সরু রাস্তা। দু’টি গাড়ি কোনওমতে পাশাপাশি যেতে পারে। একপাশে সবুজ চা বাগান। নেপালি মহিলারা তা থেকে ঝুড়ি ভরে চা পাতা তুলছেন। অন্য পাশে, হলদে হয়ে আসা ধানখেত দুলছে হাওয়ায়। ধানখেত, চা বাগান পার করে এক কিলোমিটার গেলে বৈকুণ্ঠপুরের গভীর জঙ্গল। মাথা উঁচু করলেই খোলা আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়। এলাকাটি শিলিগুড়ি থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে নকশালবাড়ির পানিঘাটার কাছে মিরিক ব্লকের চেঙ্গা বনবস্তি। শহর থেকে দূরে চেঙ্গা বনবস্তি এলাকায় দূষণ প্রায় নেই বললেই চলে।
বনবস্তির সকাল যতটা মনোরম, ঠিক তেমনই রোমহর্ষক রাত। সন্ধ্যে হলেই হাতির পাল নেমে আসে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল থেকে। সারা রাত এলাকায় দাপিয়ে ভোর হলে ফিরে যায়। একই জায়গায় প্রকৃতি ও প্রাণীকে ‘ইউএসপি’ করে, পর্যটন মানচিত্রের প্রায় আড়ালে থাকা চেঙ্গাকে পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরতে এ বার উদ্যোগী রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর উদ্যোগে খুব শীঘ্রই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চালু হতে চলেছে চেঙ্গা। রাজ্য পর্যটন দফতর এবং বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আগামী মরসুমেই চেঙ্গাকে সাধারণ পর্যটকদের থাকার উপযোগী করতে চান গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “আমি কয়েকদিন আগেই প্রথমবার চেঙ্গাতে গিয়েছিলাম। গিয়েই তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। এই এলাকাকে পর্যটনের উপকেন্দ্র করে তৈরি করতে চাইছি। এ বিষয়ে পর্যটন দফতরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এলাকাতে সরকারি ভাবে সমীক্ষা করা হবে। আগামী মরসুমেই পর্যটক আনার ব্যবস্থা করতে চাইছি।” |
চেঙ্গা এলাকাটি আয়তনে ছোট বলে এটিকে তরাইয়ের পর্যটন-পথের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ী রাজ বসু বলেন, “ডুয়ার্সের পাশাপাশি তরাইয়ের আলাদা করে কোনও পর্যটন-পথ নেই। আমরা চাইছি মিরিককে কেন্দ্র করে হিমালয়ের পাদদেশ এলাকাটিকে একটি পর্যটন-পথের মধ্যে আসুক। মিরিক, কলাবাড়ি, পুটুঙ্গ, লোহাগড় এলাকাকে একটি মানচিত্রের মধ্যে জুড়লে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নতিও হবে। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তার গুরুত্বও বাড়বে।”
আপাতত ঠিক হয়েছে, এলাকায় ইকো ট্যুরিজমের ঢঙে ‘হোম স্টে’-এর ব্যবস্থা হবে। এলাকাবাসীকেই এ জন্য অনুরোধ করা হবে। খুব শীঘ্রই চেঙ্গার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলবে পর্যটন দফতর। রাজ্য পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের জয়েন্ট ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবাল বলেন, “চলতি মরসুমেই কথা বলা হবে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের হোম স্টে-তে উৎসাহিত করা হবে। এতে যেমন তাঁদের আয়ের একটা পথ তৈরি হবে, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে না।”
এখানে পর্যটক বাড়লে নেপালের সীমান্ত পর্যটনও উপকৃত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন নেপালের পরিবেশকর্মী অর্জুন কারকি। |