ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার জন্য সোনা আনল শ্রেয়া
সাড়ে তিন বছর বয়সে শরীরের বাঁ দিকে সাড় হারানোর পরে সাঁতার কাটতে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা। ছোটবেলায় নানা প্রতিযোগিতায় মেয়ের সঙ্গেও যেতেন। এখন আর পারেন না। দূরারোগ্য ব্যাধি তাঁকে আটকে ফেলেছে বিছানায়। তাতে দমে যাওয়া তো দূর, জেদ যেন আরও বেড়ে গিয়েছে বছর চোদ্দর শ্রেয়া ভট্টাচার্যের। জাতীয় প্যারা-অলিম্পিক সাঁতারে তিন-তিনটি সোনা জিতে বাবাকে দেওয়া কথা রাখল কালনার এই কিশোরী।
১১ ও ১২ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে গিয়েছিল ধাত্রীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শেণির ছাত্রী শ্রেয়া। রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে বর্ধমান থেকে একমাত্র শ্রেয়াই সেখানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিল সে নিজেই। শ্রেয়া জানায়, বাড়িতে ক্যানসার আক্রান্ত বাবার শুশ্রূষায় মাকে সাহায্য করতে হত। নিয়মিত অনুশীলনের সুযোগ মেলেনি। বাড়িতে ছিল না অনুশীলনের কোনও আধুনিক সরঞ্জাম। জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ যখন প্রায় নষ্ট হতে বসেছে, তখন তার বাবা অতনু ভট্টাচার্যই জেদ ধরেন, মেয়েকে বেঙ্গালুরু পাঠাবেন। মেয়েকে বলেন, “বাংলার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ সবাই পায় না।” ঠিক হয়, শ্রেয়ার মা বাঁশরী ভট্টাচার্য যাবেন সঙ্গে। অসুস্থ বাবা ও ঠাকুমা দীপালি ভট্টাচার্য থাকবেন হুগলির শেওড়াফুলিতে শ্রেয়ার পিসি চিত্রা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ৮ নভেম্বর রওনা হয় মা-মেয়ে। মেয়েকে অতনুবাবু বলেছিলেন, “সোনা জিতে ফিরিস।’’
শ্রেয়া ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।
কথা রেখেছে শ্রেয়া। একটা নয়, তিন-তিনটে সোনা জিতে ফিরেছে সে। বাঁশরীদেবী জানান, ১১ নভেম্বর ১০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে সোনা পায় শ্রেয়া। পর দিন, ১২ নভেম্বর সোনা পায় ব্যাক স্ট্রোক ও ব্রেস্ট স্ট্রোক বিভাগে। সোনা জেতার পরে দু’দিনই তাঁর প্রথম ফোনটি এসেছিল বাবার কাছে। ফেরার সময়ে মা-মেয়ে প্রথমে যান শেওড়াফুলিতে। সেখান থেকে বাবা ও ঠাকুমাকে নিয়ে শনিবার রাতে ধাত্রীগ্রামে বাড়ি ফিরেছে এই খুদে সাঁতারু।
শ্রেয়া বলে, “এর আগে সাব-জুনিয়র বিভাগে জাতীয় প্রতিযোগিতায় চার বার যোগ দিয়ে রুপো পেয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলি ছিল ৫০ মিটার ট্র্যাক। এ বার ছিল জুনিয়র বিভাগ। ট্র্যাক বেড়ে হয় ১০০ মিটার। প্রথম দিন কিছুটা সাঁতার কাটার পরেই বুঝতে পারি, অন্যদের পিছনে ফেলে দিয়েছি।” তাঁর সংযোজন, “বাবাকে কথা দিয়েছিলাম, সোনা আনব। কথা রাখতে পেরে আমি খুশি। এ বার আমি বাবাকে বলব, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে তোমায় জিততে হবে।”
বাংলার অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তা সুখেন মণ্ডল বলেন, “শ্রেয়া যে কোনও ধরনের ক্রীড়াবিদের কাছে উদাহরণ। তাকে দেখে সবাই উৎসাহিত হবে। অ্যাথলেটিক্স সংস্থা থেকে তার জন্য কিছু সাহায্য করা যায় কি না, সে চেষ্টা করব।” শ্রেয়ার সাফল্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইংলিশ চ্যানেল জয়ী সাঁতারু মাসুদুর রহমান বলেন, “সাঁতার বরাবরই অবহেলিত খেলা। এখানে ভাল ফল করলেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। কী পেলাম না ভেবেই আমাদের পরিশ্রম করতে হবে।” কালনা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, আট বছর বয়স থেকে শ্রেয়া সাঁতারে সফল হচ্ছে। তার লড়াই জেলার ক্রীড়াবিদদের কাছে দৃষ্টান্ত।
মেয়ের সাফল্য খুশি অতনুবাবু বলেন, “একের পর এক বাধা টপকে ও সোনা জিতেছে। ওর লড়াই আমার চোয়াল শক্ত করে দিয়েছে। একরত্তি মেয়ে যদি জিততে পারে তাহলে আমিও পারব।” শ্রেয়ার ঠাকুমা দীপালিদেবীর আশা, নাতনিকে নিয়ে ফের সুইমিং পুলে যাবেন তাঁর ছেলে। মেয়ের মতো জিতবে বাবাও, আশায় বুক বাঁধছে পরিবার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.