খরচ ২৬০ কোটি, ফের যাত্রা শুরু গ্রেট ইস্টার্নের
৮৪১ সালের ১৯ নভেম্বর। কলকাতার সাহেবপাড়ায়, খাস বড়লাটের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ডেভিড উইলসন বানিয়েছিলেন অকল্যান্ড হোটেল। ১৭২ বছর পরে সেই একই দিনে হোটেলের নব সংস্করণ ‘দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন’-এর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলে গেল ২৬০ কোটি টাকা খরচে পুনর্নিমিত গ্রেট ইস্টার্ন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী হোটেলের এই ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “এই হোটেলে রানি এলিজাবেথ থেকেছেন। এই হোটেল আগেও জনপ্রিয় ছিল। এখনও জনপ্রিয়। ভবিষ্যতেও জনপ্রিয় থাকবে।” নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষ করেই হোটেল কিছুটা ঘুরে দেখেন তিনি। এর পরে হোটেলের এট্রিয়াম লাউঞ্জে সাদা ক্যানভাসে সবুজ, কমলা ও লাল রঙে নিজের ভাবনা ফুটিয়ে তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। হোটেলের কর্ণধার জ্যোৎস্না সুরিকে উপহার দেন ছবিটি।
এ দিন হোটেলের আনুষ্ঠানিক দ্বারোদ্ঘাটন হলেও বাণিজ্যিক ভাবে চালু হতে এখনও কিছু দিন লাগবে। ভারত হোটেলস গোষ্ঠীর বর্তমান কর্ণধার জ্যোৎস্না সুরি এ দিন জানান, তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে হোটেল খুলে দেওয়া হবে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা-সহ কিছু ছাড়পত্র হাতে এলেও বেশ কয়েকটি পাওয়া বাকি। কাগজপত্র সব হাতে চলে এলেই হোটেল খুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
প্রশাসক যখন শিল্পী। ললিত গ্রেট ইস্টার্নের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু হোটেলের জন্মদিনই নয়। এ দিন ছিল ভারত হোটেলস গোষ্ঠীর প্রয়াত কর্ণধার ললিত সুরিরও জন্মদিন। দীর্ঘ আট বছর পরে হোটেল খোলার জন্য এই দিনটি বেছে নেওয়ার পেছনে এই কারণটির কথাও উল্লেখ করেন ললিতের স্ত্রী জ্যোৎস্না। জানান, আরও আগেই ললিত সুরির স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কথা ছিল। বাদ সেধেছিল হোটেলের পুরোনো ভাড়াটের একাংশ। সেই সমস্যার কারণেই ঐতিহ্যশালী ভবনের সংস্কারের কাজ দফায় দফায় আটকে গিয়েছে। সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। তবে ছ’মাসের মধ্যে ঐতিহ্যশালী ভবনের সংস্কারের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তাঁর আশা।
২০০৫-এর নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মালিকানাধীন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কিনে নেন ললিত সুরি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকে পিছনে ফেলে এই ‘হেরিটেজ’ বা ঐতিহ্যশালী সম্পত্তির নতুন মালিক হন তিনি। হোটেলের ৯০ শতাংশ মালিকানার জন্য ৫২ কোটি টাকা দেয় ভারত হোটেলস গোষ্ঠী। বাম আমলে কেনা সেই হোটেল ২০০৭-০৮ সালেই খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ললিত। কিন্তু ২০০৬ সালে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু থামিয়ে দিয়েছিল নব কলেবর তৈরির প্রথম ধাপের কাজ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠার পরে রাশ ধরেন জ্যোৎস্না সুরি। দখলদারের সমস্যা। ঐতিহ্যশালী ভবনের বাইরের চেহারাটা এক রেখে সংস্কারের প্রযুক্তিগত সমস্যা। এ দিন সেই সব সমস্যার সঙ্গে জ্যোৎস্না উল্লেখ করেন হোটেলের ভগ্নপ্রায় দশার কথাও। বলেন, “৫০০ ট্রাক জঞ্জাল সরাতে হয়েছে। বদলাতে হয়েছে নকশা। সমস্যা অনেক হলেও এই হোটেল নতুন ভাবে গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা গর্বের ও আনন্দের।”
নতুন সাজে। মঙ্গলবার ‘দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন’-এর এট্রিয়াম লাউঞ্জ।
সিঙ্গাপুরের সংস্থা ‘আর্কিটেক্ট ৬১’ তৈরি করেছে হোটেলের পুনর্নিমাণের নকশা। সঙ্গে ছিল স্থানীয় সংস্থা দুলাল মুখার্জি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস । তিন একর জমির উপর তৈরি হোটেলটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হেরিটেজ ওয়ান এবং টু এবং একটি তৃতীয় নতুন ব্লক। সব মিলিয়ে ২৪৪টি ঘর। প্রথমে নতুন ব্লকটি খোলা হবে। ঐতিহ্যশালী ভবনের সংস্কারের কাজ শেষ করতে আরও মাস ছয়েক লাগবে। হোটেলের ঐতিহ্যশালী ভবনের একাংশেই নব রূপে তৈরি হচ্ছে শহরের এক সময়ের অভিজাত রেস্তোঁরা ও বার ‘ম্যাক্সিমাস’। হোটেলের মূল প্রবেশদ্বার থাকবে ওয়াটার লু স্ট্রিটের উপরে। দু’টি স্তরে প্রায় ১৫০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

ছবি: সুমন বল্লভ।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.