|
|
|
|
দলের কাউকে অসন্তুষ্ট করার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না নীতীশ |
স্বপন সরকার • পটনা |
লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে জোটবদ্ধ রাখতে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চান না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এবং সেই কারণেই মন্ত্রিসভায় ন’টি খালি পদ কিংবা বিধান পরিষদে ১২টি শূন্য পদ পূরণ ক্রমশই পিছিয়ে দিচ্ছেন নীতীশ। এই নিয়ে দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এরই পাশাপাশি, চলতি সপ্তাহে বিধান পরিষদের শূন্য পদগুলি পূরণের দাবি নিয়ে পটনা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলাও দায়ের হয়েছে। রাজনীতির কুশীলবদের বক্তব্য, এই মামলার পিছনে নীতীশের দল, জেডিইউয়েরই কিছু নেতার প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কথা বলতে রাজি নন দলের কোনও নেতাই। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারির বক্তব্য, “এই নিয়ে আমি এখনই কোনও মন্তব্য করব না।” অন্য দিকে, দলের মুখপাত্র কে সি ত্যাগীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করে দল এবং সরকার চালান। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই তিনি নেবেন।” আর দলের মুখপাত্রের দাবি, “এই নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ নেই।” মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের প্রশ্নে নীতীশও বিরক্ত। সম্প্রতি তাঁকে এই নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেই তাঁর বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে, “এতে সরকারের তো কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। আমি তো ন’টি দফতর দিব্যি চালাচ্ছি। আপনারা বা বিজেপি এই নিয়ে এত চিন্তিত কেন?”
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে নরেন্দ্র মোদী-প্রশ্নে এনডিএ-র সঙ্গে তাঁর ১৭ বছরের গাঁটছড়া ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। বিজেপি-র নয় মন্ত্রীকে সরাসরি ছাঁটাই করেন তিনি। তারপর থেকেই ওই ন’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। দলের এক সূত্রের বক্তব্য, কোন ‘নয়’ বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসবেন নীতীশ, কাকে সন্তুষ্ট করবেন, কাকে অসন্তুষ্ট—এই দোলাচলেই বিষয়টিকে ক্রমশ তিনি পিছিয়েছেন।
বছর দেড়েক আগে বিধান পরিষদের ১২ মনোনীত সদস্যের পদ খালি হয়। এই ১২টি পদে ১২ জনকে মনোনীত করবেন রাজ্যপাল। অবশ্যই রাজ্য মন্ত্রিসভার সুপারিশ মেনে। দলের এক নেতার কথায়, তখন থেকেই নীতীশের সঙ্গে বিজেপি-র একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। মোদী প্রশ্নে এনডিএ যে তাঁকে ছাড়তে হবে, তা সম্যক বুঝেছিলেন নীতীশ। এই পরিস্থিতিতে যদি ১২ জনকে মনোনয়ন করতে হত তবে বিজেপি-কেও কয়েকটি আসন ছাড়তে হত। সেই কারণেই বিষয়টি ক্রমশ পিছিয়ে দিয়েছেন নীতীশ। আর এখন সেই সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট করার প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়ার পর দলের বেশ কয়েকজন নেতা-সাংসদ বিজেপি-র দিকে ভিড়ে গিয়েছেন। তাঁদের ধারণা, বেশ কিছু নেতা-বিধায়ক-সাংসদ বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়েই রয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে-পরে রাজনীতির এই কারবারিরা জল মাপছেন। যে মুহূর্তে তাঁরা দেখবেন মোদী তথা বিজেপি-র সঙ্গে লড়াইয়ে নীতীশ পিছিয়ে পড়ছেন, তখনই বিজেপি-র দিকে ঝুঁকবেন।
জল মাপছেন নীতীশও। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ বা দেড় বছর ধরে খালি পড়ে থাকা বিধান পরিষদের ১২টি আসন নিয়ে নীতীশ দলের সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। সুতরাং কাউকে অসন্তুষ্ট করার ঝুঁকি নীতীশ লোকসভা ভোটের আগে কেন নেবেন?প্রশ্ন তুলেছেন দলেরই এক প্রবীণ নেতা। কী বলছেন দলের মুখপাত্র কে সি ত্যাগী? তাঁর কথায়, “বিজেপি যতদিন ছিল ততদিন তো এই প্রশ্ন আসেনি। বিজেপি সঙ্গে থাকাকালীনই বিধানপরিষদের পদগুলি শূন্য হয়েছে। তখন তো এই সব প্রশ্ন ওঠেনি। আর জনস্বার্থের যে মামলা হয়েছে তার পিছনে রাজনীতি আছে।” |
|
|
|
|
|