এক রত্নের ঘোষণা ফের উস্কে দিল একাধিক নাম। এবং তাই নিয়ে শুরু হয়ে গেল পুরোদস্তুর আমরা-ওরার রাজনৈতিক তরজা।
পরোক্ষে হলেও তরজার ফিতে কাটা হয়ে গিয়েছে গত শনিবারই, যে দিন সিএনআর রাও এবং সচিন তেন্ডুলকরকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। আর এই ঘোষণার পরেই বিজেপি ফের সরব হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাম সামনে এনে।
আজ রাজনাথ সিংহ, রবিশঙ্কর প্রসাদদের সেই দাবিকে সমর্থন করলেন নীতীশ কুমার। সদ্য এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন অবস্থানে কিছুটা হলেও চমকে উঠেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুরু হয়ে গিয়েছে কাটাছেঁড়া, কেন বাজপেয়ীর পক্ষে ভোট দিলেন নীতীশ? বললেন, বাজপেয়ীজির ভারতরত্ন পাওয়াই উচিত?
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আরও একটা ভোট পেয়েছেন উল্টো দিক থেকে। এই ভোটটি ফারুক আবদুল্লার। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রীও।
নীতীশের কথার ময়নাতদন্তে নেমে রাজনীতির লোকজনেরা বলছেন, এর পিছনেও কারণ সেই নরেন্দ্র মোদী। ২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার পরে মোদীকে সর্বসমক্ষে রাজধর্ম পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। রাজনীতির লোকজনেরা বলছেন, সেই বাজপেয়ীকেই এখন সামনে রেখে আরও এক বার নিজের মোদী-বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট করে দিলেন নীতীশ।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি অবশ্য বলেছেন, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে বাজপেয়ীজি রাজধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরাতে না পেরে নিজেই সেই ধর্ম পালন করতে পারেননি বলে পরে আক্ষেপও করেছেন। তাই তাঁর (ভারতরত্ন পাওয়ার) বিষয়টি ত্রিশঙ্কুর মতো ঝুলছে।” সচিনকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণার পরে বিজেপির অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, এটা কংগ্রেসের রাজনৈতিক চাল। কিন্তু সচিনকে নিয়ে এখনও মানুষের মধ্যে আবেগ এতটাই যে, প্রকাশ্যে এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তাঁদের কেউই।
সচিনকে নিয়ে অবশ্য এক জন প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জেডিইউ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি। নীতীশের দলের এই নেতা বলেছেন, “সচিন ভাল খেলেছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু বিনে পয়সায় তো খেলেননি! তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া হবে কেন?” তিনি তুলে এনেছেন প্রয়াত হকি তারকা ধ্যানচাঁদের নাম। সচিন নিয়ে শিবানন্দের এমন সোজা সাপ্টা বিবৃতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি নীতীশও। “এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত” বলে সেই মন্তব্য থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন তিনি।
নাম অবশ্য নীতীশের ঝুলিতেও কম নেই। বাজপেয়ী ছাড়াও তিনি তুলেছেন রামমনোহর লোহিয়া এবং কর্পূরি ঠাকুরের নাম। লোহিয়ার ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছেন, “এত বড় সমাজবাদী নেতাকে আগেই ভারতরত্ন দেওয়া উচিত ছিল।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতরত্ন বা পদ্ম পুরস্কার নিয়ে এমন আমরা-ওরা নতুন কিছু নয়। পদ্ম সম্মান সম্পর্কে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা নিজেদের লোককে এই পুরস্কার পাইয়ে দেয়। ভারতরত্নও সেই অভিযোগ থেকে রেহাই পায়নি। নব্বইয়ের দশকে সর্দার বল্লভভাই পটেল এবং রাজীব গাঁধীকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া কথা ঘোষণা করে বিতর্কের মুখে পড়েছিল নরসিংহ রাও সরকার। তার পরের বছর মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়। তখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেও এই সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তীব্র বিতর্কের জেরে তা স্থগিত হয়ে যায়। তুলনায় এনডিএ জমানা ছিল অনেকটাই বিতর্ক মুক্ত। জয়প্রকাশ নারায়ণ, গোপীনাথ বরদলৈ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, অমর্ত্য সেন, বিসমিল্লা খাঁ এবং লতা মঙ্গেশকরকে এই সময়েই ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়।
এখন সেই এনডিএ জমানার প্রধান মুখকে এই সম্মান দেওয়ার দাবি ওঠায় নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপির এই দাবি নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিতের পাল্টা প্রশ্ন, গত দশ বছরে অটলবিহারী বাজপেয়ী ছাড়া আর কাকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তুলেছে বিজেপি? কেন, দেশে কি রত্ন কম পড়েছে?
|