বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোমবার চাঙ্গা হয়ে উঠল ভারতের শেয়ার বাজার। যে- জোড়া সুখবর সেনসেক্সকে এ দিন টেনে তুলেছে, সেগুলি হল:
• চিনে আর্থিক সংস্কারের পালে হাওয়া লাগা
• নিজের দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে মার্কিন সরকারের বন্ড কেনার কর্মসূচি অব্যাহত রাখা
সোমবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স বেড়ে গেল ৪৫১.৩২ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থামে ২০,৮৫০.৭৪ অঙ্কে। এ দিন গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্বের অধিকাংশ বাজারই। যার মধ্যে এশিয়া ছাড়াও আছে আমেরিকা-ইউরোপের বাজার। বিশ্ব বাজার বেড়েছে প্রায় ৬%।
পাশাপাশি, ভারতে ডলারে টাকার দাম এ দিন বেড়েছে ৭০ পয়সা। প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬২.৪১ টাকা। দু’সপ্তাহের মধ্যে এই দিনই টাকার দাম ছিল সব থেকে বেশি। টাকার এই উত্থান বাজারকে তেজী হতে সাহায্য করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
গত শুক্রবারই চিনা কমিউনিস্ট পার্টি স্পষ্ট ঘোষণা করে, আর্থিক ও সামাজিক সংস্কারের পথে হেঁটেই তারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে। এশিয়া ও ইউরোপের বাজার সোমবার খোলার পরই চিনের এই ঘোষণার প্রভাবে পড়তে থাকে। এই উত্থানে ইন্ধন জোগায় আমেরিকার ত্রাণ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি।
মন্দা ঘোচাতে নগদের জোগান বাড়ানোর যে-কর্মসূচি আমেরিকা নিয়েছে, সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে ৮৫ হাজার কোটি ডলারের বন্ড তারা বাজার থেকে কিনছে। আশঙ্কা ছিল, ওই কর্মসূচি তারা বন্ধ করতে পারে। অন্তত বন্ড কেনার পরিমাণ কমানো হবে বলে জোর গুজব ছিল। কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ-এর ভবিষ্যৎ কর্ণধার জ্যানেট ইয়েলেন আগেই জানিয়েছেন, বন্ড কেনা যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাজার অন্তত আগামী মাস ছয়েক নিশ্চিন্তে থাকবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের অনেকের। পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অক্ষয় গুপ্ত বলেন, “আমেরিকা ঘোষণা করেছে, ২০১৪-র প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যন্ত বাজার থেকে বন্ড কেনার কর্মসূচিতে কোনও পরিবর্তন হবে না। এটাই লগ্নিকারীদের স্বস্তি দিয়েছে।”
এতে বিশেষ করে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। আমেরিকা ওই কর্মসূচির পরিবর্তন করলে বিদেশিরা ভারত থেকে লগ্নি তুলে নিয়ে তা স্বদেশে ঢালতে পারে, এমন সম্ভাবনা ছিল। কারণ, বাজারে ডলারের জোগান কমলে বাড়ত তার চাহিদা। সে ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে তা দিয়ে ডলার কিনে আমেরিকায় লগ্নি করত। তাতে এক দিকে ভারতের বাজারে লগ্নি কমত। অন্য দিকে ডলারের চাহিদা বেড়ে গিয়ে পড়ত টাকার দাম। কিন্তু আমেরিকা সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখায় সে সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই ধারণা তাঁদের। ফলে প্রধানত যাদের লগ্নির জেরে ভারতের বাজারে রমরমা, সেই সব বিদেশি সংস্থা তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে আপাতত বাজারকে চাঙ্গা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এখানে ওই সব সংস্থা ৯৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি লগ্নি করেছে বলে বাজার সূত্রের খবর। |