ল্যাজে পা
বুকের পাটায় হাত রেখে বলুন তো, ইংরেজি ভাষা-সাহিত্য পড়তে গেছিলেন কী জন্যে! কাজের মাসি-রিস্কাওলা-বাস কন্ডাক্টর-বারের ওয়েটার’কে ধমাধম কড়কাবার জন্য? এই বিশ্বকে ওজস্বী খিস্তি ফোয়ারায় সিক্ত করিবার তরে? একদম নয়, তাই না? ছি, তাই কক্ষনও হয় নাকি! এটা ছ’মাসের গর্ভস্থ শিশু বা মৎস্যমন্ত্রী, কে না জানে! হ্যাঁ, বলতে পারেন ওগুলো সাইড এফেক্ট, বাইপ্রোডাক্ট।
এইচ এস-এ সায়েন্স-কমার্সে সুবিধে না হওয়ায় বা এমনি এমনিই ডিরেক্ট ইং (হন্স্.), তার পর এম এ ডিরেক্ট বা ইনডিরেক্ট (মানে দূরশিক্ষা)! তাপ্পর সন্মানের সহিত, সম-মানের সঙ্গে পেশা-প্রবেশ শিক্ষকতা-অধ্যাপনা-করণিক বা মিসেলেনিয়াস! ধুর ধুর। এটা জীবন! এই করতে জন্মেছিলাম! জনম্ হাম্ বৃথা মাম্ বাথরুমে ঢুকে কান্না পায়? হিসি পায় না? আচ্ছা বেশ, এ বার বুক আর পেটের জয়েন্টে, যেখানে পেপটিক আলসার হয়, ওখানে হাত রেখে বলুন তো, আপনি আসলে লেখক হতে চেয়েছিলেন কি না? অ্যাঁ? ঠিক তো? তিন বছর আট মাস কঠোর শ্রমে দারিদ্রলাঞ্ছিত জীবন নিয়ে যে গল্পটা রচনা করেছিলেন, সেই যেটা পড়তে গিয়ে আপনি নিজেই চোখের জল ধরে রাখতে পারতেন না, গল্পটা আপনার প্রিয় ‘আমার তোমার পাপ’ ম্যাগে না দিয়ে মাঘ মাসের বারো তারিখ জমা দিয়েছিলেন এক নং কাগজটায় তার তো কেটে গেল তিন বছর। শালারা পড়ে নাকি? লবি, লবি। কাগজটার স্ট্যান্ডার্ড শেষ। সুগার তিনশো কুড়ি!
ব্যস ব্যস। ব্যাড প্যাচ ওভার। হোমিয়োপ্যাথি ও আমার ওপর যদি বিশ্বাস রাখতে পারেন, কথা দিচ্ছি, বছর খানেকের মধ্যে আপনাকে লেখক বানিয়েই ছাড়ব! আসলে সবার দ্বারা হয় না, হতে গেলে যে যে কোয়ালিটি নেসেসারি আপনার সব আছে। আপনি পারবেন স্যর। এ বার আমার সূত্রগুলো মন দিয়ে শুনতে শুনতে লিখতে থাকুন; দেখবেন, কেল্লা ফতেপুর সিক্রি! কিন্তু সিক্রেট।
অ্যাকচুয়ালি, আপনাকে এক জন সরেস কপিয়াল হতে হবে। বোঝা গেল না! আরে না না, এর সঙ্গে কপিকুলের কোনও সম্পক্ক নেই। জাস্ট কপি করতে হবে, বস। অ্যাঁ? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, যাকে বলে কপিবুক রাইটিং। যা আপনি পরীক্ষার হল-এ বিলক্ষণ করেছেন এবং বারংবার পাশনম্বর তুলে ইল্লি চিল্লেছেন। সেই ক্যালিবারটাই লাগিয়ে দিন এখানেও। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এইটাই সবচেয়ে ভাল শিখেছেন তো আপনি, এই টোকাটুকির জগতে টুকি দেওয়া। শুধু কবিযশোপ্রার্থনায় সেটাকে সেট করতে ভুলে গেছেন, এই যা। আরে বাবা, গোটা জীবনটাই তো একটা এক্সএক্সএল সাইজের পরীক্ষা বই কিছুই নয়। চোখ বুজে আপনার বিদ্যেটি সাহিত্য-মোডে অ্যাপ্লাই করুন। মনে রাখুন, এখন মোটামুটি তিন ধরনের কপি লোকে খুব খাচ্ছে ফুল কপি, বাঁধা(ধরা)কপি আর ওল্ড কপি।
প্রথমে আসি ফুল কপির কথায়। এ বার দেখুন ইংরেজি পড়ার গুণ বা সুখ। গুগুল সার্চ করেগা রে ভাই, জাস্ট গুগুল সার্চ! হ্যাঁ, কবিতা দিয়েই শুরু করুন। প্রথমে কবিতায় হাত পাকান, পরে গল্প-নভেলে যাবেন। আশির দশকের পোল্যান্ডের বা নব্বুইয়ের হাঙ্গেরির কবিদের সার্চ দিন। যাঁদের লেখাপত্তর কোনও বাঙালি কস্মিন কালে পড়েনি।
অবশ্য বাঙালি কেন বলছি, হয়তো তাঁদের দেশেও আর কেউ পড়ে না। এসে গেছে? এ বার একটাকে পাকড়ে তাঁদের কবিতায় চলুন। ও সরি, গুগুল- ভাইকে বলে দিন, ব্যাপারটা ইংরেজি অনুবাদে দিতে। ব্যস, এ বার খুব মনোযোগ দিয়ে বঙ্গানুবাদ করুন। দেখেছেন, জিনিসটা স্রেফ চুরি নয় কিন্তু, শৈল্পিক খাটনি আছে। লাইন বাই লাইন নামিয়ে দিন টোটাল, শুধু ওই মদের জায়গায় চা, রুটির জায়গায় ভাত, সুপের জায়গায় ফ্যান, লালচুলো রক্ষিতার জায়গায় খোঁপাবাঁধা বউ এটুকু চেঞ্জ তো অংক পরীক্ষাতেও করতেন, ত্রিভুজ কখগ-র বদলে চছজ! এই ভাবে বছরে মিনিমাম ছ’শোটা মাল নামান আপনি এখন এক জন তরুণ তুর্কি (সাহিত্যে পঞ্চান্ন পর্যন্ত তরুণ) কবি, ফুল কবি!
কী? বেশ কুল ফিল করছেন না! তবে একটা ‘কন্ডিশন অ্যাপ্লাই’ আছে। রাতে মালটা ভাল করে ঘষেমেজে ভোরের ট্রেনেই গিয়ে রিসেপশনে ‘আমি আগে এয়েচি’ স্টাইলে নামিয়ে দিন, নইলে অন্য কপিয়ালরাও তো আছে, নাকি! যারটা আগে, সে মৌলিক ‘রেস সাঁসোঁ কি’! এই রে, হেনকালে বঙ্কু ঠাকুরের কথা মনে এল। উনার নিদেন ছিল, লিখে বেশ কিছু দিন ফেলে রাখুন, পুরসভার রাস্তায় যে ভাবে দিনের পর দিন লোকের বালি-পাথর পড়ে থাকে, তবে লেখা পাকবে। শেষমেশ ভুরভুর করে তা থেকে সার্থকতার ঘ্রাণ ছড়াবে। তবে এই গলাকাটা কম্পিটিশনের বাজারে এই ভিড়-ভরপুর লাইনে ওই সব বকওয়াস স্ট্রেট ভুলে যান আরে ভাই, আগে শুয়ে নিন তো, পরে প্রেম হবে!
এতেই পুলকে পাগলপারা? ন্যাক্স্ট বাঁধাধরা কপি। এটা একটু ক্রিটিকাল। তবে হাত পাকান, ইজি হয়ে যাবে। প্র্যাকটিস মেক্স আ ম্যান রাইটার। এই কপি-স্ট্র্যাটেজিতে কিন্তু ইং-বাং-সং তফাত নেই। স্কট-ডিকেন্স-টলস্টয়-গোর্কি আর আপনার জন্মসূত্রে পাওয়া বঙ্কিম-শরৎ-রবিবাবু-মানিক পুরনো আলমারির সঙ্গে লেপটে থাকা মালগুলোকে নামান, কাজের মাসিকে দিয়ে। আপনি ভুলেও হাত দিতে যাবেন না, তিন টন ধুলোয় অ্যালার্জি মাস্ট। এক হপ্তা হাঁচলে সাহিত্যিক হবেন কবে? বইগুলোকে দু’দিন বারান্দায় কড়া রোদ খাওয়ান। এ বার একেবারে সহজিয়া বাঁধা কপি। এঁর চুয়াত্তর থেকে ছিয়াত্তর একটা ঘরের বর্ণনা, ওঁর বত্রিশ-তেত্রিশ প্রকৃতিপ্রেম, তাঁর একশো একুশ মানসিক টানাপড়েন এই ভাবে কোলাজ-লীলায় বছরে একান্নটি গল্প আর আট-দশটা নভেল, ছোঃ! এত দিন কুতায় ছিলেন, জিনিয়াস!
ওল্ড কপির কথা ভুলে গেলেন না কি? আরে, এই কপিতেই আপনার অরিজিনাল লেখক সত্তা একেবারে ল্যাল্ল্যাল করে খ্যালখ্যালাবে গুরু। ভেরি সিম্পিল। এখানে আপনাকে বাঁচাবে অন্লি শেক্ষপির আর পুরনো ‘দেশ’ পত্রিকা। ‘আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম’কে পূর্ব মেদিনীপুরের পটভূমিতে এনে ফেলুন, ম্যাকবেথকে খন্যানের রাজবাড়িতে এনে পেটান দেখি। জাস্ট ফেটে যাবে। এ ছাড়া হাসপাতালের গল্প, পুরুলিয়ার পটভূমির উপন্যাস, মাস্টারের জীবনযন্ত্রণা বা এক লেটো শিল্পীর পাশবিক প্রেমকাহিনি পুরনো ‘দেশ’ থেকে নামধাম পালটে ঝেঁপে দিন। তবে গুরু মনে রাখবেন, কাফ্কা-ন্যুট হামসুন-সার্ত্র-কমল মজুমদার বা জগদীশ গুপ্ত থেকে কপি করতে গেলে আপনার কেরিয়ার লাটে। এই সময় ওগুলার খুব চর্চা হচ্ছে। সাবধান! গুরুর পেনটা মনে হচ্ছে লকলক করছে! আরে ধুর, জানতাম ওই কমন কোশ্চেনটাই করবেন। রামায়ণ-মহাভারতের কথা কইলাম না কেন? খবরদার, ওতে কালো হাত দিবেন না। ও আপনার কম্ম না। আপনি তরুণ লেখক, কচির মতো থাকুন। নিন, কলম তুলে নিন। ওটা আপনার হাতি আর সাথী। এই দেখুন, আমার সম্পাদক আমায় ধমকে গেলেন আপনার কপিটা যেন দুপুর দুটোর মধ্যে পাই। না কাকু, এ বার যাই। আর এট্টুও টাইম নেই, ব্রুটাস! ছিঃ, অমন করতে নেই, বাই। লাস্টে এ বার আপনার নাইকুন্ডুলে হাত রাখুন তো, যেখানে বিকেলের দিকে কুনকুন করে। হ্যাঁ, এ বার বলুন তো। কপি আলবিদা না কহে না...!!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.