কেবল টিভি দেখার জন্য সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করেছে এক নিয়ম। অভিযোগ, সেই নিয়মের ফাঁক বার করে অন্যায় ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে। স্বভাবতই সাধারণ দর্শকেরা বেসামাল। কার কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাবেন, জানেন না। নতুন এই হেনস্থার নাম ‘প্যাকেজ’। পাড়ায় পাড়ায় এর ধাক্কায় কার্যত মাথায় উঠেছে টিভি দেখা।
প্রশ্ন উঠছে, টিভি দেখতে কেন দর্শকদের ‘প্যাকেজ’ নিতে হবে? আগে বলা হয়েছিল, দর্শকেরা পছন্দ মতো চ্যানেল বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। অপারেটররা তাঁদের উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে পারবেন না। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ, তা হচ্ছে না। যেমন, ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলগুলির সঙ্গে পে চ্যানেল হিসেবে বাংলা সিরিয়ালের দু’টি, অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটের একটি এবং খেলার দু’টি চ্যানেল যদি কেউ দেখতে চান, তিনি তা দেখতে পাবেন না। কারণ, এমএসও সংস্থাগুলির হিসেবে সেটি ‘প্যাকেজ’-এর মধ্যে পড়ে না। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কেন এক জন বাংলাভাষী দর্শককে তামিলনাড়ুর জয়া টিভির খবর দেখতে হবে। এমএসও সংস্থাদের দাবি, ওটাই ‘প্যাকেজ’।
এপ্রিলের ১১ তারিখ প্রকাশিত টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই)-এর নির্দেশ অনুযায়ী এ শহরের প্রত্যেক টিভিতে সেট-টপ বক্স লাগানো বাধ্যতামূলক হয়েছে। চেতলার বাসিন্দা সাহানা ভট্টাচার্য বলেন, “প্যাকেজ-শনির আবির্ভাব আমাদের জ্বালিয়ে মারছে।” একই অভিজ্ঞতা নাগেরবাজারের সমর চৌধুরীর। তাঁর কথায়, “শুনেছিলাম আমরা পছন্দ মতো চ্যানেল দেখার জন্য পয়সা দেব। কিন্তু কেব্ল অপারেটর প্রথমে ফর্মই দিচ্ছিলেন না। চাপে পড়ে যখন দিলেন, তার সঙ্গে বিষফেঁড়ার মতো প্যাকেজের কথা জানিয়ে গেলেন।”
কী সেই প্যাকেজ? সিটি কেব্লের রয়েছে জনতা (১০০ টাকা), পপুলার (১৮০ টাকা), গ্র্যান্ড (২৩০ টাকা) এবং প্রিমিয়াম (২৮০ টাকা)। কলকাতায় নতুন এমএসও হ্যাথওয়ে কেবল-এর চার রকমের প্যাকেজ বেসিক (১০০ টাকা), স্টার্টার (১৮০ টাকা), পপুলার (২৩০ টাকা) এবং প্রিমিয়াম (২৮০ টাকা)। এ ছাড়া রয়েছে মন্থন, ডিজি, কেসিবিপি ইত্যাদি সংস্থা।
শহরে সোনি, জি, স্টারের মতো একাধিক টিভি সম্প্রচার (ব্রডকাস্টার) সংস্থার বেশ কয়েকটি চ্যানেল চলে। প্রথমে সাধারণ গ্রাহকেরা ভেবেছিলেন, তাঁরা আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী পছন্দ মতো চ্যানেল বেছে নিতে পারবেন। কিন্তু সম্প্রচার সংস্থাগুলি এমএসও-দের উপরে অলিখিত শর্ত চাপিয়ে নিয়েছে, গ্রাহককে নির্দিষ্ট সংখ্যার চ্যানেল নিতেই হবে। এমএসও-রা সেই মতো কেবল অপারেটরদের উপরে চাপ দিচ্ছেন। শেষমেশ, সেই চাপ পড়ছে সাধারণ দর্শকদের উপরে।
তবে সম্প্রচার সংস্থার চাপের কথা অস্বীকার করেছেন জি বাংলার এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় কুট্টি। তাঁর বক্তব্য, “আমরা কারওর উপরে চাপ দিই না। বিক্রির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা তো বেশি চ্যানেল বিক্রি করতে চাইবই। এতে অন্যায় কোথায়?” সিটি কেবলের কর্তা সুরেশ শেঠিয়ার বক্তব্য, “প্যাকেজের অর্থ পাইকারি দরে জিনিস কেনার সময়ে দামে কিছুটা সাশ্রয় হওয়ার মতো। কোনও জিনিস খুচরো কিনলে তার দাম বেশি পড়ে, করও বেশি পড়ে। সে জন্যই বিভিন্ন দামের প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে।” মন্থন কেব্ল-এর প্রধান সুদীপ ঘোষের যুক্তি, “ওষুধ খাওয়ার যেমন একটা কোর্স আছে, টিভির প্যাকেজও অনেকটা সেই রকম।”
ট্রাই এ বিষয়ে নিরুত্তর। তবে, ট্রাইয়ের নির্দেশে এমএসও সংস্থাগুলিকে ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু কোনও দর্শকের কোনও বিশেষ এমএসও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তিনি কোথায় জানাবেন? বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ট্রাইয়ের নির্দেশ মতো মহাকরণে তথ্য-সংস্কৃতি দফতরে এক জন নোডাল অফিসার থাকার কথা। আপাতত সেই চেয়ারটি ফাঁকা। |