নিজের হাতে চালানো বন্দুক থেকে গুলি লেগে মারা গিয়েছেন তাঁরই ছাত্রী। সে কথা মেনে নিতে না পেরে বিবেক যন্ত্রণা থেকেই শনিবার রাতে রঘুনাথগঞ্জ থানায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন তাজেল শেখ। তাঞ্জেলা খাতুন নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তাজেলই প্রধান অভিযুক্ত। শুক্রবার বিকেলে দুই ভায়ের মধ্যে বিরোধে বচসার সময় উত্তেজিত হয়ে নিজের বন্দুক থেকে তাজেল গুলি চালান বলে অভিযোগ। পুলিশের অনুমান, সেই গুলি গিয়ে লাগে প্রতিবেশী কিশোরী তাঞ্জেলার কপালে। জঙ্গিপুর হাসপাতালে ঘন্টা দুই পরে মারা যায় ওই কিশোরী। ওই কিশোরীর মৃতদেহের ময়না তদন্ত করেছেন চিকিৎসক সত্যরঞ্জন হাজরা। তিনি বলেন, “গুলিটা মাথার খুলিতে ধাক্কা খেয়ে কিছুটা বেঁকে যায়। বাঁকা গুলিটি বের করে দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।”
ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে যান তাজেল। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। রবিবার অভিযুক্ত শিক্ষককে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাকে ৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চরকা গ্রামে এই ঘটনার পর থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার ৩ দিন পরেও নিরীহ ছাত্রীর এই ভাবে মৃত্যুতে স্তম্ভিত ও শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। ঘটনায় তাজেল ও তাঁর পরিবারের ১২ জনের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত কিশোরীর মা রাবিয়া বিবি। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে খুন সহ ৮টি ধারায় মামলা রুজু করেছে। তাজেলের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে ১২ বোরের একটি দু’নলা বন্দুক ও ১৩ রাউন্ড গুলি। আদালতে তাজেল বলেন, ‘‘সকালে জমির মাপজোক করে এক আমিন। তার পয়সা মেটানো নিয়ে খুড়তুতো ভাই-এর সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। তার মধ্যেই ইট পাটকেল পড়তে শুরু করে আমার বাড়ির উপরে। তখনই আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। ঘরে ঢুকে হাতে বন্দুকটা নিয়ে সোজা ছাদে উঠে যাই। সেখান থেকেই শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালাই স্রেফ ভায়েদের ভয় দেখাতে। যেভাবে শূন্যে গুলি চালিয়েছি, তাতে কারও গায়ে লাগার কথা নয়। কিন্তু তা কী ভাবে প্রতিবেশী কিশোরীর কপালে লাগল তা ভেবেই পাচ্ছি না।” শিক্ষক তাজেল বলেন, “যে কিশোরী মারা গিয়েছে, তার পরিবার আমার খুবই কাছের। নিরীহ গরিব পরিবার। কখনও কারও ঝুট ঝামেলায় তারা থাকে না। ওই ছাত্রীকে আমি নিজে চার বছর পড়িয়েছি গ্রামের স্কুলে। তাই এ ভাবে তার মৃত্যু আমার কাছেও অত্যন্ত দুঃখের। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনার ভয়ে পালিয়ে গেলেও পরে নিজের বিবেকের কাছে উত্তর দিতে পারেনি। তাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিই।’’ |