২৯ অগস্ট। ১৫ সেপ্টেম্বর। ৩ নভেম্বর।
চলতি মাসের ১১ তারিখ ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষের আগেও ওই তিন দিন হামলা হয়েছিল একই বাড়িতে। পুলিশের দাবি, ওই তিন বার হামলার পিছনেও ছিলেন শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে অন্যতম দুই অভিযুক্ত পরাগ মজমুদার ও পিনাকেশ দত্ত। শেক্সপিয়র সরণি থানায় ওই তিন দিনের হামলা নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছিল।
১১ নভেম্বর ভোরে লাউডন স্ট্রিটে পুলিশ কমিশনারের বাংলো ও পার্ক স্ট্রিটে আইপিএস আবাসন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে শর্ট স্ট্রিটের ১৭ কাঠার একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে গুলি চলে। মারা যান দখলদার দলের দুই বাউন্সার বা নিরাপত্তারক্ষী। তার পরেই মহানগরের কেন্দ্রস্থলে জমি দখলের ছবিটা প্রকাশ্যে আসে। গ্রেফতার করা হয় সম্পত্তির কারবারি পরাগ, পিনাকেশ-সহ ১৪ জনকে। পরাগ ও পিনাকেশ ওই জমি দখলের অন্যতম চক্রী বলে পুলিশের দাবি।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশি হাজতে থাকা পিনাকেশ ও পরাগকে জেরা করে একের পর এক তথ্য মিলছে। পুলিশের দাবি, কয়েক মাস আগে থেকেই বহিরাগতদের দিয়ে হামলা চালিয়ে ওই জমি দখলের ছক কষা হচ্ছিল। এর জন্য পিনাকেশকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়েছিলেন পরাগ। তার একটা বড় অংশই পিনাকেশ বাঘা যতীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকারে রেখেছিলেন। তল্লাশি চালিয়ে সেখান থেকে ৮২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। খোঁজ চলছে বাকি টাকার। সেই জন্যই সোমবার পিনাকেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সবিস্তার তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, জেরায় পরাগ এখনও টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তবে তাঁর অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশি সূত্রের বক্তব্য, পিনাকেশই যে ১১ নভেম্বর ভোরের ‘অপারেশন’-এর দায়িত্বে ছিলেন, তার অনেকটা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ১০ নভেম্বর রাতে পিনাকেশ আট জন বাউন্সারের সঙ্গে বাঘা যতীন সংলগ্ন ইএম বাইপাসের ধারে একটি রেস্তোরাঁয় খানাপিনা করেন। পরে সেখানেই আরও কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে হাজির হন পার্থ চট্টোপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী। সেখান থেকে সকলকে নিয়ে পিনাকেশ হাজির হন শর্ট স্ট্রিটের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে। পিনাকেশ সেখান থেকেই দখলদারির অভিযান নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। পার্থ ও ধৃত নিরাপত্তারক্ষীদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন ২১ জন নিরাপত্তারক্ষী ও বাউন্সার ৯এ শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। দূরে পিনাকেশের সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন আরও জনা দশেক নিরাপত্তারক্ষী।
পরাগ-পিনাকেশের সঙ্গে আরও কয়েক জন এই চক্রে জড়িত বলে পুলিশেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের খোঁজ চলছে। ঘটনার পর থেকেই বাউন্সার সরবরাহকারী, নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান অরূপ দেবনাথ বেপাত্তা। লালবাজারের গোয়েন্দারা তাঁকেও ধরতে পারেননি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, মহানগরে জমি দখলের এই চক্রের পুরো হদিস পেতে গেলে অরূপ এবং বাকিদেরও গ্রেফতার করা প্রয়োজন।
শর্ট স্ট্রিটের মতো এলাকায় জমির দাম আকাশছোঁয়া। সেই জন্যই পরাগ-পিনাকেশের মতো কারবারিরা ওই সম্পত্তি দখলে এত মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বলে পুলিশের একাংশের দাবি। তিন দিনের পুলিশি হাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পিনাকেশকে সোমবার ফের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস আদালতে জানান, ওই দামি জমি দখলের মূল পাণ্ডা পিনাকেশই। বহু বিতর্কিত জমির দালালিতে তিনি যুক্ত বলেও সরকারি আইনজীবী জানান।
তবে পিনাকেশের আইনজীবীদের পাল্টা বক্তব্য ছিল, তাঁদের মক্কেল এক জন প্রোমোটার। লকারে যে-টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেটা তাঁর ব্যবসার। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পিনাকেশকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
|