হাতির মৃত্যু নিয়ে রাজ্য ও রেলকে ধমক কেন্দ্রের
ত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রেলপথে ক্রমান্বয়ে হাতি-মৃত্যুর ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষকে কার্যত ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে দিল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক।
ছাড় মেলেনি রাজ্যের বন দফতরেরও। হস্তি-হনন প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে তাদেরও সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৪ সালে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত বিস্তৃত ১৬৮ কিলোমিটার রেলপথ ব্রড গেজে সম্প্রসারিত হওয়ার পরে এ যাবৎ ট্রেন-দুর্ঘটনায় ৪৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছরই ট্রেনের-বলি ১৯টি হাতি।
১৯৭৪ সালে ওই রেলপথ তৈরি হয়। তা ছিল নিছক মিটার গেজ লাইন। চলাচল করত শুধুই মালগাড়ি। ১৯৭৪-২০০৪, ত্রিশ বছরে মালগাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছিল ২৭টি হাতি। ছবিটা পাল্টে গিয়েছে গত ন’বছরে। তবে, নিত্য হাতি-হননের ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রককে তেমন নড়ে চড়ে বসতে দেখা যায়নি। গত বুধবার নাগরাকাটার কাছে জলঢাকা সেতুর উপরে দুর্ঘটনার পরেই হইচই পড়ে যায় দিল্লিতে। ওই দুর্ঘটনায় আহত অন্ডঃসত্ত্বা হাতিটিও মারা যায় শনিবার। ময়নাতদন্তে তার গর্ভে ২২ মাসের একটি শাবক মেলে। পশু চিকিৎসকেরা জানান, হস্তিনীটি সুস্থ থাকলে দিন কয়েকের মধ্যেই শাবকটির জন্ম হত।
কিন্তু কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের উদ্যোগী হওয়ার কারণ?
গতির তোয়াক্কা না করে বনপথে প্রবল বেগে ছুটে যাওয়া কবিগুরু এক্সপ্রেসের ধাক্কায় হাতির ছিন্নভিন্ন দেহ ওই সেতুর উপরে ঝুলছে, এ ছবি শুধু দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেই নয়, দেখা গিয়েছিল নিউইয়র্ক এবং লন্ডন থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রেও। বনমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতেই অস্বস্তিতে পড়েন দিল্লির কর্তারা। তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তাকে পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গে। চৈতন্য মূর্ত্তি নামে বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অ্যাসিট্যান্ট ইনস্পেক্টর জেনারেল পদ মর্যাদার ওই অফিসার ডুয়ার্সে এসে স্থানীয় বন বিভাগ, রেল কর্তৃপক্ষ এমনকী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও গ্রামবাসীদের সঙ্গেও বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেন।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বনকর্তার কাছে নালিশ জানানো হয়, ১৬৮ কিলোমিটার ওই রেলপথের ৭৪ কিলোমিটার গিয়েছে তিনটি জাতীয় উদ্যান, একটি ব্যাঘ্র প্রকল্প-সহ অন্তত দশটি অভয়ারণ্যের বুক চিরে। ওই বন-পথে কয়েক কিলোমিটার অন্তরই রয়েছে ‘এলিফ্যান্ট-করিডর’ বা হাতিদের চলাচলের পথ। ফলে ওই সেখানে রেলের গতি কোনও ভাবেই ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়। অথচ বন দফতরের অভিযোগ, সে পথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রেন চলাচল করে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে।
অভিযোগ পেয়ে, ক্ষুব্ধ বনমন্ত্রকের পক্ষ থেকে রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের এই ‘বেপরোয়া’ মনোভাব ভাল চোখে দেখছে না কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ কর্তারা। জলদাপাড়া, গরুমারা, চাপরামারি কিংবা বক্সার মতো জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সারা দিনে ৮ জোড়া যাত্রিবাহী ট্রেন এবং অন্তত ৫ জোড়া মালগাড়ি চলাচল করে। তাদের কোনওটির গতিই নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বনমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, রেলপথ তৈরি হলেও জঙ্গল ফুঁড়ে যাওয়া ওই জমি কোনও ভাবেই রেলের নয়। জনস্বার্থে বনপথে রেল লাইন বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র। ফলে সেখানে বন দফতরের নিয়মই ‘শেষ কথা’। রেল কতৃর্পক্ষকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে কোনও পরিস্থিতিতেই বন বিভাগের নির্দেশিকা যেন ‘অমান্য’ করা না হয়। এ ব্যাপারে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “বন দফতরের সমন্বয় রেখেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে রেল।”
তবে রাজ্যর বন দফতরকেও একেবারে ‘ক্লিনচিট’ বা ছাড় দিচ্ছে না দিল্লি। তাদের তরফেও যে যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে, তা জানিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের বন দফতরকে। বন দফতরে গত তিন বছরে কর্মী নিয়োগ স্তব্ধ। বিট অফিসার ও বনকর্মীদের অন্তত ১১০০ শূন্য পদে নিয়োগ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের। এর মধ্যে শুধু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলেই শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৬৫০। ফলে হাতি চলাচলের করিডর কিংবা জঙ্গলের গভীরে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ারে আদৌ বনপাহারা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বনমন্ত্রক। সঙ্গে রয়েছে ট্রেজারি আইনের জটিলতা। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে স্থানীয় যুবকদের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করেই কোনওরকমে চলছিল বন প্রহরা। কিন্তু ট্রেজারি নিয়মের ফাঁদে পড়ে তাদের সামান্য ভাতাও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। তাদেরই এক জন বলেন, “জীবন হাতে নিয়ে রাতে বন পাহারা দিয়ে এত দিন আমরাই জঙ্গল বাঁচাতাম। কিন্তু সে টাকা পেতেও এখন বছর ঘুরে যাচ্ছে। ফলে বনকর্মী হিসেবে এখন আর কেউ কাজ করতে চাইছেন না।”
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলে এখন প্রায় ৫৫০টি হাতি। রেলের চাকা থেকে তাদের বাঁচিয়ে রাখার দায় নেবে কে?
প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের এক কর্তা বলেন, “অভিভাবকের মতো রেল ও রাজ্য সরকারকে ধমকে গিয়েছে দিল্লি। কিন্তু তারা কি আদৌ তা মানবে?” প্রশ্ন সেটাই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.