যেটা আমরা সবাই জানতাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় দিন পুরোটা টানতে পারবে না।
যেটা আমরা কেউ ভাবিনি প্রত্যেক দর্শক, প্রত্যেক অনুরাগীকে এ ভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করে সচিন তেন্ডুলকর ওর হৃদয়ের দরজাটা হাট করে খুলে দেবে!
পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে সচিন যখন আন্তরিক আবেগে নিজের ক্রিকেট জীবনকে শুরু থেকে আবার ফিরে দেখছে, অনেককেই লক্ষ করলাম চোখের জল মুছছেন।
থেমে থেমে, আস্তে আস্তে কথা বলছিল সচিন। নিজের প্রতিটা শব্দ বেছে নিচ্ছিল যত্নের সঙ্গে। ক্রিকেটের হাত ধরে ওর এত দিনের পথ চলায় যাঁরা পাশে থেকেছেন, এ দিন বিদায়-ভাষণে সম্ভবত প্রত্যেককে উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানাল সচিন। তবে শেষ ধন্যবাদটা তোলা ছিল সেই জায়গাটার জন্য, যা এত দিন ছিল সচিনের আসল ঠিকানা, ওর কর্মভূমি, উপাসনাস্থল, আশ্রয়, অভয়কানন ওর মন্দির। চব্বিশ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দানবীয়, দুর্বোধ্য আর বিশ্বাসঘাতক পিচও সচিনের আধিপত্যের কাছে নতি স্বীকার করেছে। ক্রিকেটের সেই বাইশ গজকে ছুঁয়ে কুর্নিশ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে গেল ও।
সচিন নিজের জন্য দক্ষতা, ধৈর্য, সাহস আর ধারাবাহিকতার সর্বোচ্চ যোগ্যতামানটা একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। সেই একই যোগ্যতামান ও বরাদ্দ রেখেছিল বিনয়, প্রশান্তি, ভদ্রতা, মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করা এবং খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার মতো মূল্যবোধের জন্য। আমি কখনও সচিনকে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে শুনিনি। কখনও মেজাজ হারাতে দেখিনি। ক্রিকেট মাঠে কখনও দেখিনি সচিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছে বা স্লেজিংয়ে উত্তেজিত হয়ে পাল্টা দিচ্ছে। বড়দের সম্মান দিতে ওর কখনও ভুল হয় না। ঠিক যেমন ছোটদের জন্য সব সময় ওর কাছে সময় থাকে।
আসলে সচিনের আত্মা এতটাই খাঁটি যে, বরাবর সব বিতর্ক বা কেলেঙ্কারির ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে। ওর মধ্যে যেন এক ঋষি আর দুর্নিবার যোদ্ধার আদর্শ সহাবস্থান! সচিনের মতো কাউকে আমরা আর কখনও কোনও দিন দেখব না। ক্রিকেটার হিসাবেও না। মানুষ হিসাবেও না। দুর্বল, ভঙ্গুর মানুষদের মাঝে সচিন সত্যিই ঈশ্বরের মতো!
আবেগের এই সিরিজে ক্রিকেটের দিকে তাকালে অবশ্য দু’টো টেস্ট মিলিয়ে পুরো ছ’দিনের খেলাও পাওয়া যাচ্ছে না। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা কোনও রকম উপস্থিতিই টের পাওয়াতে পারল না। সবচেয়ে অবাক হয়েছি ওয়াংখেড়ে টেস্ট ইডেনের থেকেও কম সময়ে শেষ হয়ে গেল দেখে! ডারেন স্যামি বাহিনীর কলকাতার থেকেও বেশি দুর্দশা হল মুম্বইয়ে। অথচ ইডেনের তুলনায় ওয়াংখেড়ের পিচ অনেক ভাল ছিল। ওদের গোটা দলে একমাত্র ব্যতিক্রম বলতে শেন শিলিংফোর্ড। বলতে বাধ্য হচ্ছি, ক্রিস গেল বা শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের মতো ক্রিকেটার আছে যে দলে, তাদের কাছে আমার অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। অন্য দিকে ধোনির ভারত নিজেদের পারফরম্যান্সের খাতা নিয়ে বসে সব ক’টা বাক্সেই টিক মারতে পারবে। নতুন বলে আক্রমণ শানানোর জন্য খুব কার্যকর একটা নতুন জুটি পাওয়া গিয়েছে। এর পাশে অশ্বিন-ওঝার স্পিন জুটি তো আছেই। এবং দু’জনেই দুরন্ত ফর্মে। বিশেষ করে ওঝাকে মুম্বইয়ে অপ্রতিরোধ্য দেখিয়েছে। সে সব কথা থাক। আসুন, আজ এই মুহূর্তটায় আমরা শুধুই সচিন তেন্ডুলকরের অস্তরাগের শেষ আলোটুকু উপভোগ করি।
|
সচিন রমেশ তেন্ডুলকর |
প্রবেশ ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯
প্রস্থান ১৬ নভেম্বর, ২০১৩ |
টেস্ট ২০০
রান ১৫৯২১
সর্বোচ্চ ২৪৮ ন.আ.
সেঞ্চুরি ৫১
হাফসেঞ্চুরি ৬৮
গড় ৫৩.৭৮
উইকেট ৪৬
সেরা বোলিং ৩-১৪ |
ওয়ান ডে ৪৬৩
রান ১৮,৪২৬
সর্বোচ্চ ২০০ ন.আ.
সেঞ্চুরি ৪৯
হাফসেঞ্চুরি ৯৬
গড় ৪৪.৮৩
উইকেট ১৫৪
সেরা বোলিং ৫-৩২ |
টি-টোয়েন্টি ১
রান ১০, উইকেট ১ |
|