ট্রলি ‘না মেলায়’ বারান্দায় প্রসব, পড়ে মৃত্যু শিশুর
কোনও রকমে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন তিনি। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা আসন্নপ্রসবা ওই মহিলা হাসপাতালের আয়াদের বলেন, লেবার রুম পর্যন্ত হাঁটার ক্ষমতা নেই তাঁর। কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও ট্রলির ব্যবস্থা না করে আয়ারা জোর করে তাঁকে হাটিয়ে নিয়ে যান লেবার রুম পর্যন্ত। যার ফলে করিডরেই প্রসব হয়ে যায় তাঁর এবং মাটিতে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে তৎক্ষণাৎ মত্যু হয় সদ্যোজাতের। চিকিৎসায় গাফিলতির এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটির দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গোটা বিষয়টির রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ এনআরএসে ভর্তি করা হয় ট্যাংরা সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা শতাব্দী ঘোষকে। তাঁর কাকা বিপুলকুমার হোড় শনিবার বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ওকে পরীক্ষা করে বলেন, প্রসব হতে দেরি আছে। তার পরে ব্যথা ওঠার কিছু ওষুধ দেন। রাত ১২টা নাগাদ যন্ত্রণা শুরু হয়। সওয়া দু’টো নাগাদ আমাদের লেবার রুমে ডেকে পাঠানো হয়।” তাঁর কথায়, “লেবার রুমে এক নার্স জানান, লেবার টেবিলে ওঠার আগেই শতাব্দীর বাচ্চা হয়ে গিয়েছে এবং মাটিতে পড়ে মারা গিয়েছে সে। সেই মৃত শিশুই আমাদের দেখান। মাটিতে তখনও চাপ চাপ রক্ত।” কিন্তু প্রসূতির বাড়ির লোকের আরও অভিযোগ, সেই সময়ে এক জন ডাক্তার ছুটে এসে ওই নার্সকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলতে থাকেন, গর্ভেই মারা গিয়েছে বাচ্চাটি এবং ওই মহিলা মৃত বাচ্চাই প্রসব করেছেন। এ নিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের বচসা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালেই বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
এই ঘটনার পরে এনআরএসের সুপার শাশ্বতী মজুমদারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় প্রসূতির পরিবার। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কমিটির প্রধান। অন্য সদস্যেরা হলেন সাগর দত্ত মেডিক্যালের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য, মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়ী এবং আর জি করের পেডিয়াট্রিক মেডিসিনের প্রধান শিবার্জুন ঘোষ। প্রসূতি ও শিশু-মৃত্যু রুখতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রধান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের লেবার রুমের পরিকাঠামো নিয়ে বহু অভিযোগ আসছিল স্বাস্থ্য দফতরে। এ নিয়ে দিন কয়েক আগেই ‘অবস্ট্রেটিক মেন্টর কমিটি’ গঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আসন্ন প্রসূতিকে ট্রলি দেওয়া হয়নি, এটা তো কল্পনাও করা যায় না! ট্রলি কম থাকলে রোগীকল্যাণ সমিতির টাকায় হাসপাতাল কেনেনি কেন? এই সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
সুপার বলেন, “এখানে ট্রলির অভাব নেই। তা সত্ত্বেও রোগিনীকে কেন হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হল, খোঁজ নিচ্ছি। রাতে যে আয়া কাজে ছিলেন, তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তদন্ত কমিটির পাশাপাশি হাসপাতালও পাঁচ সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.