পরিষেবা দেব কী, আমরা তো নিধিরাম, দাবি নার্সদের
গে যথাযথ পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করুন, তার পরে শাস্তি দিন। স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্দেশে সরাসরি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সরকারি নার্সরা।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতকের মৃত্যুর পরে ওয়ার্ডের নার্সকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। যে দিন ভোরে শতাব্দী ঘোষ নামে ওই প্রসূতির সন্তান প্রসব হয়, সে দিন ওয়ার্ডে ওই নার্সেরই ডিউটি ছিল। ট্রলি না পেয়ে নার্স তাঁকে হাঁটিয়ে ওয়ার্ড থেকে লেবার রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। যাওয়ার পথেই প্রসব হয় তাঁর। আর মেঝেয় পড়ে মাথায় চোট পেয়ে মারা যায় নবজাতক। এর দিন কয়েকের মধ্যেই কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সকে সাসপেন্ড করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে লিখিত ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে নার্সদের একাধিক সংগঠন।
অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন, তেমন দাবি করছেন না স্বাস্থ্যকর্তারাও। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সমস্যা কিছু রয়েছে, সেটা ঠিক। তবে তার অর্থ এই নয় যে কেউ নিজের কর্তব্য পালন করবেন না। পরিকাঠামোর সমস্যা আমরা ধাপে ধাপে মেটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু নার্সদেরও নিজেদের কাজে আরও যত্নবান হতে হবে।”
নার্সদের পাল্টা প্রশ্ন, যত্নবান হবেন কী ভাবে? তাঁদের অবস্থা তো ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। কোথাও জীবনদায়ী ওষুধ নেই, কোথাও অক্সিজেন নেই, কোথাও সামান্য সেলাই করার সুতো বা প্লাস্টার করার সরঞ্জামও জোটে না। এমনকী রক্তচাপ মাপার যন্ত্রও সংখ্যায় কম বহু হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে নার্সরা যথাযথ পরিষেবা দেবেন কোন জাদুমন্ত্রে? শাস্তির পাশাপাশি এই সব অভাবের দিকে সরকার নজর দিক, আর্জি তাঁদের। নার্সদের এই প্রতিবাদ সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর গলদের দিকটায় আরও এক বার আঙুল তুলল। নার্সদের কর্তব্যে গাফিলতি বা দুর্ব্যবহারের যে অভিযোগ অহরহ প্রায় সমস্ত হাসপাতালেই ওঠে, এ বার তারই উল্টো পিঠটার দিকে আলো ফেললেন নার্সরাই।
এসএসকেএমের এক নার্সের যেমন অভিযোগ, “সাধারণ স্যালাইন নেই বহু ওয়ার্ডে। মাঝরাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আমরা স্যালাইনটুকুও চালু করতে পারি না।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক নার্সের কথায়, “হঠাৎ রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। অক্সিজেন চালু করতেই হবে। কিন্তু অক্সিজেন পাইনি।” নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের এক নার্স অভিযোগ করেছেন, “অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হবে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে ডাকলাম। সে সাফ বলে দিল, তার সময় নেই। রোগীকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ওটিতেই ফেলে রাখা হয়েছিল। রোগীর বাড়ির লোকজনের কাছে মার খেতে খেতে বেঁচে গিয়েছিলাম।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক নার্সের কথায়, “মুমূর্ষু রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গেও কথা বলার সময় পান না ডাক্তারবাবুরা। বাড়ির লোকের মুখোমুখি হতে হয় আমাদেরই। এই বাড়তি চাপ আমরা কেন নেব?”
নার্সিং কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ ওয়ার্ডে তিন জন রোগীপিছু এক জন করে নার্স থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডেই দ্বিগুণ-তিন গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। ফলে তিন জন রোগী পিছু এক জন তো দূর অস্ত্, ১২-১৩ জন রোগী পিছু এক জন করে নার্সকে কাজ করতে হয়, ফলে সমস্ত রোগীর প্রতি মনোযোগ দেওয়া তাঁদের পক্ষেও সম্ভব হয় না।
নার্সদের সংগঠন ‘নার্সেস ইউনিটি’-র তরফে ঋতুপর্ণা মহাপাত্র বলেন, “ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়াই আমাদের কাজ করে যেতে হয়। লেবার রুম, শিশু বিভাগ, সার্জারি বিভাগের অবস্থা তো শোচনীয়।” আর এক সংগঠন ট্রেন্ড নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া-র রাজ্য শাখার তরফে এক মুখপাত্র বলেন, “কাজে গাফিলতি হলে অবশ্যই নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক, কিন্তু তার আগে কাজ করার পরিবেশটা অন্তত নিশ্চিত করুক স্বাস্থ্য দফতর।”
এ বিষয়ে নার্সিং বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সান্ত্বনা কুণ্ডুর মন্তব্য, “আগে দফতরের ভিতরে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে নিতে চাই। তার পরে আপনাদের জানাব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.