অমিতাভ বচ্চনের আবেগঘন বক্তৃতা।
ক্রিকেট ও বলিউডের মিশে যাওয়া। সস্ত্রীক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ব্রায়ান লারা, সুনীল গাওস্কর, দিলীপ বেঙ্গসরকর, রবি শাস্ত্রী, অনিল কুম্বলেদের সঙ্গে পাশাপাশি আমির খান, আশা ভোঁসলে।
সচিন তেন্ডুলকরের নিজের হাতে কেক কাটা। শ্যাম্পেনস্নান। গানবাজনা। ককটেল। পরের পর ক্রিকেট-ঈশ্বরের ফোটোসেশন। এবং সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে ফ্রেম করে দেওয়া।
এক মহানায়কের নৈশপার্টিকে জমজমাট করে তুলতে যে যে মশলার প্রয়োজন হয়, উপরের উপাদানে চোখ রাখলে আধিক্যই মনে হবে। কিন্তু আদতে বোধহয় এগুলো একটাও নয়।
সোমবার সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়বেলার নৈশপার্টিতে যদি কোথাও আলাদা মাহাত্ম্য পেয়ে থাকে, তা হলে সম্ভবত পেল এক হায়দরাবাদির উপস্থিতিতে।
তিনিমহম্মদ আজহারউদ্দিন! |
মুম্বইকরের বিদায়ী ডিনারে যে তাঁর অত্যন্ত কাছের কিছু বন্ধুবান্ধবের নিমন্ত্রণ থাকবে, সেটা জানা ছিল। জানা ছিল যে, এক থেকে দেড়শো জন বন্ধুকে নিয়ে সোমবার রাতে যে পার্টিটা হবে, সেটার ঔজ্বল্য সচিনের ক্রিকেট-কেরিয়ারের মতোই রাজসিক দেখাবে। শুধু বোঝা যায়নি, সেখানে এক পুরনো অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর অতীতের ‘শৈত্য’-ও একই সঙ্গে অনেকটা কেটে যাবে!
আজহারের ঘনিষ্ঠমহলের কেউ কেউ এ দিনও বলছিলেন যে, গড়াপেটা-কলঙ্কের কোপে যখন প্রায় ছিন্নভিন্ন আজহারের জীবন, তখন সচিন যেমন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কথাবার্তা বলেননি। ঠিক তেমনই সমর্থনসূচক কোনও শব্দ ব্যবহার করেছেন বলেও মনে করা যায় না। কিন্তু এ দিন সন্ধেয় যে আজহারকে পাওয়া গেল, তাঁকে দেখে মনে হল না অতীতের অভিমান সে ভাবে আর আছে বলে। প্রসঙ্গ তোলা হলে যদিও এড়িয়ে গেলেন এই বলে যে, “আজ থাক না। সচিন আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে। যাচ্ছি। আজ ও সব প্রসঙ্গে কথা বলার কোনও মানে হয় না।’’ কিন্তু পরমুহূর্তে এটাও মনে করিয়ে দিলেন যে, সচিনের বিদায়ী-ভাষণে তিনি মুগ্ধ। ক্রিকেট থেকে সচিনের বিদায়ে তিনি আজ দুঃখী। চব্বিশ বছরের ক্রিকেটজীবনে সচিনের কয়েকটা মহাকাব্য দেখার পর তিনি গর্বিত।
“সচিন বলতে গেলে ঈশ্বরদত্ত এক প্রতিভা। আল্লাহ্ ক্রিকেটের সমস্ত ব্যাকরণই ওর মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন,” সোমবার সন্ধেয় বলছিলেন আজহার। একটু থেমে আবার বললেন, “সেই সচিনের ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়াটা দুঃখ দেয়। কী করা যাবে। সবার জীবনেই এই দিনটা এক না এক সময় আসে। ওরও এল।” যখন কথাগুলো বলছিলেন তখনও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক পার্টিতে ঢোকেননি। ঢুকলেন কিছুক্ষণ পর। রাত দশটার পরপর। যার কিছু পরে নৈশপার্টির মেজাজ আরও রাজকীয় করে দিলেন অমিতাভ বচ্চন। সচিনকে নিয়ে মর্মস্পর্শী বক্তৃতা দিয়ে। আমির খানও বললেন সচিনকে নিয়ে। অমিতাভ বলছিলেন, “সচিনের জন্যই আমরা বিদেশে গর্ববোধ করি ভারতবাসী হিসেবে।” আশা ভোঁসলে বলে দিলেন, “ক্রিকেট ছাড়া সচিন ভাবা যায় না।” সুনীল গাওস্কররের মন্তব্য আরও রোমাঞ্চকর“সচিন ভারতরত্ন নয়। বিশ্বরত্ন।” |
১৮ নভেম্বর ২০১৩। পার্টিতে ঢোকার পথে। ছবি: দেবাশিষ সেন। |
অন্য দিকে আজহারের আবার আজ মনে পড়ছে, হিরো কাপ সেমিফাইনাল। মনে পড়ছে, ঐতিহাসিক কেপটাউন টেস্টে দু’ঘণ্টায় দু’শো রানের সেই অবিশ্বাস্য পার্টনারশিপ। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলছিলেন, “এই ঘটনাগুলোর জন্য নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হয়। আর ওয়াংখেড়েতে ও যে বক্তৃতাটা দিল, সেটা আমাকে নড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। ভাবা যায় যে, কথা বলার সময় একবারও আবেগকে ঠেলে বেরোতে দিল না! সচিনের এটাই সবচেয়ে বড় গুণ।”
এক সময়ের সতীর্থ হওয়া ছাড়াও সচিন-আজহারের মধ্যে আরও একটা মিল আছে। দু’জনেই সাংসদ। আজহার লোকসভার। সচিন রাজ্যসভার। তা হলে সচিনকে কি সরাসরি রাজনীতিতে নামার অনুরোধ করবেন এ বার? আজহারকে একটু ডিফেন্সিভ দেখায় যখন বলেন, “ও তো সদ্য প্রাক্তন। একটু সময় দিন। অবসরের পরে ও কী করবে, ওকেই ভাবতে দিন না। আমাদের ব্যস্ত হওয়ার কারণ নেই।”
তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মহম্মদ আজহারউদ্দিনও একটা জিনিস মনে করেন। লিটল মাস্টার অবসর-পরবর্তী জীবনে যা-ই করুন, সেটা তাঁর ক্রিকেটজীবনের মতোই রাজসিক হবে। ঠিক ছাড়া ভুল পদক্ষেপ তো কখনও নেননি সচিন তেন্ডুলকর! |
পুরনো খবর: বারবার ফোন ধরেননি |