|
|
|
|
মুলায়মের ইংরেজি-বিরোধের বিরুদ্ধে মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোবলয়ে তাঁদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ব। তার উপর মায়াবতী নিরন্তর সরব উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে। লোকসভা ভোটের মুখে এই জোড়া চাপ মোটেই স্বস্তিদায়ক নয় মুলায়ম সিংহের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে নজর অন্য দিকে ঘোরাতে কিছুটা মরিয়া হয়েই ইংরেজি-বিরোধিতাকে ফের সামনে তুলে এনেছেন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো। নতুন বিতর্ক উস্কে দিতে তাঁর দাবি, সংসদে ইংরেজি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হিন্দিরই প্রচার করতে হবে সেখানে। অন্যান্য দল স্পষ্ট করে কিছু জানানোর আগেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁরা ঠিক এর বিপরীত মেরুতে রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মাতৃভাষাকে ভালবাসার অর্থ অন্য ভাষার বিরোধিতা করা নয়।
মুলায়মের মুখে ইংরেজি-হঠাও দাবি নতুন কিছু নয়। অতীতে এই ভাষার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুলেছিলেন তিনি। এ বারে সংসদে তার ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা চান তিনি। গোবলয়ে ইংরেজির বিরোধিতা করে হিন্দিকে নিয়ে ভাষার-রাজনীতি করা কতটা উচিত বা অনুচিত, তা নিয়ে কংগ্রেস তো বটেই ধন্ধে রয়েছে বিজেপি-ও। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেখা গেল, অন্য দল কী বলল বা বলল না, তার পরোয়া না করে মমতা আজ সকালেই কার্যত মুলায়মের অবস্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা জেহাদ ঘোষণা করে দিলেন।
মুলায়মের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেও যে সংশয় ছিল না তা নয়। কারণ, ক’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্লোগান দিয়েছিলেন ‘মাতৃভাষা ভালবাসা’। কিন্তু মুলায়মের ওই বক্তব্য প্রচারে আসার পর দলের নেতাদের সংশয় দূর করতে খোদ মমতাই জানিয়ে দেন, মাতৃভাষাকে ভালবাসার অর্থ এই নয় যে, অন্য ভাষাকে ঘৃণা করতে হবে। ডেরেক ও’ব্রায়েন দলের সংখ্যালঘু নেতা। ইংরেজি ভাষার পক্ষে গোড়া থেকেই সওয়াল করে এসেছেন তিনি। তাঁকে মমতা জানিয়ে দেন, মুলায়ম যা-ই বলুন, তৃণমূল কখনওই ইংরেজি ভাষার বিরোধিতা করবে না। সেই অনুয়ায়ী আজ সকালেই ডেরেক তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন টুইটারে। তাঁর বক্তব্য, মুলায়ম সিংহের ইংরেজি-বিরোধী মন্তব্য বিরক্তিকর। মাতৃভাষা-সহ সব ভাষাকেই আমরা ভালোবাসি। চাকরি, আধুনিক অর্থনীতির জন্য ইংরেজি যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। সিপিএম পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়ে ইংরেজি পঠন-পাঠন বন্ধ করে দেওয়ায় এমনিতেই কয়েক দশক ধরে আমাদের খেসারত দিতে হয়েছে। রাজনীতিতে ইংরেজি-বিরোধী মানসিকতা যথেষ্টই উদ্বেগের। এটা নতুন ভারতের শক্তি এবং আজকের যুবসমাজের থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক।
মুলায়মের দাবি নিয়ে তৃণমূল তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া জানালেও বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। স্বাধীনতার পর যখন ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ইংরেজি ভাষায় নাম লেখা ক্যামেরা, কলম বর্জন করা হত। ইংরাজি ভাষার স্কুলগুলিও বন্ধ করার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনসঙ্ঘের সময় থেকে গেরুয়া শিবির হিন্দি ভাষার প্রসার ঘটাতে তৎপর হলেও ইংরেজির বিরোধিতা করেনি কখনও। বরং লোহিয়াপন্ধী নেতারা যখন বিজেপি-কে ইংরেজি-বিরোধিতা করার কথা বলতেন, সেই সময়ও লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারা বারবার বলে এসেছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের থেকে যে শিক্ষা তাঁরা পেয়েছেন, তাতে হিন্দি ভাষাকে তুলে ধরা হলেও ইংরেজির বিরোধিতার কোনও প্রয়োজন নেই। তখন থেকে এটাই বিজেপির অবস্থান হয়ে রয়েছে।
তবু ভোটের আগে গোবলয়ের নাড়ির গতি বুঝে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের মতো নেতারাও এখন ইংরেজির বিরুদ্ধে সওয়াল শুরু করেছেন। সম্প্রতি রাজনাথই মন্তব্য করেছেন, “ইংরেজি ভারতের অনেক ক্ষতি করছে। আমরা আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছি।” সভাপতির মুখ থেকে এই মন্তব্য আসায় আজ বিজেপি-ও মুলায়মের বক্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বিজেপি এখন তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ওঠা নতুন অভিযোগ সামলাতে ব্যস্ত। ইংরেজির বিরোধিতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করে নতুন বিতর্ক বাড়াতে চায়নি দল।
গোবলয়ের রাজনীতি নিয়ে ধন্ধের কারণে কংগ্রেসও এআইসিসি মঞ্চ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রাখেনি। তবে ইংরেজি ভাষার পক্ষে বরাবর সওয়াল করে এসেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী তারুর। তিনি বলেছেন, “একুশ শতকে সিংহভাগ ভারতীয়ই চান, তাঁদের সন্তান ইংরেজিতে শিক্ষিত হয়ে উঠুক। মুলায়মের নিজের ছেলেও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন।” কংগ্রেসের আর এক মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রতি বার সংসদ শুরুর আগে মুলায়ম এ ধরনের কোনও মন্তব্য করেন। কখনও সরব হন ইংরেজির বিরুদ্ধে, কখনও বলেন ভারতকে আক্রমণ করছে চিন। এ সবই পুরনো দিনের বিতর্ক। দুনিয়া অনেক বদলেছে। এই ধরনের ভাবনা অন্যদের উপর কেন চাপিয়ে দেওয়া হবে?”
মজার বিষয়, মুলায়ম ইংরেজি- বিরোধিতার কথা বলে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন, তাঁর মুখ্যমন্ত্রী-পুত্র অখিলেশ কিন্তু ইংরাজিতেই একের পর এক টুইট করে যাচ্ছেন সাবলীল ভাবে। সাম্প্রতিক টুইটটি করেছেন দু’দিন আগেই। ভারতরত্ন সম্মান ঘোষণার পর সাধুবাদ জানিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকরকে।
|
|
|
|
|
|