নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জেসপে উৎপাদনের পরিবেশ ফেরাতে এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকার।
নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে এবং উৎপাদন চালু রাখা যাচ্ছে না, এই যুক্তি দেখিয়ে দমদমের কারখানা বন্ধ করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন জেসপ কর্তৃপক্ষ। জট কাটানোর জন্য ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সোমবার রুইয়া গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কাছে রাজ্য সরকার অনুরোধ জানিয়েছে ওই বন্ধের আর্জি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। কারখানায় নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনিক ভাবে যা করণীয়, তা করার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। শীঘ্রই জট খুলবে বলে এ দিনের আলোচনার পরে আশাবাদী সরকার ও ইউনিয়ন, দু’পক্ষই। জেসপ কর্তৃপক্ষ আবার আশাবাদী, প্রশাসনিক দিক থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
জেসপ নিয়ে টানাপোড়েন কাটাতে এ দিন বিধানসভায় তাঁর ঘরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, শ্রম কমিশনার, শ্রমসচিব এবং ওই দফতরের আরও কিছু আধিকারিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জেসপের পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশিই বৈঠকে ছিলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দী, বিধায়ক তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ। জেসপে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন মিলে এখন যে যৌথ মঞ্চ গড়ে আন্দোলন চালানো হচ্ছে, সৌগতবাবু-অমিতাভবাবুরা তারই নেতা।
বৈঠকে শ্রমিক ইউনিয়ন এবং কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনে রাজ্য সরকার রুইয়াদের বলেছে, কারখানা বন্ধ করার অবস্থান থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। আগামী ৬ মাস কারখানা কী ভাবে চলবে, তার পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলতে হবে। পক্ষান্তরে, যন্ত্রাংশ চুরি-সহ নিরাপত্তার দিকটি প্রশাসন দেখবে।
বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনও ভাবেই দুর্বৃত্তায়ন মেনে নেওয়া হবে না! মালিক বা শ্রমিক, যে দিক থেকেই হোক। যা করার, আলোচনা করেই করতে হবে। বিবাদ নয়, ঐকমত্যে কাজ চালাতে হবে।” কত দিনের মধ্যে জেসপ কর্তৃপক্ষ তাঁদের আগেকার আর্জি প্রত্যাহার করে নেবেন?
পার্থবাবুর জবাব, “কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি। তবে যে মনোভাব নিয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা কথা বলে গেলেন, তাতে আমরা আশাবাদী, যত দ্রুত সম্ভব সেটা হবে।” জেসপ কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এ দিনই স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, কবে তাঁরা বন্ধ করার আর্জি ফিরিয়ে নেবেন। আইনশৃঙ্খলা ও উৎপাদন পড়ে যাওয়ার সমস্যা সরকারকে জানিয়ে তাঁরা আশ্বাস পেয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য।
এর জন্য সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে কারখানার পরিবেশ বদলাবে এবং উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার সহায়ক হয়ে উঠবে বলে সংস্থা আশাবাদী’।
কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কারখানার নথিভুক্ত সবক’টি ইউনিয়নের (আইএনটিটিইউসি-রই একাধিক) প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি ‘উৎপাদন কমিটি’ গড়ার পরামর্শ দিয়েছেন পার্থবাবু, পূর্ণেন্দুবাবুরা। ইউনিয়নগুলির তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড বাকি পড়েছে ১০ কোটি টাকা। ইএসআই বকেয়া রয়েছে ৪ কোটি টাকার। বন্ধ গ্র্যাচুইটিও। তবে কারখানা বন্ধ না-করার জন্য রাজ্য সরকার দৃঢ় অবস্থান নিতে চাইছে দেখে ইউনিয়ন নেতৃত্বও এই নিয়ে অনড় অবস্থান নেননি। সৌগতবাবু বলেন, “নিরাপত্তার সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ওঁরা পাঁচিল দেবেন। তার পরে বাকি যা করণীয়, প্রশাসন দেখবে।” আর অমিতাভবাবুর
কথায়, “রাজ্য সরকার তাদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছে। এ বার কী হয়, দেখা যাক।”
|