মাতৃত্ব এখনও ঝুঁকির কোচবিহারের গ্রামে-গঞ্জে
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবাই মেলে না, তাই প্রসবে ভরসা সেই গুণবালা
দু’টি গ্রাম মিলিয়ে বাস কয়েক হাজার মানুষের। সেই দু’টি গ্রামের প্রায় ৯০০ শিশুর জন্ম হয়েছে একজনই ধাত্রীর হাতে। তিনি কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার ইন্দ্রেরকুঠি গ্রামের বাসিন্দা গুণবালা বর্মন। ইন্দ্রেরকুঠি ও লাগোয়া নিত্যানন্দ এই দুই গ্রামে কোনও মহিলার প্রসব বেদনা উঠলেই ডাক পড়ে গুণবালাদেবীর। দু’টি গ্রামের কোনওটিতেই নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা মেলে কালেভদ্রে। প্রসূতিদের জন্য সরকারি জননী সুরক্ষা যোজনার নামও শোনেননি বাসিন্দারা।
গুণবালা বর্মন।
—নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহার জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে ইন্দ্রেরকুঠি ও নিত্যানন্দ গ্রাম মাথাভাঙা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির অধীন। জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশনে গ্রামের প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার সুরক্ষিত ভাবে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও ওই দু’টি গ্রামে তার কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গ্রাম থেকে কিলোমিটার চারেক দূরে পখিহাগা ও গিলাডাঙ্গায় দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র দুটিতে গর্ভবতীদের সন্তান প্রসবের কোনও ব্যবস্থা নেই। গ্রামের বাসিন্দা কামিনী বর্মন, প্রসন্ন বর্মনরা জানান, গর্ভবতী মায়েদের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে মাথাভাঙা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। তাঁদের ক্ষোভ, “সে ক্ষেত্রে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হয়। পাশাপাশি গাড়ি বা ভ্যান রিকশা ভাড়ার জন্যও প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। ৫০০ টাকার নীচে কেউই মাথাভাঙায় যেতে চান না। সে কারণেই কেউ আর শহরমুখী হয় না।”স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে একজন গর্ভবতী মহিলার ভ্রূণ হওয়া থেকে শিশু জন্ম নেওয়া পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব সরকারের। গর্ভবতী অবস্থায় তিন বার শরীর পরীক্ষা করানো, প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, ওষুধ সমস্ত কিছু সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি, গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য ‘নিশ্চয় যান’ এর ব্যবস্থাও রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গর্ভবতী মহিলাকে একটি কার্ড করে দেওয়ার কথা। সে সময়েই নিশ্চয় যানের জন্য ফোন নম্বর সহ একটি কাগজ দেওয়ার কথা। প্রয়োজন মতো ফোন করলেই ওই গাড়ি ঠিকানা মতো পৌঁছে যাবে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওই পরিষেবা পাওয়ার কথা। এ ছাড়া শিশু জন্মাবার পর পুষ্টিকর খাবার ও ওষুধের জন্য গ্রামের প্রসূতিদের এক হাজার টাকা, শহরের ক্ষেত্রে ৯০০ টাকা এবং বাড়িতে শিশু জন্মালে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ৫০০ টাকা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর কোনওটাই মিলছে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওই এলাকার বাসিন্দা ক্ষিতীশ বর্মন বলেন, “তিন মাস আগে শিশু জন্ম নিয়েছে। গুণবালা বর্মনকে ডেকে এনেছিলাম। স্কুলে দুই স্বাস্থ্যকর্মী মাসে এক বার আসেন। তাঁদের কাছে স্ত্রীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাই। ‘নিশ্চয় যান’-এর বিষয়ে জানা নেই।”
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “এ রকমটা হওয়ার কথা নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধে রয়েছে। কী কারণে সেখানে এখনও বাড়িতেই শিশু জন্ম হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।” কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের গাফিলতির জন্যও এটা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাসিন্দাদের কাছে জানা যায়, অসুরক্ষিত ভাবে প্রসব করাতে গিয়ে বেশ কিছু শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
অগত্যা ভরসা গুণবালাদেবীই। দুই গ্রাম মিলে গুণবালা দেবীর হাতে প্রায় ৯০০ শিশুর জন্ম হয়েছে। গ্রামের প্রথম যে শিশু তাঁর হাতে জন্ম নিয়েছেন তিনি এখন তিরিশ বছরের যুবক ধনবর বর্মন। আর তিন মাসের ছোট্ট শিশুটির নাম কল্যাণী বর্মন। গুণবালা দেবী জানিয়েছেন, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামে ওই কাজ করে আসছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.