শহর এক মানবিক মুখের পরিচয় পেল! পাশাপাশি, অমানবিকতাও দেখলেন এক অন্ধ তরুণী।
একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিতে মেচেদায় গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার সময়ে হাওড়া স্টেশনের ১১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে হাঁটতে গিয়ে লোকজনের ঠেলাঠেলিতে রেল লাইনে পড়ে যান শ্যামলী পাত্র নামে ওই তরুণী। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণায় চিৎকার করে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। কিছুক্ষণ পরে দাশনগরের বাসিন্দা হেমলানকুমার রাণা ‘হেল্প হেল্প’ আর্ত চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, এক তরুণী লাইনের পাশে পড়ে আছেন। আর যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
হেমলানবাবু কালবিলম্ব না করে লাইনে নেমে কাঁধে করে তুলে আনেন তরুণীকে। প্ল্যাটফর্মে তাঁকে শুইয়ে জিআরপি, আরপিএফ এবং যাত্রীদের অনেককেই এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেননি। হেমলানবাবু জানান, তিনিই ওই তরুণীকে কোনওরকমে ধরে ট্রেনে চাপিয়ে তাঁর বাড়ি লিলুয়ায় নিয়ে আসেন। স্টেশনে নেমে রিকশায় চাপিয়ে যখন তাঁকে বাড়ির পথে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন এলাকার কিছু বাসিন্দা তরুণীকে রিকশায় ওই ভাবে কাতরাতে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
তার পরে তরুণীর বক্তব্য শুনে তাঁরাই তাঁকে নিয়ে যান লিলুয়া রেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ছিলেন ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা রিকশায় তরুণীকে ওই ভাবে চিৎকার করতে দেখে পথ আটকাই। তখন দু’জনই একই কথা বললে আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” পরে তাঁরাও হেমলানবাবুকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তবে, প্ল্যাটফর্মে জিআরপিকে বলা সত্ত্বেও রেল পুলিশ কেন ওই তরুণীর সাহায্যে এগিয়ে এল না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস। তিনি বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।” অন্য দিকে আরপিএফের এক অফিসার বলেন, “আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
শ্যামলীদেবী লিলুয়ারই একটি হোমের সঙ্গে যুক্ত। বাড়ি লিলুয়ার জেনিস রোডে। ওই হোমের হয়েই তিনি এ দিন মেচেদায় আলোচনাচক্রে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি অন্ধ হলেও একলাই চলাফেরা করতে অভ্যস্ত। মেচেদা থেকে ট্রেনে হাওড়া এসে তিনি লিলুয়ায় ফিরছিলেন। সে সময়ে প্ল্যাটফর্মেই এই ঘটনা ঘটে। |