শনিবারের বারবেলায় নিজেদের ঘরেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটাররা নন, যেন টুঁটি টিপে ধরেছিল চম্বলের ডাকাতরা। সেই অবস্থা থেকে শেষ দিনের পিচে বাংলার ব্যাটসম্যানরা যে লড়াই দিয়ে রঞ্জির গ্রুপ লিগে অপূরণীয় ক্ষতি বাঁচালেন, তাতেই কি অদ্ভুত রকমের স্বস্তি ইডেনের সেই ড্রেসিংরুমে! যে ড্রেসিংরুমে দিন কয়েক আগেই কাটিয়ে গিয়েছেন ভারতরত্ন সচিন তেন্ডুলকর।
লড়াইয়ের মন্ত্র প্রায় ভুলতে বসা লক্ষ্মীরতন শুক্লর বাংলা দল রবিবার লড়াই করে ড্র রাখা ম্যাচ থেকেই আগামী যুদ্ধের রসদ পেতে চাইছে। ম্যাচটা ইনিংসে হারলে (তৃতীয় দিনের শেষের যার সম্ভাবনা ছিল) মধ্যপ্রদেশ সাত পয়েন্ট লুটে নিয়ে চলে যেত বাংলার ঘর থেকে। তার বদলে দেবেন্দ্র বুন্দেলার দল তিন পয়েন্ট নিয়ে যেতে পারল, তাঁদের জন্য ছেড়ে গেল এক পয়েন্ট, এতেই বাংলার কোচ-ক্যাপ্টেন খুশি। লক্ষ্মীরতন শুক্ল যে ভাবে উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বললেন, “গতকাল পর্যন্ত হতাশ ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আজ আমাদের ব্যাটিং দেখে ফের মনটা ভাল হয়ে গেল”, ঠিক সে ভাবেই অশোক মলহোত্রও বললেন, “দারুণ লড়েছে ছেলেরা।” |
সারা দিন ব্যাট করার পণ নিয়ে ব্যাট করতে নামা বাংলার প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান রোহন, অরিন্দম, অনুষ্টুপ, ঋদ্ধিমান আর শুভময়ের রান যথাক্রমে ৪৩, ৩৯, ৩৮, ৬৯ ও ৫৯। বাংলার পাঁচ নম্বর উইকেট যখন পড়ল, তখন স্কোরবোর্ডে ২৭৮ রান। বিপদসীমা থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছেন লক্ষ্মীরা। চা-বিরতির ছেচল্লিশ মিনিট পর যখন দুই অধিনায়কের সম্মতিতে ম্যাচ শেষ হল, বাংলা ৩০৮-৫। এই ব্যাটিংটা যদি ফলো-অন খাওয়ার পরে না হয়ে, আগে হত, তা হলে ম্যাচ থেকে প্রাপ্তির ছবি উল্টে যেত। এক দিন আগে ওয়াংখেড়েতে সচিনের বিদায়ী বক্তৃতার সময় ইডেনে নামা বাংলার প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ধস-ই যে কারণ, তা স্বীকার করে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যেয় ইডেন থেকে বাড়ি ফেরার পরেও বাংলা কোচ বললেন, “ওই সেশনের ধসটাই সব গুবলেট করে দিল। তবে এটার থেকেই আমাদের ছেলেদের শিক্ষা নিতে হবে যে, এক মুহূর্তও ঢিলেমি দিলে চলবে না।”
শনিবার একটা সময় মাত্র ৩৪ রানে ছ’উইকেট খোয়ানোর অদ্ভুত আত্মসমর্পণের পর রবিবার সারা দিন উইকেটে পড়ে থেকে মধ্যপ্রদেশ বোলারদের রীতিমতো শাসন করার যে প্রবণতা দেখা গেল বাংলার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে, এটাই তাঁদের শিবিরে পরবর্তী লড়াইয়ের রসদ জোগাচ্ছে দাবি করছেন লক্ষ্মী। “আমরা যে ভাল ব্যাট করতে পারি, লড়তে পারি, এই উপলব্ধিটা আজকের লড়াইয়ের পর ছেলেদের মধ্যে চলে এসেছে বলেই মনে হল। পরের ম্যাচগুলোতেও আমরা ভাল ব্যাট করব।”
চেতেশ্বর পূজারার সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইডেনেই পরের ম্যাচ বাংলার। “ওই ম্যাচে পূজারা বিশাল রান করলেও তার জবাব দেওয়ার বারুদ আমাদের ছেলেদের মধ্যেও রয়েছে”, বললেন অশোক-ও। রবিবারই পরের ম্যাচের দল গড়তে বসেও গড়তে পারলেন না নির্বাচকরা। কারণ, ভালসাদে খেলা অনূর্ধ্ব-২৫ দল থেকে পেসার বীরপ্রতাপ সিংহকে নিয়ে আসতে চান অশোক। আগের দিন জুনিয়র নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু রবিবার সুদূর গুজরাতে বীরপ্রতাপের হ্যামস্ট্রিং চোট হয়েছে শুনে থমকে যান দীপ দাশগুপ্তের সিনিয়র নির্বাচক কমিটি। তার উপর সকালে প্র্যাকটিসে গোড়ালি মচকে বসেছেন রঞ্জির ১৫ জনে থাকা শ্রীবৎস গোস্বামী-ও। এই দু’জনের চূড়ান্ত ফিটনেস রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত দল গড়া যাচ্ছে না। সিএবি যুগ্মসচিব সুজন মুখোপাধ্যায়ের আশা দু’জনের রিপোর্ট পেয়ে সোমবারই দল গড়ে ফেলা যাবে। বীরপ্রতাপকে না পাওয়া গেলে অবশ্য পেস বিভাগে পরিবর্তনে রাজি নন বাংলা কোচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: মধ্যপ্রদেশ ৪৩১। বাংলা ২৬৩ ও ৩০৮-৫ (ঋদ্ধিমান ৬৯, শুভময় ৫৯ ন.আ., জলজ ৪-১১৭)
|