মহাকালের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সুখানিবস্তি
ই যে ধোঁয়া দেখছেন, ওখানে চিতা জ্বলছে!
গত রবিবার বিকেলে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন নাগরাকাটার সুখানি বস্তির চাষি বউ রেখা ছেত্রি। মাথায় পাগড়ির মত জড়ানো ত্যানার মতো গামছাটা খুলে তাকিয়ে ছিলেন সেই দিকেই। বললেন, “ওরা যে ভগবান। গণেশ। মহাকাল।” বুনো হাতিকে সুখানির সমাজে গণেশ, মহাকাল বলেই পুজো করেন তাঁরা। গত বুধবার নাগরাকাটাতে ডিব্রুগড়গামী কবিগুরু এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে ছ’টি হাতির মৃত্যু হয়। সেই হাতিগুলোর ছিন্নভিন্ন বিরাট দেহাবশেষ পোড়ানো হচ্ছে। গত শনিবার মারা যায় এক হস্তিনী। তার চিতা জ্বলছিল তখন। সেই দিকেই তাকিয়ে ছিলেন রেখা।
সেই দুঃখের রেশ কাটেনি তার কয়েকদিন পরেও। সামনে ধান খেত, জলঢাকা নদী, রেল সেতু। কয়েকদিন আগেও বস্তির চাষিরা রাতভর টং ঘরে থেকে ধান পাহারা দিয়েছেন। বুনো হাতির দল খেতের ধান সাবাড় করে চলে যায়। ঘরদোর তচনচ করে। ট্রেনের ধাক্কায় সেই বুনোদের মৃত্যুর পরে এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। তাঁরা এমনকী এ কথাও বলছেন, এখন দিনরাত সমান তালে ট্রেন চলছে। ফলে হাতিদের বিপদ বেড়েছে। রীতা ওরাওঁ যেমন বলেন, এই এলাকা তো হাতির। ওদের জমি দখল করে জবরদস্তি ট্রেন চলছে। এটা তো বুঝতে হবে।
সুখানিবস্তি থেকেই দেখা যায় জলঢাকা সেতু। ওই সেতুতেই ঘটেছিল দুর্ঘটনা। —নিজস্ব চিত্র।
যদিও বনকর্তারা জানান, রেলকে বারবার বলা হচ্ছে। ২০০৪ সালে ওই লাইন মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজে উন্নীত করার পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়েছে। রাজ্য বন দফতরের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) নবীনচন্দ্র বহুগুনা বলেন, “বনবস্তিবাসীরা সঠিকভাবে সমস্যার কারণ খুঁজে বার করেছেন। আমরা ওঁদের ভাবনাকেই তো তুলে ধরছি।”
গত রবিবার বিকেলেও গাঁয়ের মেঠো রাস্তার শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে দূরে পাক খেয়ে ওঠা ধোঁয়ার কুণ্ডুলি দেখে বিষণ্ণ ছিলেন সুমি সাঁওতাল, সাবিনা ওঁরাও, মাইলি ছেত্রি। অথচ এই হাতির দলই তাঁদের খেতের ধান নষ্ট করে দেয়। দল বেঁধে চাপরামারি জঙ্গল থেকে বার হয়ে রেল লাইন টপকে নদী পার হয়ে ঢুকে পরে বস্তিতে। রেখা দেবী প্রায় তিন বিঘা খেত ঘুরে দেখালেন ধান নেই। কাদামাটিতে গোলগোল পায়ের ছাপ। পাশে সাবিনার আড়াই বিঘা জমির একই দশা।
রাজু ছেত্রি, ভাদু ওঁরাও, লালবাহাদুর ছেত্রির মতো চাষিরা একই সমস্যায় ভুগছেন। তবুও ওঁদের বিশ্বাস গণেশ বা মহাকাল সহজে মারমুখী হয় না। চাষিদের কথায়, “খাবার না-পেলে ঘরদোর ভাঙে। তখন রাগ হয়। কিন্তু তাই বলে ওদের ক্ষতির কথা ভাবতে পারি না।” পারেন না গাঁয়ের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য পিঙ্কি ওঁরাও নিজেও। তিনি বলেন, “জঙ্গল এলাকা হাতির। সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ, ওঁদের শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করুন।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.