মোবাইলে একটা কবিতা লিখে এনেছিল। সেটা পড়ে শোনাতে শোনাতে ওরও চোখের কোণে জল। পরিবেশ হাল্কা করতেই হয়তো মজা করলেন গাওস্কর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, কমেডিয়ান বিক্রম শাঠে তাঁকে মাঝখানে বলতে ডেকেছিলেন। গাওস্কর বললেন, “আমি তো চিরকাল ওপেন করে এসেছি। আমাকে আবার মিডল অর্ডারে ডাকা কেন?” তার পর বললেন, “ভারতরত্ন কেন, সচিন তো বিশ্বরত্ন।” ধোনি মাঠ ও মাঠের বাইরে সচিনকে নিয়ে তার নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনাল। কয়েকটা যেমন মজার, তেমন কয়েকটা বেশ চমকে দেওয়ার মতোও। দর্শকদের মধ্যে তখন বেঙ্গসরকর, শাস্ত্রী, কুম্বলে, দ্রাবিড়, শ্রীনাথ, শ্রীকান্ত, আজহার, সৌরভ, সহবাগ, গম্ভীর, বোরডে, ওয়াডেকর, পাটিলরা। তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিনে সচিনের ক্রিকেট জীবনের অজস্র মুহূর্তের ছবি ভেসে উঠছে।
সবার শেষে সচিন। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, “অনেকেই বলছেন আমি আরও কিছু দিন খেলতে পারতাম। যখন টেনিস এলবো হয়েছিল, হাতে ব্যাট তুলতে পারতাম না, তখন প্রবল মনের জোরে মাঠে ফিরেছিলাম। শরীর, মন দুটোই তখন সমান ভাবে সাহায্য করেছিল। এখন বুঝছি, আগের সেই জোরটা আর পাচ্ছি না। শরীর-মন একসঙ্গে অনুমতি দিচ্ছে না।” তার পরই অমল মুজুমদার থেকে শুরু করে সমীর দিঘে পর্যন্ত সমস্ত সতীর্থকে নিয়ে কেক কাটা ও শ্যাম্পেনের ফোয়ারা। এই তারকার মেলায় যে ওদেরও সামিল করার কথা মনে রয়েছে সচিনের, তা দেখে তো আমরা সকলে অবাক। |
নিজের দেওয়া পার্টিতে সস্ত্রীক সচিন। |
ওই সময় লাজুক স্বভাবের প্রজ্ঞান ওঝা অমিতাভ বচ্চনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি ওঁর ফ্যান? প্রজ্ঞান হেসে বলল, “হ্যাঁ, দাদা। ওঁর সঙ্গে ছবি তোলার খুব ইচ্ছা। কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।” একটু আগেই বচ্চনসাহেবের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাই প্রজ্ঞানকে ওঁর কাছে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছার কথাটা জানালাম। উনি প্রজ্ঞানকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আরে আমিই তোমার সঙ্গে ছবি তুলতে পারলে গর্ববোধ করব। প্রতিটা ম্যাচে তুমি পাঁচটা করে উইকেট নিচ্ছ। তুমি তো গ্রেট।” প্রজ্ঞান ক্যামেরাটা আমার হাতেই ধরিয়ে দিল। ছবিটা পেয়ে তো ও আনন্দে আত্মহারা।
পার্টিতে এমন একটা কাউন্টার ছিল, যেখানে কেউ কারও সঙ্গে ছবি তুললে, সঙ্গে সঙ্গে তার প্রিন্ট পাওয়া যাচ্ছিল। সচিন, অঞ্জলি ও বচ্চন সাহেবের সঙ্গে একই ফ্রেমে থাকার একটা সুযোগ জুটে গেল আমারও। সচিন কথা দিয়েছে, বিদেশে ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসে ছবিটা বড় প্রিন্ট করে আমাকে দেবে। এই ঝলমলে পার্টির স্মৃতি হৃদয়ে নিয়ে সেই দিনটার অপেক্ষায় রইলাম। |
ছবি: পিটিআই।
|
পুরনো খবর: ওর বিদায়ী বক্তৃতা শুনে আমিও নড়ে গিয়েছিলাম, বললেন আজহারউদ্দিন |
এই সংক্রান্ত খবর... |
• সচিনকে ভারতরত্ন, আগে না বলেছিল কেন্দ্রই |
|
|
|
|
|