ঘরে মায়ের দেহ, পাশে জখম ছেলে
হাজারো ধাক্কাধাক্কিতেও সাড়া মেলেনি বন্ধ ঘর থেকে। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির মালিককেই ঘটনাটি জানিয়েছিলেন পরিচারিকা। সেখান থেকে খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে ভিতরে ঢুকে দেখে, ঘরের মেঝেতে শোয়ানো রয়েছে এক বৃদ্ধার দেহ। একটু দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এক যুবক। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ে।
পুলিশ জানায়, মৃত ওই বৃদ্ধার নাম দীপালি আইচ ভৌমিক (৭৫) এবং ওই যুবক তাঁরই ছেলে, সোমশুভ্র আইচ ভৌমিক (৩৯)। যুবককে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মাথায় চোট রয়েছে। পুলিশ চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক ভাবে জেনেছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। সোমশুভ্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে যায় তাঁর। তবে দক্ষিণ শহরতলি ডিভিশনের এক পুলিশকর্তা জানান, “কী ভাবে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না-তদন্তের পরেই নিশ্চিত করে বলা যাবে।”
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ জানায়, সকাল আটটা নাগাদ দীপালিদেবীর বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলেন আরতি অধিকারী নামে এক পরিচারিকা। দরজা বন্ধ দেখে বেশ কয়েক বার ধাক্কাধাক্কি করেন তিনি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এর পরেই বাড়ির মালিক সঞ্জয় দেবনাথকে খবর দেন তিনি। সঞ্জয়বাবু খবর দেন যাদবপুর থানায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তবে একটু জোরে টান দিতেই ছিটকিনি খুলে যায়। তার পরেই এই দৃশ্য দেখেন তদন্তকারীরা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর দুয়েক ধরে বিজয়গড়ের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই বাড়িতে থাকছিলেন মা ও ছেলে। এর আগে তাঁরা বিজয়গড় ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমশুভ্রর বাবা বেশ ক’বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি একটি চা বাগানের ম্যানেজার ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর ছয়েক আগে গল্ফগ্রিন থেকে বিজয়গড় এলাকায় আসেন দীপালিদেবী ও সোমশুভ্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই মা-ছেলের কেউই পাড়ায় বিশেষ মেলামেশা করতেন না। কারও সঙ্গে বিশেষ বিবাদেও জড়াতেন না তাঁরা। তবে পুলিশ জেনেছে, মাস সাতেক আগে দীপালিদেবীদের বাড়িতে জনা কয়েক লোক এসে চড়াও হয়েছিল। বচসা চলাকালীন স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন, ওই লোকেরা সোমশুভ্রের পাওনাদার। তবে তার পরে অবশ্য এমন ঘটনা আর ঘটেনি বলেই বাসিন্দাদের দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, পাশের পাড়ায় সোমশুভ্রের কয়েক জন বন্ধু রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন সোমশুভ্র। একাধিক বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও করেছেন তিনি। সম্প্রতি একটি নামী বেসরকারি সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে কিছুটা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সম্পত্তি ও টাকা নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করতেন। পুলিশ জেনেছে, গল্ফগ্রিনে থাকাকালীন বিয়ে করেছিলেন সোমশুভ্র। পরে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর থেকেই মায়ের সঙ্গে টাকা-পায়সা নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলের অত্যাচারের থেকে রেহাই পেতে সম্প্রতি দীপালিদেবী বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন পরিচিতদের কাছে। ছেলের হাত থেকে নিজের সোনার গয়না বাঁচাতে এক পরিচিতের কাছে সব জমা রেখে এসেছিলেন ওই বৃদ্ধা। ফের ছেলের চাপেই মাস দুয়েক আগে ওই গয়না ফেরত আনেন দীপালিদেবী।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই মাসে বাড়ি ভাড়া ও পরিচারিকার বেতন দেননি সোমশুভ্ররা। এর আগে অবশ্য ঠিক সময়েই সব মিটিয়ে দিতেন তাঁরা। সোমশুভ্রের বন্ধুদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, ইদানীং নানা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই যুবক। রবিবার রাতেও তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীপালিদেবী খুব একটা ঘরের বাইরে বেরোতেন না। পাড়ায় মেলামেশা না করলেও সোমশুভ্রকে প্রায়ই রাস্তাঘাটে দেখা যেত। শনিবার রাতেও পাড়ার একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনেছিলেন তিনি। তার পর থেকে তাঁকে আর পাড়ায় দেখা যায়নি বলেই স্থানীয়দের দাবি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.