সচিনকে ভারতরত্ন, আগে না বলেছিল কেন্দ্রই
চিন তেন্ডুলকরকে ভারতরত্ন দেওয়া নিয়ে বিতর্কে ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে কংগ্রেসের অন্দরে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দু’বছর আগেই সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার যে প্রস্তাব স্বয়ং কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন দিয়েছিলেন, তা খারিজ করে দিয়েছিল সচিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ বারে দেশ জুড়ে সচিন-আবেগ দেখার পরে সরকার আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি। সরকারের শীর্ষ স্তরে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অবসরের দিনই সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মনমোহন সিংহের সরকার। বিষয়টি নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সরব ছিলেন সমালোচক এবং বিরোধীরা। এ বার প্রশ্ন উঠে গেল, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটপর্ব চলাকালীন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার কি নির্বাচনবিধি ভেঙেছে?
সচিনকে কেন এই খেতাব দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও বিরোধীদের অভিযোগ, এই ক্রিকেট কিংবদন্তীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এখন এবং আগামিদিনে ভোটে ফায়দা তুলতে সক্রিয় কংগ্রেস। এই সূত্র ধরেই উঠল নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগও। তথ্য অধিকার-কর্মী দেবাশিস ভট্টাচার্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন, সচিন কংগ্রেসের মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ। গোটা দেশের মতো যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন চলছে, সেই দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং মিজোরামেও সচিনের কোটি কোটি ভক্ত রয়েছেন। ভারতরত্নের সিদ্ধান্তে সেই ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে, সচিন প্রশ্নে তারা উচিত সিদ্ধান্তই নিয়েছে। দলের নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, সচিনকে নিয়ে দেশ জুড়ে আবেগে গা ভাসিয়ে নির্বাচনী ফায়দা যদি তোলা যায়, তাতে ক্ষতি কী? মুখে অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে রাজি নয় তাঁরা। সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল বলেন, “সচিনের যোগ্যতার নিরিখেই ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। সচিন যে ভারতের রত্ন, এ নিয়ে ভারত কেন, বিশ্বের কারও মনেই কোনও সন্দেহ নেই। এর পিছনে রাজনীতি দেখাটা বোকামি।”
কিন্তু দু’বছর আগে এই সরকারের অন্দরেই তো এ নিয়ে আপত্তি উঠেছিল! কী হয়েছিল তখন?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, দু’বছর আগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণমন্ত্রী অজয় মাকেন সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধ ছিল, সচিনকে যাতে ভারতরত্ন দেওয়া যায়, তার জন্য খেলা বিষয়টিকেও এই পুরস্কারের আওতায় আনা হোক। কারণ এত দিন খেলার জন্য ভারতরত্ন দেওয়া হত না। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই।
কিন্তু কেন ওই প্রস্তাব তখন খারিজ করা হয়েছিল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, খেলার বিষয়টিকে ভারতরত্নের তালিকায় ঢোকালে শিল্প-বাণিজ্য, সমাজ সেবার মতো বিষয়েও ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি উঠবে। তেন্ডুলকরকে ভারতরত্ন দেওয়া নিয়েও আপত্তি তুলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তখন বলা হয়েছিল, “তেন্ডুলকর অবশ্যই সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া যোগ্য। কিন্তু এই শ্রেণিতে আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।” এই প্রসঙ্গে হকিতে ধ্যান চাঁদ, দাবায় বিশ্বনাথন আনন্দ, অ্যাথলেটিক্সে পি টি উষা-র মতো অনেকের কথা বলা হয়েছিল তখন। বস্তুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে দিন যে আশঙ্কা করেছিল, এখন তা-ই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ধ্যান চাঁদকে কেন ভারতরত্ন দেওয়া হল না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকে। এ দিনই মুজফ্ফরপুরের স্থানীয় আদালতে সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রশ্ন হল, খেলার বিষয়ে ভারতরত্ন না দেওয়া এবং সচিনকেই এই সম্মান না দেওয়া নিয়ে দু’বছর আগের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাতারাতি খারিজ হয়ে গেল কী করে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ২০১১ সালে ক্রীড়ামন্ত্রীর চিঠি পেয়ে প্রশাসনিক স্তরে তার জবাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছে শীর্ষ রাজনৈতিক স্তরে। আমলাদের থেকে কোনও মতামতই জানতে চাওয়া হয়নি। তা হলে কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে? সেটাও জানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের কোন স্তরে নেওয়া হয়েছে, কোন মন্ত্রী-আমলা সেই ফাইলে সই করেছেন, তা-ও তথ্যের অধিকার আইনে জানতে চাওয়া হয়েছে। সচিনকে ভারতরত্ন দিয়ে কংগ্রেস ভবিষ্যতে ফায়দা তুলবে, না কি আরও অস্বস্তিতে পড়বে, সেটাই দেখার।

পুরনো খবর:
এই সংক্রান্ত খবর...


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.